ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা, সন্দেহভাজন সম্পর্কে যা জানা গেল

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-09-17 03:02:52

চলতি বছরের জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে এক নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্পের ওপর হামলার দুই মাসের মধ্যে আবারও তার ওপর হামলা করা হয়েছে।

এবার তার ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট পাম বিচ এলাকায় অবস্থিত তার নিজ মালিকানাধীন গলফ মাঠে। তবে এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটে নি। এরপরই তাকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনার পরই রায়ান ওয়েসলি রাউথ (৫৮) নামে এক সন্দেহভাজন্কে আটক করেছে দেশটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ঘটনাস্থল থেকে থেকে ‘একে-৪৭’ সদৃশ একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

সন্দেহভাজন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানা না গেলেও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে তার বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেছে। বার্তা২৪.কমের পাঠকদের জন্য তা প্রকাশ করা হলো-

রায়ান ওয়েসলি রাউথ দেশটির উত্তর ক্যারোলিনা থেকে এসেছেন এবং সম্পত্তির রেকর্ড অনুসারে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি সেখানে কাটিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেছেন। তিনি ইউক্রেনের পক্ষে বিদেশি যোদ্ধা সংগ্রহের কাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। তার বেশ কিছু আইনি সমস্যাও ছিল।

গণমাধ্যমটি রাউথের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একটি প্রোফাইল খুঁজে পেয়েছে। সেখানে করা এক পোস্টে তিনি বিদেশী সৈনিকদের রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পোস্টে তিনি লিখেন, "আমি হাওয়াই থেকে ইউক্রেন আসছি আপনার বাচ্চাদের, পরিবার এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে। আমি আসব এবং আপনাদের জন্য যুদ্ধ করবো। এতে আমার মৃত্যু হলেও রাজি।"

এছাড়াও তার প্রোফাইলে ফিলিস্তিনপন্থী, তাইওয়ানপন্থী এবং চীন-বিরোধী বার্তা রয়েছে। যার মধ্যে তিনি চীনকে কোভিড -১৯ ভাইরাসসহ বেশকিছু ঘটনার জন্য দায়ী উল্লেখ অভিযোগ করেছেন।

বিবিসির অংশীধারী গণমাধ্যম সিবিএস জানিয়েছে, মিঃ রাউথ এক সময়ে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু অন্য এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, "২০১৬ সালে ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় আমার ভালো লেগেছিল। কিন্তু তিনি আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে উঠছিলেন এবং বিতর্কিত কিছু বিষয়কে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন। যার কারণে আমি এখন আর তাকে পছন্দ করি না। আপনার চলে যাওয়াতে (রাষ্ট্রপতির পদ থেকে) আমি খুশি হয়েছি।"

মিঃ রাউথ ২০২৩ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে চান এবং তালেবান থেকে পালিয়ে আসা আফগান সৈন্যদের নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন।

টেলিফোনে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অনেক সৈন্য আগ্রহী ছিল। তাদেরকে সেখানে পাঠানোর জন্য অবৈধ পথও অবলম্বন করা হয়েছে।

তবে তার সাথে ইউক্রেনের বিদেশী স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তর্জাতিক বাহিনীর লিঙ্ক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে এবং অন্যান্য ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা তার থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে।

তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা হয়েছে বলেও জানায় সিবিএস।

সিবিএস জানায়, মিঃ রাউথকে ২০০২ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে উত্তর ক্যারোলিনার গুইলফোর্ড কাউন্টিতে অসংখ্য অপরাধমূলক অপরাধের জন্য অভিযুক্ত এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

২০০২ সালে মার্কিন মিডিয়া বলেছিল, একবার তাকে একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিনগান সঙ্গে রাখার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল, যা আদালতের নথিতে "গণবিধ্বংসী অস্ত্র" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

এছাড়াও তার বিরদ্ধে হিট-এন্ড-রান, গ্রেফতারে বাধা এবং একটি গোপন অস্ত্রের ব্যবহার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

মিঃ রাউথকে "সুইটহার্ট" হিসাবে বর্ণনা করে তার সাবেক প্রতিবেশী কিম মুঙ্গো জানিয়েছেন, একবার ফেডারেল এজেন্টরা তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল। তখন তিনি ওই কর্মকর্তাদের চুরি হওয়া সম্পত্তি এবং জিনিসপত্র তার বাড়িতে রাখতেন বলে জানিয়েছিলেন।

রাউথ এবং তার পরিবারকে একটি খোলা জায়গায় বন্দুক দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তে দেখেছেন বলেও জানান মুঙ্গো।

রাউথের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে সিবিএস জানায়, উত্তর ক্যারোলিনা রাজ্যের নির্বাচন বোর্ড অনুসারে ২০২৪ সালে ট্রাম্প-বাইডেনের মধ্যে প্রাথমিক নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলে অর্থাৎ বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। যদিও তিনি ২০১৬ সালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাপকে ভোট দিয়েছেন।

রায়ান রুথের বড় ছেলে ওরান সিএনএনকে এক বিবৃতিতে বলেন, “একজন স্নেহবান আর যত্নশীল বাবার বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।…জানি না ফ্লোরিডায় কী হয়েছে। তবে বোধ করি, যে খবর ছড়িয়েছে, তা বাবার সঙ্গে যায় না।”রাউথের ছেলে তাকে "একজন প্রেমময় এবং যত্নশীল পিতা এবং সৎ পরিশ্রমী মানুষ" হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

এর আগে, গত ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ডোন্ল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল।

সে সময় গুলিতে কানে আঘাত পেয়েছিলেন মি. ট্রাম্প। তিনি বেঁচে গেলেও হামলাকারীর গুলিতে অন্য এক ব্যক্তি নিহত হন। এছাড়া দু'জন গুরুতর আহতও হন।

হামলার পর হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছিল তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই। বলা হয়েছিল তার নাম থমাস ম্যাথিউ যার, বয়স মাত্র ২০ বছর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর