কিডনি সুস্থ রাখবে ‘পাঁচ নিয়ম’
অহরহ স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হলেও কিডনির সমস্যাটি আড়ালেই রয়ে যায় বেশিরভাগ সময়।
অথচ শারীরিক সুস্থতা ও শরীরকে কার্যক্ষম রাখার পেছনে কিডনির অবদান অনস্বীকার্য।
আমাদের সম্পূর্ণ শরীরে পরিষ্কার রক্ত প্রবাহের পেছনে রয়েছে কিডনির কার্যকারিতা। এছাড়া রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয় কিডনি। ফলে কিডনির ইলেক্ট্রোলাইট ও ফ্লুইডের ভারসাম্য বজায় থাকে। কিডনি সুস্থ থাকলে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসও সুস্থ থাকে।
কিডনির বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মাঝে কিডনি স্টোন হলো অন্যতম প্রধান ও প্রচলিত একটি সমস্যা। এছাড়া কিডনির ইনফ্ল্যামেশন, রেনাল ফেইলুর, নেফরোটিক সিন্ড্রম ও সিস্টের সমস্যাও কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, কিডনিকে সুস্থ রাখা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। একেবারেই সহজ পাঁচ নিয়মে কিডনির সঙ্গে নিজেকেও সুস্থ রাখা সম্ভব হবে দারুণভাবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে
কিডনির সুস্থতার বিষয় আসলে স্বাভাবিকভাবেই পানি পানের বিষয়টি উঠে আসবে। পানি কিডনিকে সচল রাখতে ও কিডনির স্বাভাবিক কার্যকলাপে সাহায্য করে। একদম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা আবশ্যক।
পানি পানের উপর অ্যালডস্টেরন (Aldosterone) নামক হরমোনের উৎপাদন নির্ভর করে। এই হরমোনটি অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের সহায়তায় রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিডনিতে পানি ও সোডিয়ামের ব্যালেন্স রক্ষা করে। কিডনি যদি তার প্রয়োজনীয় পানি না পায়, তবে তা রক্তচাপের হার বৃদ্ধি করে, যা পক্ষান্তরে কিডনির উপরেই বাড়তি চাপ প্রয়োগ করে।
ক্যাফেইন গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন পানীয়ের সঙ্গে ক্যাফেইন গ্রহণ করছি। কোমল পানীয়, কফি, চা প্রভৃতি। ক্যাফেইন তাৎক্ষণিকভাবে ও সাময়িক সময়ের জন্য শরীরকে চাঙা বোধ করালেও, একটা নির্দিষ্ট সময় পর শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি করে। এই পানিস্বল্পতা ঘনঘন দেখা দেওয়া থেকেই কিডনি স্টোনের সমস্যা তৈরি হয়। যে কারণে প্রতিদিন ক্যাফেইন গ্রহণের মাত্রা একেবারেই নির্দিষ্ট করে ফেলতে হবে।
বাদ দিতে হবে ধূমপানের অভ্যাস
ভীষণ ক্ষতিকর এই বাজে অভ্যাসটি শুধু ফুসফুসের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে না, ব্লাড ভ্যাসেলকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ক্ষতিগ্রস্ত রক্ত কিডনিতে প্রভাহিত হবার সময় কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে দেয় এবং কিডনির কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে ধূমপান কমানোর কোন সুযোগ নেই। ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে দিতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
শরীরকে সুস্থ রাখার মতোই নিয়মিত ও পরিমিত শরীরচর্চা কিডনিকে সুস্থ রাখবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। যা কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়তে বাধাদান করে, ফলে কিডনির সমস্যা দেখা দেয় না। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা শরীরচর্চা করার পরামর্শ দিয়ে থাকে বিশেষজ্ঞরা।
প্রচুর পরিমাণে ফ্রেশ ফল ও সবজি খেতে হবে
ফলের মাঝে আঙ্গুর, আপেল ও সবজির মাঝে শাক, বিটরুট, আদা ও ক্যাপসিকাম কিডনির জন্য বিশেষভাবে উপকারিতা বহন করে। এছাড়া নারীদের জন্য অস্ট্রোজেন (Ostrogen) সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ছোলা, টমেটো, চেরি ও গাজর রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে।
পাশাপাশি চেষ্টা করতে হবে গ্লুটেন ও চিনিবিহীন খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার। উভয় উপাদান কিডনিতে প্রদাহ তৈরি করে।
আরও পড়ুন: পরিচিত উপাদানেই নিয়ন্ত্রণ করুন ডায়বেটিস
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কের সুস্থতায় প্রয়োজন ভিটামিন-বি