শারীরিক ক্লান্তির বিষয়ে সকলেই কমবেশি সচেতন থাকলেও, মানসিক ক্লান্তির দিকে খুব একটা খেয়াল করা হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। অথচ পারিপার্শ্বিক অবস্থা, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও নানাবিধ সমস্যা থেকে দেখা দেওয়া এই মানসিক ক্লান্তি প্রভাব ফেলে দেয় পুরো জীবনযাত্রার উপরেই। সাধারণ দৃষ্টিতে যে লক্ষণটিকে হালকা ভেবে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, হয়ত সেটাই প্রকাশ করছে আপনার মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ার সমস্যাটি।
খুব সামান্য ও তুচ্ছ বিষয়েও বিরক্ত হওয়া মানসিকভাবে ক্লান্ত হওয়ার প্রথম একটি লক্ষণ। ছোটখাটো বিষয়ে অকারণে নেতিবাচক চিন্তা কাজ করা, প্রায় সময় ভ্রু কুঁচকে থাকাই প্রকাশ করে চারপাশের সবকিছুই আপনাকে বিরক্ত করছে। অথচ বিরক্ত বা রাগান্বিত হওয়ার মত কিছুই হয়নি।
সামান্য কোন ঘটনা, যেখানে স্বাভাবিক এক-দুইটি কথাতেই সমাধান করা সম্ভব, সেখানে অহেতুক রেগে যাচ্ছেন এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন। সামান্য বিষয়ে অস্থির হয়ে পড়া, অন্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করা এবং এই সকল ঘটনা পরবর্তী সময়ে নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত হওয়ার বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দেয়, মানসিকভাবে আপনি ভালো নেই।
বলা হয়ে থাকে শরীরের সাথে মনের সংযোগ রয়েছে এবং এটা আসলেও খুব সত্য একটি বিষয়। আপনার মন যখন ক্লান্ত, শরীর তখন নিজ থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। যা প্রতিদিনের জীবনযাপনে দেখা দেবে এবং প্রভাব ফেলবে। ছোট কোন কাজ করার পড়ে ক্লান্তু বোধ করা, মাথা ঘোরানোভাব দেখা দেওয়া, সবসময় শুয়ে-বসে থাকার প্রবল ইচ্ছা, কোন কাজ করতে আগ্রহ না পাওয়ার মতো লক্ষণগুলো যতখানি না শারীরিক ক্লান্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, তার চেয়ে বেশি মানসিক ক্লান্তির বিষয়টি প্রকাশ করে।
বহুদিন পর কোন কাজ খুব আগ্রহ করে শুরু করেছেন। কিন্তু কিছুদিন বাদেই সে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। শুধু একটি কাজের ক্ষেত্রে নয়, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু করেছে। অফিসের প্রতিদিনের কাজ, ঘরের জরুরি কাজগুলো সেরে নেওয়ার মতো আগ্রহও কাজ করবে না মনে। এমন পরিস্থিতি তখনই দেখা যায়, যখন মানসিকভাবে ক্লান্তি ও অবসাদের সমস্যাটি শুরু হয়।
মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে থাকা ব্যক্তিদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় ঘুমে। তারা কখনই ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না এবং তাদের ঘুম গভীর হয় না। সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া হলেও, দীর্ঘসময় পার করেও ঘুমের দেখা পাওয়া যায় না বেশিরভাগ রাতেই। কারণ মানসিক ক্লান্তি ও অস্থিরতা রাতের শান্ত পরিবেশে অনেকটা বেড়ে যায়। মানসিকভাবে শান্তিতে না থাকলে, ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া আবশ্যিক।