পুতিন বিরোধিতার পরিণতি মৃত্যু না হয় নির্বাসন

, আন্তর্জাতিক

আসমা ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2024-02-18 15:43:27

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উত্থান পরবর্তী সময়ে শীতল কলহের রাজনীতির যেন আবার আভাস পাওয়া শুরু হলো। রাশিয়ায় তখন এমন একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠলো যেখানে পুতিন বিরোধী মন্তব্য, পুতিনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বা তার অবমাননা হয় এমন বক্তব্য একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য। কখনও সাংবাদিক আন্না পলিটকভস্কায়া, কখনও বিশ্বস্ত বন্ধু ও সমর সহকারী ভাগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন, কখনও প্রধান বিরোধী দলনেতা অ্যালেক্সি নাভালনি সাক্ষী হয়েছেন নেতার রোষানলের। এসব মৃত্যু খুব সহিংসভাবে ঘটানো হয়েছে তা নয়। খুব কৌশলেই পুতিনের রাজনৈতিক পথচলার বহু কাঁটা সরে গিয়েছে দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যুর ছলে। যারাই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন তারাই এমন রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মারা গেছেন, না হয় হয়েছেন নির্বাসন।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যে ব্যক্তিদের রুশ নেতার জন্য হুমকি বলে মনে করা হয়েছে, দ্রুত তাদের প্রভাব খর্ব করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কেউ কেউ রাশিয়া থেকে নির্বাসিত হয়েছেন, কেউ হয়েছেন কারাবন্দি। বেশিরভাগ সময়েই পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। তেমনি কিছু সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা উল্লিখিত হলো:

সাংবাদিক আন্না পলিটকভস্কায়ার মৃত্যু; হয়নি সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার

পুতিনের অধীনে রাশিয়ায় পুলিশি রাষ্ট্র সম্পর্কে একটি বই লিখেছিলেন সাংবাদিক আন্না পলিটকভস্কায়া। এর পরপরই ২০০৬ সালে মৃত্যুদণ্ডের ধাঁচে কন্ট্রাক্ট কিলারদের হাতে খুন হয়েছিলেন তিনি। মস্কোতে তার ফ্ল্যাটের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল পলিটকভস্কায়াকে। ঘটনাটি পশ্চিমা বিশ্বে তখন একটি ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। পুতিন ধীরে ধীরে মিডিয়া হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিষয়টিকে একটা সমঝোতার পর্যায়েও নিয়ে আসে। রাশিয়ায় রিপোর্টিংয়ের উপর সরকারের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ একরকম গণতন্ত্রেরই যেন মুখ বন্ধ করে দেয় তখন।

পলিটকভস্কায়া বেশিরভাগ কাজ করেছেন রাশিয়ায় বর্তমানে নিষিদ্ধ স্বাধীন অনুসন্ধানী ম্যাগাজিন নোভায়া গাজেতার হয়ে। বারবার আটক হওয়া সত্ত্বেও চেচনিয়ায় রাশিয়ান ও মিত্র বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের দ্বারা সংঘটিত নির্যাতনের রিপোর্ট করার জন্য এক ডজনেরও বেশি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।

এরপর, ২০১৪ সালে পলিটকভস্কায়াকে হত্যার দায়ে সাবেক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা সের্গেই খাদজিকুরবানভকে আটক করা হয়। খাদঝিকুরবানভকে উত্তর ককেশাসের একটি মুসলিম প্রধান অঞ্চল চেচনিয়া থেকে আরও চারজন পুরুষসহ দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দেওয়া হয় ২০ বছরের কারাদণ্ড। তারপর তাকে ক্ষমাও করে দেওয়া হয়েছিল। 

২০১৮ সালে স্ট্রাসবার্গের ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত বলে, সরাসরি হত্যা চুক্তি চালিয়েছে এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য পর্যাপ্ত তদন্তমূলক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে একটি যৌথ বিবৃতিতে নোভায়া গাজেতা এবং পলিটকভস্কায়ার সন্তান ইলিয়া এবং ভেরা বলেছেন, ক্ষমা করে দেওয়া একটি ভয়ানক অবিচার এবং স্বেচ্ছাচারিতা ছিল। নিহত ব্যক্তির পেশাগত দায়িত্ব পালনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে এমনটি করা হয়েছে।

সাংবাদিক আন্না পলিটকভস্কায়া

 

রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় পুতিন সমালোচক আলেকজান্ডার লিটভিনেনকোর করুণ মৃত্যু

সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে পরিচিত কেজিবির সাবেক এজেন্ট ছিলেন আলেকজান্ডার লিটভিনেনকো। তার ভাগ্যেও ছিল একই রকম পরিণতি। তিনিও ছিলেন পুতিনের সমালোচক। ২০০৬ সালে লন্ডনে মারা যান তিনি। এক কাপ চা পান করার তিন সপ্তাহ পরও যাতে মারাত্মক তেজস্ক্রিয় উপাদান পোলোনিয়াম-২১০ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।

পক্ষ ত্যাগ করা এই রুশ গুপ্তচর আলেকজান্ডার লিটভিনেনকো প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন, একটি অপরাধ সিন্ডিকেটের মতো করে রাশিয়াকে পরিচালনা করছেন পুতিন প্রশাসন। এর পরপরই বিরল তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ প্রয়োগ করা হয় তার শরীরে। ব্রিটিশ তদন্তেও দেখা গেছে, তিনি রাশিয়ান এজেন্টদের দ্বারা বিষ প্রয়োগের শিকার হয়েছিলেন তিনি। সম্ভবত পুতিনের আদেশেই তার শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল বলেও তদন্তে উল্লেখ করা হয়।

তবে সেদিনও চুপ ছিলেন কৌশলী পুতিন। এই মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়ার সরকার। বরং এতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে বারবার।

পুতিন সমালোচক আলেকজান্ডার লিটভিনেনকো

 

প্রভাবশালী বরিস বেরেজোভস্কির করুণ পরিণতি

শত্রু হিসেবে স্বীকৃত হলে বা শত্রুরূপের আভাস পেলেই এমন নীরবে মারা গেছেন আরও অনেকে। এ ধারার মূলত শুরু হয়েছিল রুশ নেতা পুতিনের ক্ষমতায় আসীন হওয়ার প্রথম দিকেই। তার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল প্রভাবশালী বরিস বেরেজোভস্কির। পুতিনকে অপমান করায় তাকেও পালাতে হয়েছিল রাশিয়া থেকে। কয়েক বছর ধরে তাকে গণশত্রু হিসেবেও দেখানো হয়েছে। পরে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যে তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়।

রাশিয়ার একসময়ের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত বেরেজোভস্কি একবার তেল গ্রুপ সিবনেফ্টের ন্যায্য মালিকানা নিয়ে আব্রামোভিচের সাথে লন্ডন হাইকোর্টের লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন। পরে তিনি প্রায় অর্থহীন ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ৬৭ বছর বয়সী বেরেজোভস্কি বেশ কয়েকটি গুরুতর আর্থিক বিপর্যয়ের পরে বিষণ্নতায় ডুবে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে তাই প্রচারণা হয় তখন। বেরেজোভস্কির মরদেহ উদ্ধারের সময় গলায় তার প্রিয় কালো কাশ্মীরি স্কার্ফটিও পাওয়া যায়। স্কার্ফের বাকি অংশ ঝরনা রেলের চারপাশে এমনভাবে বাঁধা ছিল যেন আত্মহত্যাই করেছেন বেরেজোভস্কি।

তবে তার মৃত্যুর পিছনে রাশিয়ান সরকার থাকতে পারে বলে দাবি ছিল বেরেজোভস্কির স্ত্রী ও সন্তানের। বেরেজোভস্কির ছেলে মন্তব্য করেন, ‘পুতিন পুরো বিশ্বের জন্য বিপদ এবং আপনারা এখন তা দেখতে পাচ্ছেন।’

২০০৬ সালের নভেম্বরে লন্ডনে বেরেজোভস্কির সহযোগী আলেকজান্ডার লিটভিনেনকোকে পোলোনিয়াম বিষক্রিয়ায় হত্যার কথা মাথায় রেখে সরকারি পারমাণবিক অস্ত্র বিজ্ঞানীদের দ্বারা এলাকাটির একটি পরীক্ষাও করা হয়েছিল। কিন্তু বিকিরণের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুলিশ পায়নি কোনো প্রমাণ।

তবে ময়না তদন্তেও প্রমাণ হয়নি এটা আত্মহত্যা ছিল। বেরেজোভস্কির ঘাড়ে বিদ্যমান চিহ্নসমূহ শ্বাসরোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না বলে মন্তব্য করেছিলেন ডাক্তার।  ডাক্তার জানান, শ্বাসরোধের চিহ্নটি ফাঁসিতে শ্বাসরোধের চিহ্নের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। তখন, বেরেজোভস্কিকে তার বেডরুমে একজন আততায়ীই শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা শুরু হয়।

বরিস বেরেজোভস্কি

 

পুতিনের আনুগত্য না করায় আরেক প্রভাবশালী মিখাইল খোদোরকোভস্কিকে এক দশকের বেশি সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে।

এক সময়ের রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপাল যুক্তরাজ্যের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন (ডাবল এজেন্ট)। ২০১৮ সালে নার্ভ এজেন্ট (বিষাক্ত গ্যাস) প্রয়োগ করে তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। পরে তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ও ‘ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেছিলেন পুতিন।

বরিস নেমতস্তভের পিঠে গুলি করা হয়েছিল চারটি! 

দেশটির সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতা বরিস নেমতস্তভের পিঠে চারটি গুলি করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রেমলিনের কাছে একটি সেতুর ওপর গাড়িতে থাকা একজন অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারী নেমতসভকে পেছন থেকে চারবার গুলি করে। 

ইউক্রেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে মস্কোতে একটি মিছিলে সমর্থনের আবেদন করার কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি মারা যান। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। তদন্তকারীরা বলেছেন যে হত্যাকাণ্ডটি দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি উসকানি হতে পারে। তদন্ত কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে যে হত্যাকাণ্ডের জন্য "ইসলামী চরমপন্থা" সহ বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য বিবেচনা করা হচ্ছে।

ক্যারিশম্যাটিক বিরোধী নেতা বরিস নেমতস্তভ

 

গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিক অ্যালেক্সি নাভালনি কারাগারেই ছিলেন। স্ক্রিপালকে যে নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছিল, ২০২০ সালে নাভালনিকেও একই ধরনের গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।

পুতিনের কট্টোর সমালোচক ও বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুতে রাশিয়া গণতন্ত্রের শেষ কণ্ঠও যেন উবে যায়

২০২০ সালের ২০ আগস্ট সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে মস্কো যাওয়ার পথে উড়োজাহাজে অসুস্থ হয়ে পড়েন অ্যালেক্সি নাভালনি। তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি সাইবেরিয়ার ওমস্কে জরুরি অবতরণ করে। সেখানকার একটি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য জার্মানির বার্লিনে নেয়া হয়। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন।

জার্মানির চিকিৎসকরা জানান, নাভালনিকে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছে বলে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ফ্রান্স ও সুইডেনের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেও নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের প্রমাণ মিলেছে।

ক্রেমলিনের হুমকি উপেক্ষা করে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন নাভালনি। এতে বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরের মাসেই অর্থ আত্মসাতের পুরোনো একটি মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সম্প্রতি রাশিয়ার এই বিরোধী দলের নেতা ও পুতিনের কট্টর সমলোচক অ্যালেক্সি নাভালনির কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয়। ২০২৪ এর ১৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইয়ামালো-নেনেটস জেলার কারাগারে বন্দি অবস্থায় অ্যালেক্সি নাভালনির (৪৭) আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। নাভালনি আর্কটিক সার্কেল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের একটি নির্জন কারাগারে ছিলেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার হাঁটার পরে হঠাৎ নাভালনি অসুস্থ বোধ করেন। অসুস্থ বোধ করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এমন অবস্থায় তাৎক্ষণিক জরুরি মেডিকেল টিমকে ডাকা হয়। তারা এসে চেষ্টা করলেও নাভালনিকে বাঁচাতে পারেননি।

তবে নাভালনির সমর্থকদের দাবি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা বন্ধ করতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাভালনিকে গ্রেফতার ও কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নাভালনির দলের অভিযোগ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে, বিষ প্রয়োগের এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন। একই সঙ্গে রাশিয়ার দাবি, তাদের চিকিৎসকরা বিষের উপস্থিতি পাননি। 

তার মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে

 

আইন প্রণেতা পাভেল অন্তভের পুতিন বৈরিতার পরিণতিও ছিল ভয়াবহ

রাশিয়ান সসেজ ম্যাগনেট এবং রাজনীতিবিদ দেশের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী আইন প্রণেতা পাভেল অন্তভ এর পরিণতিও ছিল ভয়াবহ। পাভেল অন্তভ ছিলেন পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির সদস্য। ২০২২ সালে ভারতের একটি হোটেলের জানালা থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনামূলক একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এমন দাবি অস্বীকার করার পরেও রেহাই পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপরই তার রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। একই সফরে থাকা আরেকজন ভ্লাদিমির বুদানভও তার হোটেলে মারা যান।

পাভেল আন্তভ ভ্লাদিমির পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির সদস্য এবং বহু-মিলিয়নিয়ার ছিলেন। তিনি রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম সসেজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি তার আসন্ন ৬৬ তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য একটি ভ্রমণে ছিলেন। ভারতের সেই বিলাসবহুল হোটেলের তৃতীয় তলার জানালা থেকে পড়েই রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা ভারতের এনডিটিভি নিউজকে বলেছেন, তারা সন্দেহ করেছে যে একই হোটেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া তার বন্ধুর মৃত্যুর বিষয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়েই তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। আন্তোভ রাশিয়ার ভ্লাদিমির অঞ্চলের আইনসভার কৃষি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং দেশের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী আইন প্রণেতা হিসেবেও স্থান পেয়েছিলেন।

আইন প্রণেতা পাভেল অন্তভ 

 

আত্মহত্যা সন্দেহে গোপন থেকে যায় রাভিল ম্যাগানভের মৃত্যুর কারণ

রাশিয়ার শীর্ষ তেল ব্যবসায়ীদের একজন ৬৭ বছর বয়সী রাভিল ম্যাগানভ। ইউক্রেনের যুদ্ধের সমালোচনা করার পর মস্কোর একটি হাসপাতালের জানালা থেকে পড়ে যান। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উত্পাদক লুকোইলের চেয়ারম্যান রাভিল ম্যাগানভ হাসপাতালের জানালা থেকে পড়েই মারা গিয়েছিলেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে জানিয়েছে। এটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে ম্যাগানভ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং তিনি অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টও গ্রহণ করেছেন। অবশ্য রয়টার্স সেসব তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। ম্যাগানভের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ পরিচিতির ভিত্তিতে তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে যে, তারা বিশ্বাস করেনা যে সে আত্মহত্যা করেছে। তাছাড়া সে আত্মহত্যা করেছে এমন কোনো প্রমাণ বা নথিও দেখানো হয়নি।

পুতিন এবং ম্যাগানভ মস্কোতে একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে

 

পরম বন্ধু; তারপর শত্রুতার সন্দেহ: পরিণতি প্রিগোশিনের মৃত্যু

ভাগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন এর পরিণতিও তার ব্যতিক্রম নয়। পরম বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে যাওয়া প্রিগোশিনের মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করেছেন পুতিন। শীতল মাথায় খেলেছেন রাজনৈতিক খেলা। সামরিকভাবে শক্তিশালী প্রিগোসিনের মৃত্যু হয় উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায়।

রাশিয়ায় ২০২৩ এর  জুনে অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেননি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তখন বিশ্বজুড়ে সমালোচকেরা বিষয়টিকে রুশ নেতার দৃশ্যত যুদ্ধকালীন দুর্বলতা হিসেবে দেখছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, সংক্ষিপ্ত এ অভ্যুত্থান পুতিন-পরবর্তী যুগের সূচনা করেছে। কিন্তু তার দুই মাস পরই নিজের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন প্রিগোশিন। ২৩ আগস্ট মস্কো থেকে নিজের এলাকা সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার পথে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে খোলা মাঠে আছড়ে পড়ে। জনসমক্ষে পুতিন বলেছেন, ‘জীবনে অনেক ভুল করেছেন প্রিগোশিন।’

পুতিনের দীর্ঘদিনের বন্ধু প্রিগোশিন

প্রিগোশিন বলেছিলেন, ভাগনার বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল মস্কোর সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাত, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নয়। এরপরও এ বিদ্রোহকে ২৩ বছরের শাসন আমলে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখেছিল পুতিন। পরিণতি প্রিগোশিনের এমন সন্দেহভাজন মৃত্যু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর