কেন খাবেন কাঠবাদাম?
পুষ্টি ও উপকারী ফ্যাটে ভরপুর প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান হলো বাদাম।
বিভিন্ন ধরণের বাদামের ভেতর সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় হলো কাঠবাদাম। বিকালের নাস্তায় কিংবা হুটহাট দেখা দেওয়া ক্ষুধাভাবকে তাড়াতে ৫-৭ টি কাঠবাদামই যথেষ্ট।
এমনকি ডাক্তাররাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন নিয়মিত কয়েকটি করে কাঠবাদাম খাওয়ার জন্য। কেন কাঠবাদাম, অন্য কোন বাদাম নয়? স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রশ্ন মনে উঁকি দিবে। প্রশ্নটির উত্তরে জেনে নিন কাঠবাদামের চমৎকার সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা। অন্যান্য সকল বাদামের ভিড়ে যা এই বাদামকে করে তুলেছে অতুলনীয়।
ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
বাড়ন্ত শিশুদের বুদ্ধির বিকাশের জন্য কাঠবাদাম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। এই বাদামে থাকে মগজের জন্য প্রয়োজনীয় দুইটি পুষ্টিগুণ- রিবোফ্লাভিন ও এল-ক্যারনিটিন। এই উপাদান দুইটি মগজের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া বৃদ্ধদের আলঝেইমার হবার সম্ভবনাও কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে কাঠবাদাম অথবা আমন্ড অয়েল রাখার ফলে স্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি নার্ভাস সিস্টেমের উপরেও ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা কমে যায় ও ভালো কোলেস্টেরল (HDH) এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরে স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় থাকে ও উচ্চ কোলেস্টেরলজনিত সমস্যা দূর হয়।
হাড় ও দাঁত ভালো রাখে
কাঠবাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণ স্বাস্থ্যকর ভিটামিন সমূহ, মিনারেল সমূহ ও ফসফরাস। হাড় ও দাঁতের সুসাস্থ্য ও স্থায়িত্বের ওপর ফসফরাসের প্রভাব রয়েছে অনেকখানি। বয়সজনিত হাড় ও দাঁতের সমস্যা তৈরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতেও ফসফরাস কার্যকরি।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
কাঠবাদাম ও মিষ্টিবিহীন আমন্ড মিল্ক ওজন কমানোর পদক্ষেপে সাহায্য করে। এই বাদামে থাকা মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ক্ষুধাভাব কমিয়ে আনে। ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এছাড়া কাঠবাদামের আঁশ পেট ভরা ভাব তৈরি করে। গবেষণা থেকে দেখা গেছে যাদের ওজন বাড়া-কমার সমস্যা থাকে, নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
হৃদরোগের হার কমায়
কাঠবাদামকে কার্যত হৃদপিন্ডের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে ধরা হয়। এই বাদামে থাকা মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন ও পটাসিয়াম হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখতে কাজ করে। এতে থাকা ভিটামিন-ই ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ দেখা দেওয়ার সম্ভবনা কমিয়ে আনে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পূর্বের পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে কাঠবাদাম থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কাঠবাদাম সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে শরীরের অ্যালকালাইনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে। যার উপরে নির্ভর করে শরীরে অসুখ হওয়ার সম্ভবনা।
ত্বকের জন্য উপকারী
চর্ম বিশেষজ্ঞরা ত্বকের যত্নে আমন্ড অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সাধারণ হিসেব অনুযায়ী কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে ত্বকের উপকার হয় একদম ভেতর থেকেই। ফলে অল্প বয়সে বলীরেখা দেখা দেয় না এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় প্রাকৃতিকভাবে।
প্রদাহ কমায়
কিছু বিশেষ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য খুবই উপকারী ও প্রয়োজনীয়। যেহেতু শরীর ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না, বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান থেকেই তাকে ফ্যাটি অ্যাসিড সংগ্রহ করতে হয়। কাঠবাদামে থাকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড- লিনোলিয়েক (Linoleic) ও লিনোলিয়েক অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ শরীরের প্রদাব কমাতে কাজ করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
কাঠবাদামে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, সোডিয়ামের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপের ওঠানামাকে স্বাভাবিক রাখে।
এনার্জি বৃদ্ধি করে
পুষ্টিকর এই বাদামে রয়েছে ম্যানগানিজ, কপার ও রিবোফ্লাভিন। যা মেটাবলিজমের হার বাড়ায় এবং এনার্জি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কাজের ব্যস্ততায় যদি ক্লান্তিভাব কাজ করে তবে এক মুঠো (৫-৬টি) কাঠবাদাম খেয়ে নিতে হবে।
ডায়বেটিস প্রতিরোধ করে
প্রতিবার খাবার খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে কাঠবাদাম। যার ফলে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত কোন খাবার খাওয়ার পর কাঠবাদাম খেলে রক্তে চিনির প্রভাব দেখা দেয় না। কাঠবাদাম গ্লুকোজের প্রক্রিয়া ও শোষণকে নিয়ন্ত্রিত করে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে
কাঠবাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবারের মতো কাঠবাদামও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তবে কাঠবাদাম খাওয়ার সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। যেন বাদাম ভালোভাবে পরিপাক হতে পারে ও তার উপকারী প্রভাব বিস্তার করতে পারে। একবারে খুব বেশি কাঠবাদাম খাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন ৫-৬ টি কাঠবাদাম খাওয়াই যথেষ্ট।