ভয়ংকর মঙ্গলীকে নিয়ে পথে নানি
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শ্যামগঞ্জ বাজারের পাশে ফুটপাতে শুইয়ে রাখা হয়েছে ভয়ংকর মুখমণ্ডলের এক শিশুকে। তার মাথায় দৈত্যাকৃতির শিং। চোখ দুটো থেতলানো। নাক থেকে মাংসপিণ্ড শুঁড়ের মতো বের হয়ে আছে। বিকৃত মুখটা বিভৎস। ভয়ংকর অবয়বের প্রতিবন্ধী এই শিশুটিকে দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। আর পাশে বসে খাবারের টাকার জন্য আকুতি জানাচ্ছে শিশুটির নানি পারুল বেগম। তার আবেদনে অনেকেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
পারুল বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, প্রতিবন্ধী শিশুটির নাম মঙ্গলী। তার বয়স আড়াই বছর। জন্ম থেকেই মঙ্গলীর চেহারা বিকৃত। সে তরল দুধ ও কলা ছাড়া কিছুই খায় না। কিন্তু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় প্রতিদিন দুধ-কলা কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই খাবারের টাকা জোগার করতে নাতনিকে নিয়ে পথে পথে ঘোরেন তিনি।
জানা গেছে, প্রতিবন্ধী মঙ্গলীর বাড়ি গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। তার বাবা ফারুক। পেশায় তিনি রিকশাচালক। মা বন্যা আক্তার গৃহিনী। বিয়ের পর বন্যার প্রথম সন্তান জন্মের পর মারা যায়। এরপর বন্যার গর্ভে জন্ম নেয় শিশু মঙ্গলী। জন্ম থেকেই তার চেহারা বিকৃত ছিল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চেহারা আরও ভয়ানক হতে শুরু করে। কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলী এখনও পর্যন্ত হাঁটতেও পারে না।
আরও জানা গেছে, ভয়ংকর চেহারার কারণে প্রতিবেশীরা কেউ মঙ্গলীকে কোলে নিতেন না। পরিবারের কেউ মঙ্গলীকে নিয়ে বের হলে অনেকে কটূক্তি করতেন। কিন্তু মা বন্যা আক্তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। পরম যত্নে তিনি মেয়েকে বড় করে তুলেছেন।
জন্মের পর থেকেই মঙ্গলীকে বিশেষ ব্যবস্থায় বুকের দুধ খাওয়ানো হতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যের চাহিদা বাড়ায় বিপাকে পড়ে পরিবার। এই অবস্থায় মেয়ের খাবারের টাকা যোগাড় করতে পরিবারের সদস্যরা ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন। গৌরীপুর ও আশেপাশের অঞ্চলে মঙ্গলীকে নিয়ে ভিক্ষা করে দিনে ৭-৮শ’ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়েই কেনা হয় মঙ্গলীর খাবার।
মঙ্গলীর মামা জামাল মিয়া জানান, মঙ্গলীর চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ডাক্তার জানিয়েছেন- উন্নত চিকিৎসা করালে তার মুখ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্ত এ জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, যা জোগার করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।