প্রতিরোধ করুন চুলের আগা ফেটে যাওয়া
চুলের আগা ফেটে যাওয়ার সমস্যাটি বেশ বিরক্তিকর এক উপদ্রব। এই সমস্যার ফলে খুব অল্প সময়েই চুল শুস্ক ও রুক্ষ হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আগা ফাটার কারণে চুলের বৃদ্ধি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই ভেবে থাকেন, চুলের আগা ফাটা রোধে ট্রিম করাই যথেষ্ট। যা একেবারেই ভুল ধারণা।
চুলের আগা কেন ফাটে?
চুলের আগা ফাটার প্রধান কারণ হলো অযত্ন। সঠিক যত্নের অভাবে চুল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চুলের বিভিন্ন অংশ ও আগার অংশ ফেটে যাওয়া শুরু হয়। এছাড়াও চুলে অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ (রিবন্ডিং, কার্লিং), কেমিক্যাল ব্যবহার (রঙ করা) ও শারীরিক অপুষ্টিজনিত কারনেও চুলের আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়।
কীভাবে আগা ফাটা বন্ধ করা যাবে?
একমাত্র চুলের সঠিক পরিচর্যা ও যত্নের মাধ্যমে চুলের আগা ফেটে যাওয়ার সমস্যা প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা সম্ভব। প্রাত্যহিক চুলের পরিচর্যার পাশাপাশি কিছু বিশেষ উপকরণ ব্যবহারে পুরোপুরিভাবে বিরক্তিকর এই সমস্যাকে বিদায় জানানো সম্ভব।
চলুন জেনে নেওয়া যাক চুলের আগা ফাটা রোধে তিনটি দারুন উপকারি ও হাতের নাগালে পাওয়া যাবে এমন জিনিসের নাম।
ক্যাস্টর অয়েল
ভারি ঘরানার এই তেল চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি জোগায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। একইসাথে মাথার ত্বকের চুলকানি, চুলের শুস্কভাব ও চুলের আগা ফাটা রোধ করে থাকে।
ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের জন্য ২ চা চামচ নারিকেল তেলের সাথে ২-৩ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ম্যাসাজ করে তেল লাগিয়ে নিয়ে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে রাখতে হবে। ১-২ ঘন্টা এভাবে রেখে দেওয়ার পর হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই-তিনবার ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
হানি হেয়ার মাস্ক
প্রাকৃতিক উপাদান মধু চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে ও ধরে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে এই হানি হেয়ার মাস্ক চুলে আর্দ্রতা ও পুষ্টি ফিরিয়ে এনে, চুলের আগা ফাটা বন্ধ করে।
এই হেয়ার মাস্কটি তৈরির জন্য ২-৩ চা চামচ মধু, এক চা চামচ নারিকেল তেল ও ৩ চা চামচ দুধ প্রয়োজন। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে চুলের আগায় ভালোভাবে মাখাতে হবে। প্রয়োজনে চুলের গোড়াতেও এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাথার ত্বক যেন তৈলাক্ত না থাকে। এই মিশ্রণ চুলে ব্যবহারের ১-২ ঘন্টা পর ভালো মানের কোন হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ২ বার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
মেয়োনেজ হেয়ার মাস্ক
মেয়োনেজের নাম শুনে খুব অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়! তবে জেনে রাখুন চুলের যত্নে মেয়োনেজ অতুলনীয়। কারণ মেয়োনেজ তৈরিতে একইসাথে ডিম ও তেল ব্যবহৃত হয়। যা চুলকে নমনীয় করতে, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, চুলের শুষ্কভাব দূর করতে ও চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
মেয়োনেজ হেয়ার মাস্ক তৈরিতে প্রয়োজন হবে ২-৩ চা চামচ মেয়োনেজ ও ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল। দুইটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মাখিয়ে নিতে হবে। এরপর শাওয়ার ক্যাপের সাহায্যে চুল ঢেকে দুই ঘন্টা রেখে দিতে হবে। দুই ঘন্টা পর ভালো মানের কোন শ্যাম্প্যুর সাহায্যে চুল ধুয়ে নিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ১-২ বার এই হেয়ার প্যাকটি ব্যবহার করলে ইতিবাচক ফলাফল দেখা দিবে।
ছোটবড় যেকোন ধরণের চুলের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিকার ও প্রতিরোধ হলো, চুলের প্রতি যত্নশীল হওয়া। বাইরের ধুলাবালি ও আবহাওয়ার ঘনঘন পরিবর্তনে একমাত্র সঠিক যত্নই চুলকে সুরক্ষিত রাখবে। একইসাথে মনে রাখা জরুরি, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও সুস্থ চুলের জন্য অপরিহার্য। তাই নিজের প্রতি যত্নবান হলেই সুস্থ থাকবে চুল।