শিশুর নিরাপত্তায় আপনি কতটা সতর্ক
ঢাকা: যেমনটি আমরা ভেবে থাকি, শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হচ্ছে ঘর বা পরিবার। বাড়িতে শিশু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেভাবেই থাকুক না কেনো এখানে সে পূর্ণ নিরাপদ।
আপাতদৃষ্টিতে আপনার মনে হতে পারে শিশুকে শতভাগ সুরক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য, আমাদের একটু অসতর্কতায় ঘরেই ঘটছে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা।
সহজ কিছু করণীয়
১. শিশুকে বাড়িতে একা রেখে যাবেন না
শিশুকে বাড়িতে একা রেখে বাইরে বের হবেন না। এমনকি পাশের বাড়িতেও না। কারণ, শিশুরা সবসময় কৌতুহলপ্রবণ হয়। আপনার অনুপস্থিতিতে সে ঘটাতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।
২. ক্লিনিং প্রোডাক্ট
সকল ক্লিনিং প্রোডাক্টকই বিষাক্ত কেমিকেল দিয়ে তৈরি। কাজেই ডিটারজেন্ট পাউডার, ডিস ওয়াসার, স্যাভলন, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি বাচ্চার নাগালের বাইরে রাখুন। এমনকি এগুলো রান্নাঘরের অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের পাশে রাখাও নিরাপদ নয়।
৩. বৈদ্যুতিক অনুষজ্ঞ
প্লাগ পয়েন্ট/সুইচ বোর্ডগুলো আড়াল করার চেষ্টা করুন। বাচ্চারা কৌতুহলবশত আঙুল বা মেটাল জাতীয় দ্রব্যের মধ্যে প্রবেশ করাতে পারে। যে কোনো ধরনের বহিরাগত বৈদ্যুতিক তার লিকপ্রুভ রয়েছে কিনা- নিশ্চিত করুন। বাচ্চাকে দিয়ে মোবাইল বা যে কোনো গেজেট চার্জে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
এছাড়া শিশু বয়স থেকে বৈদ্যুতিক শক এবং ভেজা হাতে ব্যবহার করার ঝুঁকি বিষয়ে শেখান।
৪. ছোট আইটেমের ঝুঁকি
বোতাম, কয়েন, কানের দুল, মার্বেল, বাদাম, মুড়ি ইত্যাদি শিশুর খেলার আইটেম থেকে দূরে রাখুন। বাচ্চাদের খুব সহজাত অভ্যাস হলো এগুলো নাক বা কানের মধ্যে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা।
৫. ধারালো ও দাহ্য পদার্থের ভয়াবহতা
দা-বটি, ছুরি-কাঁচি, ব্লেড, ম্যাচ, লাইটার, মশার স্প্রে এমনকি সুগন্ধিও শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করুন। কৌতুহলী শিশু এসব ব্যবহারে ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে পারে।
৬. ধুমপানকে না বলুন
শিশুর সামনে ধুমপান বর্জন করুন। সিগারেটের নিকোটিন কোমলমতি শিশুর শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৭. বাইরে খেলাধুলায় কিছু সতর্কতা
শিশুর বাড়ির বাইরে একা খেলতে যাওয়ায় সতর্ক হোন এবং সঙ্গী নির্বাচনে সহযোগিতা করুন। তবে অতটা নজরদারির মধ্যেও রাখা যাবে না, যা শিশুর মানসিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।
৮. দুপুরের বিশ্রাম
দুপুরে খাবারের পর মায়েরা যখন ঘুমিয়ে পড়েন ওই সময়টা সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ। মনে রাখবেন, আপনার অজান্তে শিশুটি ঘটাতে পারে ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড। কাজেই অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে অধিক সর্তক হতে হবে। বিশেষ করে রাস্তা বা পুকুরের কাছে বাড়ি যাদের। এছাড়া টয়লেটে পানি ভর্তি বালতি রাখবেন না। বাড়ির মূল দরজা যাতে শিশু খুলতে না পারে তা নিশ্চিত করুন।
৯. সিঁড়ি বা লিফট বিষয়ে সতর্কতা
সিঁড়ি বা লিফট আছে এমন বাড়িতে শিশুদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ সতর্কতা। কারণ আপনার অগোচরে শিশু একা সিঁড়ি বা লিফট দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
১০. পোষ্য বিষয়ে নিরাপদ থাকা
গৃহপালিত পশুরা সাধারণত আনুগত এবং নমনীয় হয়। এসব পোষ্যদের লেজ, কান বা লোম ধরে টানলে এরা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। পশুদের প্রতি কোমল হতে শেখান।
১১. ওষুধ সতর্কতা
যে কোনো ধরনের ওষুধ শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন। শিশু যখন বুঝতে শিখবে তখন থেকেই তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে ধারণা দিন।
১২. অন্যের কাছে শিশুকে নয়
গৃহপরিচারিকা, ড্রাইভার, দারোয়ান, গৃহশিক্ষক বা কোনো আত্মীয় আপনার শিশুর বিষয়ে কি অধিক উৎসাহি? তবে এখনই বিষয়টি নিয়ে ভাবুন তাদের কাছে শিশু কতটা নিরাপদ। আপনার সামান্য অবহেলায় যেন শিশুকে কোনো বিপদজনক অভিজ্ঞতার শিকার হতে না হয়।
১৩. শুদ্ধ করুন নিজেকে
পরিবারের কোনো সদস্যর আচরণের ভয়াবহতা যেন শিশুকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক হন।
শিশুর সামনে পারিবারিক বিবাদ একেবারেই না। বিশেষ করে বাবা-মায়ের বিবাদ শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কোনো অশ্লীল শব্দও উচ্চারণ করা যাবে না শিশুর সামনে।
১৪. জরুরি নাম্বার
শিশুকে জরুরি কিছু মোবাইল বা টেলিফোন নাম্বার মুখস্থ করান। বাবা-মা বা নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী ছাড়াও হাসপাতাল, থানা এবং ফায়ার বিগ্রেডের নাম্বারও শেখান।
১৫. মতামতের গুরুত্ব
শিশুকে সময় দিন। পরিবারের যে কোনো বিষয়ে তাদের মতামত এবং কৌতুহলকে সমান গুরুত্ব দিন। তাতে তাদের মতামত প্রকাশের অভ্যাস তৈরি হবে।
কেবল একটু সতর্কতাই পারে অনাহূত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে। জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকাটা অপরিহার্য।