রবীন্দ্রসংগীতে ফিউশন: প্রয়োজন না ফ্যাশন?
নির্ঝর চৌধুরী। কন্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক।
বার্তা২৪-এর সঙ্গে সান্ধ্য আড্ডায় ছিলেন দীর্ঘক্ষণ। কথা বলেছেন ব্যক্তিজীবন, সংগীতজীবন, ধারক ব্যান্ড ও রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক বিভিন্ন প্রসঙ্গে। সেই আড্ডার দ্বিতীয় পর্ব আজ।
রবীন্দ্রনাথের গান নতুনভাবে সংগীতায়োজন করে গাওয়াটা শুরু হয়েছে বেশ কয়েকবছর আগে।
এ নিয়ে বির্তকও আছে।
একটা শ্রেণী বলছেন এটা হওয়া উচিৎ নয়।
কিন্তু নির্ঝর চৌধুরী এই ফিউশনের পক্ষে।
বলছেন-
যখন প্রথম সাহানা বাজপেয়ীর অ্যলবামটা (নতুন করে পাবো বলে, ২০০৭) আসলো, অর্ণবদা’র মিউজিকে, তখন একদম ইয়াং জেনারেশন পাগল হয়ে গেলো। এবং এমন প্রচুর ছেলেমেয়ে ছিলো, যারা আসলে রবীন্দ্রসংগীত বলতে সাহানার এই দশটা গানই জানে, আর কোনো গান কোনোদিন শোনেনি। কারণটা হচ্ছে প্রেজেন্টেশন। এমন না যে সাহানা বাজপেয়ী খুবেই অসাধারণ গান করেন, উনি অবশ্যই ভালো গান করেন, কিন্তু ওরকম জনপ্রিয়তার কারণ ছিলো সময়োপযোগী প্রেজেন্টেশন।
গিটারিস্ট অভিজিৎ চক্রবর্তী জিতুর পরিকল্পনায় নির্ঝর চৌধুরী সহ ব্যান্ড ধারকের জন্ম হয় সেই ২০১৩ সালে।
নির্ঝর চৌধুরী বলছেন-
ধারকের প্রধান উদ্দেশ্যও সেটা ছিলো যে, আমাদের শিকড়ের যেই অসাধারণ গানগুলো আছে, সেগুলো এই প্রজন্ম যেন শোনে; তাদের মতো করে প্রেজেন্ট করা। আমি যদি জোর করে বলি যে তোমাকে সেই মান্ধাতার আমলের হারমোনিয়াম-তবলা দিয়ে বসে গান শুনতে হবে; কারো এতো দায় পড়েনি যে তারা ওই গানগুলো শুনবে।
যারা প্রথাগতভাবে রবীন্দ্রনাথের গান করেন, তাদের সবাইকে আমরা দেখেছি হারমোনিয়াম এবং তবলা দিয়ে গান করতে। তো, আমাদের হয়তো ধারণা হতে পারে রবীন্দ্রনাথ এরকমভাবেই গান করতেন বা পছন্দ করতেন।
এই বিষয়টাকে স্পষ্ট করলেন নির্ঝর চৌধুরী।
বললেন-
রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে অপছন্দের যন্ত্র ছিলো হারমোনিয়াম এবং তবলা। উনি এটা একদমই সহ্য করতেননা। উনি পছন্দ করতেন তানপুরা, পিয়ানো এবং এশরাজ।
রবীন্দ্রনাথ সংস্কার ভাঙতেন, নতুন নতুন কাজ করতেন।
নিয়ম ভেঙে নতুন কিছু করার যে ব্রত, এটা নিয়ে ওনার একটা নাটকও আছে- ‘তাসের দেশ’।
এটি ঢাকায় মঞ্চস্থ হয়েছিলো।
প্রসঙ্গটা মনে করলেন নির্ঝর চৌধুরী।
বললেন-
এটা যখন এখানে মঞ্চস্থ হলো, যারা প্রথাগত রবীন্দ্রনাথের গানের ধারক ও বাহক, তারা একদম ছিঃ ছিঃ করা শুরু করলো; এসব কী হচ্ছে! এরকম মুখোশ পড়ে লাফালাফি! কী মিউজিক! কী নাচ! কী ড্রেস! কিন্তু সাধারণ দর্শক যারা বা রবীন্দ্রপ্রেমী, তারা ভয়ংকরভাবে পছন্দ করলো। অনেকগুলো শো হলো এটার।
একজন শিল্পীর স্বাধীনতা থাকা উচিৎ তার সৃষ্টিকর্মের ব্যাপারে।
এমনটাই মনে করছেন নির্ঝর চৌধুরী।
বলছেন-
কোনটা করা যাবে, কোনটা করা যাবে না; এটার দায়িত্ব তো কোনো সংগীতশিল্পীকে কেউ দেয়নি! এটার দায়িত্ব পুরোটাই দর্শকশ্রেণীর উপরে। তারা বিচার করবে কোনটা ভাল লাগছে, কোনটা ভাল লাগছে না।
প্রথম পর্ব এখানেঃ