শিক্ষিত আব্দুল বারী আজ দিনমজুর
গাবতলী উপজেলার বাইগুনী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বারি(৬৬), পেশায় দিন মজুর। ১৯৭৮ সালে এইচএসসি পাশ করা শিক্ষিত এই মানুষটি আজ বৃদ্ধ বয়সে ভার-কোদাল হাতে নিয়েছেন জীবিকার তাগিদে। প্রতিদিন ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে আসেন শহরের নামাজগড় মোড়ে শ্রম বিক্রি করতে। কোন দিন কাজ হয় আবার কোন দিন কাজ না পেয়ে ফিরে যান খালি হাতে। স্ত্রী হারানোর পর ৬ বছর ধরে বৃদ্ধ বয়সে এভাবে সংসারের ঘানি টানছেন আব্দুল বারী।
বগুড়া শহরের নামাজগড় মোড়ে গড়ে ওঠা শ্রমজীবী মানুষের বাজারে আসা অনেক মানুষের ভিড়ে খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় আব্দুর বারীকে। সহজে খুঁজে পাওয়ার কারণ হলো তিনি বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে ভাল কথা বলেন। একারণে মানুষের শ্রম কিনতে আসা লোকজন তাকে সহজে পেলেও কাজে নিতে চায় না বয়সের কারণে। সবাই খোঁজে যুবক বয়সী শ্রমিক। সেখানে আব্দুল বারীর মত বৃদ্ধ শ্রমিকদের কদর নেই।
আব্দুল বারী বলেন, ১৯৭৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করে পরীক্ষা দিয়েছিলেন বিমান বাহিনীর অফিসার পদে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তার চাকরি হয়নি। এরপর থেকে সরকারি চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে বিয়ে করে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। চার মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক আব্দুল বারী ইতিমধ্যেই চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী ও এক এক ছেলে নিয়ে সুখেই কাটছিল বারীর জীবন। এরই মধ্যে জামাই জিন্নাহ পড়েন বিপদে। ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এর সদস্য জিন্নাহ কে খুঁজে বেড়ায় পাওনাদার। এনিয়ে মেয়ের সংসারে অশান্তি। জামাই মেয়েকে চাপ দেয় শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য। মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে আব্দুল বারী পৈত্রিক চার বিঘা জমি থেকে সাড়ে তিন বিঘা বিক্রি করে জামাইকে দিতে বাধ্য হন। এদিকে কিছুদিনের মধ্যে স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। একদিকে স্ত্রীর চিকিৎসা অন্য দিকে ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষের ছাত্র ছেলে রাসেলের পড়া শোনার খরচ জোগাতে দিন মজুরের কাজে নামেন বারী। এরই মধ্যে স্ত্রীও মারা যান অনেকটা বিনা চিকিৎসায়। ছেলেও পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর থেকেই দিন মজুরের কাজ করে যাচ্ছেন আব্দুল বারী।
নুরুন্নবীর মত গাবতলীর রামেশ্বরপুরের জালাল,শফিকুল, বগুড়া সদরের পালশার সোবাহান জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে নামাজ গড় মোড়ে তিন থেকে সাড়ে তিনশ মানুষ আসে কাজের সন্ধানে। কিন্তু শহরে কাজ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ মানুষকেই ফিরতে হয় খালি হাতে। তারা বলেন গ্রামে আমন ধান কাটার পর আলু রোপণের কাজও শেষ। এখন কাজে তেমন কাজ নেই। আরও মাস খানেক পর শুরু হবে ইরি ধান রোপণের কাজ। তখন এত কষ্ট থাকবে না। কিন্তু এই একমাস পার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বগুড়া সদরের ঝোপগাড়ির আব্দুল হামিদ, গাবতলীর রানীর পাড়ার তবিবর রহমান, কাহালুর জাহিদুল ইসলামের বয়স ৬০ পার হয়েছে অনেক আগেই। তারাও এসেছেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু তাদের কদর কম। বয়সের কারণে তাদেরকে কাজে নেয়ার আগ্রহ দেখায় না মানুষের শ্রম কিনতে আসা লোকজন। বৃদ্ধ বয়সের এই মানুষ গুলো বলেন ছেলে সন্তান থাকার পরেও তারা বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা থাকে। পেটের তাগিদে শহরে কাজের সন্ধানে এসেছে তাদেরকে কাজে নেয়া হচ্ছে না। সরকারি বয়স্ক ভাতা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা। ফলে এই শীতে কষ্টে সীমা নেই শ্রমজীবী মানুষ গুলোর।