সকালের কোটিপতি রাতে এসে ‘ফকির’!

, জাতীয়

তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো | 2024-06-29 21:06:10

সকালেও খোরশেদ আলম ছিলেন ‘কোটিপতি’। তার দোকান ভর্তি ছিল মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশে। সেসবের দাম এক জোট করলে হতো সাড়ে তিন কোটি টাকা। কিন্তু মধ্যরাত আসতেই তিনি কিনা হয়ে গেলেন ‘ফকির’। আগুন এসে এক দমকায় দোকানের সব জিনিসপত্র পুড়িয়ে বলতে গেলে পথেই বসিয়ে দিয়েছে এই ব্যবসায়ীকে।

ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমের নিঃস্ব হওয়ার এই ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে (২৭ জুন)। চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের মোহাম্মদী প্লাজার দ্বিতীয় তলায় তার ‘ব্রাদার্স টেলিকম’ নামের একটি মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশের দোকান ছিল। আগুনে ওই দোকানটি একেবারেই পুড়ে ছাই হয়েছে। বহু চেষ্টা করেও দোকান থেকে একটি জিনিসও বের করতে পারেননি খোরশেদ আলম।

বহু বছরের কষ্টের জমানো টাকায় ১২ বছর আগে মোহাম্মদী প্লাজার নিচ তলায় দোকান নিয়েছিলেন খোরশেদ আলম। ৪-৫ বছর আগে পরিসর আরও বাড়াতে দ্বিতীয় তলায় দোকানটি স্থানান্তর করেন। পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র বলে-প্রতিদিনই এই দোকানে যেমন বেশ বিক্রি হতো, তেমনি ঢাকা থেকে পণ্যও কিনে আনতে হতো প্রায় প্রতিদিনই। আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়ার একদিন আগে বুধবারও খোরশেদ আলম দোকানে এনেছেন ১ লাখ ৮০ টাকার পণ্য। তার আগেরদিন এনেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকার মালামাল। আগে থেকে কয়েক কোটি টাকার পণ্য তো ছিলই। কিন্তু আগুন সবকিছুই পুড়ে ছাই বানিয়ে দিয়েছে।

ব্রাদার্স টেলিকম নামের দোকানটি যেন এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ

সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এই ব্যবসায়ীর মনের ওপর দিয়ে কতটা দুঃখের নদী বয়ে যাচ্ছে তা বোঝা গেল তার সঙ্গে কথা বলে। জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলে ওঠেন, আমার তো ভাই আর কিছুই রইল না। একদম কিছুই বাকি রাখেনি আগুন। সবকিছুই পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। এখন তো আমি পথেই বসে গেলাম।

দোকানে কত টাকার পণ্য ছিল এমন প্রশ্নে যেন কেঁদেই দিলেন এই ব্যবসায়ী। অস্ফুট স্বরে বললেন, প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার পণ্য ছিল। এক টাকার পণ্যও আর বাকি নেই।

অথচ আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টা আগেই দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরেছিলেন খোরশেদ আলম ও তার কর্মীরা। বলেন, রাত ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরেছিলাম। আমার কর্মীরাও তাদের বাসায় গিয়েছিল। পৌনে দুইটার দিকে খবর পাই মার্কেটে আগুন ধরেছে। তখন বলতে গেলে এক দৌড়েই মার্কেটে আসি। আগুনের মধ্যেই ভেতরে ঢুকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড স্প্রে করি। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। চোখের সামনেই সব পুড়ে গেল।

আগে যেমন ছিল ব্রাদার্স টেলিকম

শনিবার (২৯ জুন) সকালে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদী প্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, আগুনে একেবারেই ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে খোরশেদ আলমের ব্রাদার্স টেলিকম-নামের দোকানটি। দোকানজুড়েই শুধু পুড়ে যাওয়া যন্ত্রাংশের ধ্বংসস্তূপ। তবে খোরশেদ আলমের দোকান লাগোয়া অ্যাওয়ে টেলিকম-নামের আরেকটি দোকান তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এই দোকানের মালিক মোহাম্মদ রিদোয়ান বললেন, আল্লাহর রহমতে আমার দোকানে তেমন ক্ষতি হয়নি। শুরুতে এসে আমিসহ অন্যরা কার্বন ডাই অক্সাইড স্প্রে করি। ফলে দোকানে আগুন সেভাবে ছড়ায়নি। তবে খোরশেদ আলম ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগছে। তার দোকানটা অনেক বড় ছিল। কয়েক কোটি টাকার জিনিসপত্র ছিল সেখানে। এখন কিছুই আর বাকি নেই।

আগুন লাগার একদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো সংস্থা থেকে এখন পর্যন্ত সাহায্যে কিংবা সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাননি খোরশেদ আলমসহ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। খোরশেদ আলম তাই হতাশ কণ্ঠে বললেন, প্রায় কোটি টাকার ঋণ আছে। সাড়ে তিন কোটি টাকার পণ্যের মধ্যে এক টাকার পণ্যও নেই। কিন্তু কোনো সংস্থা সহযোগিতা করার কোনো আশ্বাসও দিল না।

এখন কি ভাবছেন-এমন প্রশ্নে সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসার কথা জানালেন খোরশেদ আলম। বলেন, আল্লাহ বিপদে ফেলেছেন, তিনিই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা পথ নিশ্চয় বের করে দেবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর