জাবি ভিসি’র অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতিতে উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম জড়িত অভিযোগ করে তার অপসারণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বরাবর চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে ফ্যাক্সের মাধ্যমে আচার্যের কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের সমন্বয়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীনগর’ ব্যানারের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “প্রকল্পের শুরু থেকেই লুকোছাপা ও অস্বচ্ছতার খবর গণমাধ্যমে আসলে আশঙ্কা ও অসন্তোষের শুরু হয়। অংশীজনদের পরামর্শ ছাড়াই প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসের দাবি জানালে তা একনেকে অনুমোদন হয়েছে বলে এড়িয়ে যান উপাচার্য। এছাড়া প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ নিয়ে শুরু থেকেই নানা বিতর্ক চলছে। সেসব বিতর্ককে পাত্তা দেননি উপাচার্য। সর্বশেষ প্রকল্পের টাকা ছাত্রলীগের মাঝে ভাগবাটোয়ারার বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে তার সুষ্ঠু বিচারসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ১৩ সেপ্টেম্বর আলোচনায় বসে দুইটি দাবি মেনে নেন উপাচার্য। দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবির আলোচনার জন্য সময় নেন উপাচার্য। পরে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার ফোনালাপের অডিও ফাঁস হয়। সেখানে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।”
চিঠিতে দাবি করে আন্দোলনকারীরা বলেন, “উন্নয়ন প্রকল্পের শুরু থেকেই বিতর্কিত কাজ করায় উপাচার্যের নৈতিক স্খলন ঘটেছে। তিনি এ পদে বহাল থাকতে পারেন না। আমরা তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করননি। তাই আমরা তাকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।”
এর আগে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করেন আন্দোলকারীরা। আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে ক্যাম্পাস ছুটি হওয়ায় লাগাতার আন্দোলন থেকে সরে আসতে হয়েছে। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে ১০ অক্টোবর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন, ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পদযাত্রা ও সমাবেশ, ১৬ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল, ১৭ অক্টোবর সংহতি সমাবেশ এবং ১৯ অক্টোবর মশাল মিছিল। এছাড়াও ছুটির পুরো সময়জুড়ে সংবাদচিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলবে।”
এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে টানা দুইদিন সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। এতে করে স্থবির হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এ সময় তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, “প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমেও আলোচনা হতে পারে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকেও তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা গ্রহণ করা যেতে পারে।”
ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে টাকা ভাগবাটোয়ারা করার অভিযোগ অস্বীকার করে উপাচার্য বলেন, “উন্নয়ন পরিকল্পনার নির্মাণ কাজের টাকা পয়সার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কোনো ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়নি। কোনো ছাত্রনেতাকে টাকা পয়সা দেওয়া হয়নি। উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ কাউকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। এটি সত্যের অপলাপ মাত্র। কোন অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগে আমি পদত্যাগ করব না।”