হতাশাকে বিদায় জানান সহজেই
জীবন থেকে আনন্দ, ভালো থাকা ও ইতিবাচক সবকিছুকে ক্রমেই গ্রাস করে নেওয়ার সংক্ষিপ্ত রূপকেই সম্ভবত হতাশা বলা হয়। ছোট একটা শব্দ, যার ভয়াবহতা অনেক বিশাল। হতাশা বা নৈরাশ্যবাদ এমন এক মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে ফেলে ক্রমশ। বন্ধ করে দেয় ভবিষ্যৎ ও ভালো কোন কিছু চিন্তা করার শক্তি। হতাশার ফলে আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয় সবচেয়ে বেশি। অকারণ রাগ-ক্ষোভ, বিরক্তিভাব, অসন্তুষ্টি হলো প্রবল হতাশার প্রতিফলন।
একদম সহজ ভাষায় বললে- হতাশা হলো কালো মেঘ বা পর্দা। যা মনকে আচ্ছন্ন করে তোলে এবং বাধাগ্রস্থ করে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার শক্তিকে।
হতাশা কিন্তু একদিনেই দেখা দেয় না। মনের ভেতর খুব ধীরে ও সময় নিয়ে বাড়তে থাকে হতাশা। যা প্রকট আকার ধারণ করলেই স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সমস্যা দেখা দেয় প্রবলভাবে। তাই চেষ্টা করতে হবে, কোনভাবেই যেন মনের ভেতর হতাশার বীজ জন্মাতে না পারে।
তবে মনের ভেতর হতাশা জেঁকে বসলেও ভয়ের কিছু নেই। নিজের জীবন থেকে খুব সহজ কিছু উপায়ে কীভাবে হতাশার কালো মেঘকে দূর করা সম্ভব, সেটা জানিয়েছেন ভারতের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ গুরুপ্রসাদ শিভাকামাত।
বর্তমান সময়ের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে
হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তির মনে অহেতুক নানান বিষয় ঘোরাফেরা করে। যার ফলে সঠিকভাবে কোন একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করা সম্ভব হয় না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অতীতের ভুলগুলো মনে পড়ে, যা হতাশার মাত্রা আরো বাড়িয়ে তোলে। এক্ষেত্রে বর্তমান সময়কে নিয়ে ভাবার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি নিজের মগজ ও মনকে বর্তমান সময় ও বর্তমান পরিস্থিতিতে আবদ্ধ করতে হবে।
নিজের চারপাশের পরিবেশের প্রতি মনযোগী হতে হবে
এই চারপাশের পরিবেশ বলতে নিজের আশেপাশের সকল কিছুকে বোঝানো হচ্ছে। মনকে শান্ত ও হতাশাকে স্তিমিত করতে প্রথমে আরামদায়ক কোন স্থানে বসতে হবে। এরপর চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস গ্রহণ করে ধীরে প্রশ্বাস ত্যাগ করতে হবে। এইভাবে দুই মিনিট পার করার পর চোখ খুলে নিজের চারপাশে ভালোভাবে দেখতে হবে। নিজের অগোছালো বিছানা, ঘরের কার্নিশে ঝুলে থাকা এক ফালি রোদ, জানালার বাইরে আকাশ- সবকিছুকেই খুব সুন্দর মনে হবে তখন।
নিজের যা আছে তা নিয়েই খুশি হতে হবে
অতীতের ভুলগুলোই মূলত হতাশাকে বাড়িয়ে তোলে। যে কারণে পেছনের কোন কিছু নিয়ে একদম ভাবা যাবে না। নিজেকে শুধু বর্তমান সময়ে নয়, নিজের যা কিছু আছে তার মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। কারোর জীবনই পরিপূর্ণ নয়। তাইতো হতাশাকে বিদায় জানানোর মূলমন্ত্র হলো- নিজের যা আছে তা নিয়েই খুশি থাকা।
প্রিয় কাজটি করতে হবে এই মুহূর্তে
ঠিক এই মুহূর্তে কী করছেন আপনি? মন খারাপ করে বসে আছেন? তবে উঠে বসুন। মাথা থেকে নেতিবাচক সব চিন্তা-ভাবনা ঝেড়ে ফেলে পছন্দের কাজটি করার চেষ্টা করুন। ছবি আঁকতে ভালোবাসলে কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়ুন। সেই কাজটির উপরেই নিজের মনোযোগ নিহিত করুন। নিজেকে প্রিয় কাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে পারলে হতাশাভাব কেটে যায় খুব দ্রুত।
হতাশা যদি প্রকট আকার ধারণ করে তবে সবকিছু থেকে নিজেকে কিছুদিনের জন্য সরিয়ে নিতে হবে। একান্তে নিজের সাথে নিজের সময় কাটানোর ফলেও হতাশাভাব দূর হয় অনেকক্ষেত্রে।