আমাদের পরিচিতদের মাঝেই এমন একজন থাকবে যিনি সবকিছু খুব সুন্দরভাবে মনে রাখতে পারেন। মানুষের নাম, যেকোন ঘটনার তারিখ, মোবাইল নাম্বার সবকিছুই যেন তার স্মৃতিতে গেঁথে থাকে একদম। যেখানে অনেকের খুব সামান্য বিষয় মনে রাখতেও হিমশিম খেতে হয়।
মস্তিষ্ক খুবই জটিল একটি অঙ্গ। যার গঠন ও কার্যকারিতা আরও বেশি কৌশলপূর্ণ। মস্তিষ্ককে যতটা বুদ্ধিদীপ্তভাবে কাজ করানো সম্ভব হবে, স্মৃতিশক্তি তত বেশি প্রখর হবে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের সেন্টার ফর ব্রেইনহেলথ থেকে জেনে রাখুন ছয়টি কার্যকর উপায়ে স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করার উপায়।
খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা যখন একসাথে কয়েকটি কাজ করি তখন নির্দিষ্ট কোন একটি কাজের উপর মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। সেন্টার ফর ব্রেইনহেলথ এর চিফ ডিরেক্টর বন্ড চ্যাপম্যান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে একসাথে অনেক তথ্যের ভান্ডার থাকায় একসাথে কয়েকটি কাজ করার প্রতি আমরা আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু এভাবে তথ্য গ্রহণের অভ্যাস চিন্তাশক্তিকে দুর্বল করে দেয়। তাই সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতি হলো একই সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ তথ্য গ্রহণ করা, সে সম্পর্কে নিজেকে ভালোভাবে জানানো, জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং সে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ের প্রতি পরবর্তীতে জানার চেষ্টা করা।’
গবেষণার তথ্য খুব পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছে, যারা দৈনিক সাত ঘন্টা ঘুমায় তাদের স্মৃতিশক্তি ভালো হয় যারা সাত ঘন্টার কম ও নয় ঘন্টার বেশি ঘুমায় তাদের চেয়ে। মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য এই সময়ের ঘুমটাই সবচেয়ে উপযুক্ত। বিশেষত দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিশক্তির জন্য। স্লিপ এক্সপার্ট রিচার্ড শেইন জানান, ঘুম মস্তিষ্কের কোষের সাথে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশের সংযোগ তৈরি করে। যা বিভিন্ন তথ্য ও স্মৃতিকে ভালোভাবে সংরক্ষিত রাখতে কাজ করে।
আমাদের শরীরের সাথে মনের খুব গভীর সংযোগ রয়েছে।। দৈনিক শরীরচর্চা করার ফলে রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের সম্ভাবনা দূরে থাকার সাথে মস্তিষ্কও সুস্থ থাকে। ‘টুডে ডায়বেটিস ডায়েট’ বইয়ের লেখক ইরিন প্যালেন্সকি ওয়েড জানান, শারীরিক মুভমেন্ট রক্ত চলাচল, অক্সিজেন ও অন্যান্য খনিজ ও পুষ্টি মস্তিষ্ক পর্যন্ত পরিবহনে ভূমিকা রাখে। এতে করে মস্তিষ্ক পুরোপুরিভাবে কাজ করতে পারে।
ক্যাফেইন শুধু মনকে চাঙ্গা করতেই নয়, স্মৃতিশক্তিকে প্রখর করতেও ভূমিকা রাখে। অল্প পরিমাণ ক্যাফেইন গ্রহণেই মস্তিষ্ক চাঙ্গা হয়ে হয়ে উঠবে, স্মৃতিশক্তি প্রখর হবে এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। এক্ষেত্রে একটি পরীক্ষার ফলাফল জানাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিকে অক্ষুণ্ণ রাখতে ক্যাফেইন খুব ভালো কাজ করে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ক্যাফেইন একবারে খুব বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা যাবে না।
নতুন যেকোন জিনিস জানা ও শেখায় সবসময় সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এতে করে আগের স্মৃতির সাথে নতুন তথ্য যুক্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি প্রখর হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- নতুন পরিচিত কোন ব্যক্তির চেহারার সাথে কোন অভিনেতার চেহারার মিল খুঁজে বের করুন এবং তাকে সেইভাবে মনে রাখার চেষ্টা করুন। অথবা নতুন শোপিস যেখানে রেখেছেন সেখানে অন্যান্য কী আছে সেটা মনে রাখুন। অথবা কারোর নাম বকুল, তাকে ফুলের ছবির সাথে স্মৃতিতে জমা রাখুন। এই অভ্যাসটি খুব সূক্ষ্মভাবে স্মৃতিশক্তির উপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
এটা ঠিক শরীরচর্চার মাঝে পড়ে না, তবে মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তির জন্য বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে। গবেষণা থেকে জানা যায়, ‘ওয়াকিং ব্যাকওয়ার্ড’ বা পেছনের দিকে হাঁটা ফলে পূর্বের স্মৃতি দ্রুত ও পরিষ্কারভাবে মনে পড়ে। এই অভ্যাসটি অলস বসে থাকা কিংবা সামনের দিকে হাঁটার চাইতে অনেক গুণ ভালো কাজ করে।
আরও পড়ুন: মানসিক অশান্তি কমাতে কথা বলুন মায়ের সাথে