ফেরিতে ফেরি করা এক জীবনযোদ্ধার গল্প

  • মো. রফিকুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম মাদারীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চানাচুর বিক্রেতা সুমন আহম্মেদ

চানাচুর বিক্রেতা সুমন আহম্মেদ

শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও জীবন-জীবিকার তাগিদে ফেরিতে ফেরি করে চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন সুমন আহম্মেদ। সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে এ পথ বেছে নেন তিনি। রোজ সংগ্রাম করে বাবা, সৎ মা, ছোট ভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন সুমন।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকালে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটের শাহপরান ফেরিতে চানাচুর বিক্রেতা সুমনের সঙ্গে কথা হয়। জানা যায় তার জীবন সংগ্রামের কাহিনী।

বিজ্ঞাপন

সুমন শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের খাড়া কান্দি গ্রামের নান্নু চাঙ্গারীর ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্য সুমনই বড়।

সুমন বলেন, আমার মা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে প্রায় ১৫ বছর আগে একদিন হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এর পর মা আর ফিরে আসেনি। পরে বাবা আবার বিয়ে করে। তাছাড়া ছোটবেলায় আমার জ্বর হইছিলো। ওই সময় বাবা বাড়ি থেকে দূরে থাকায় সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় আজ আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী।

বিজ্ঞাপন

তখন থেকে সুমন খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন। পরিবারে অভাব-অনটন থাকায় সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে আর পড়তে পারেননি। তাই ৭ বছর ধরে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরিতে ফেরি করে চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন এই যুবক।

সুমন বলেন, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম পড়াশুনা করে মানুষের মত মানুষ হবো। একটু আরাম-আয়েশে জীবন কাটাবো। কিন্তু দারিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে সৎ মা, বৃদ্ধ বাবা আর ছোট ভাইকে নিয়ে এই চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি।

সুমনের চানাচুর ব্যবসা 

প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা বা নয়টা পর্যন্ত ফেরিতে চানাচুর বিক্রি করেন সুমন। প্রায় হাজার টাকার চালান খাটিয়ে একটি বড় গামলা, একটি ঢাকনা ও তিন চারটি ছোট বাটি কিনে এ ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত এই চানাচুর বিক্রি হয়ে থাকে। এতে দৈনিক প্রায় এক হাজার টাকার মত আয় করেন তিনি।

চানাচুর বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখে থাকবো। আর সেই আশা বুকে নিয়ে প্রতিনিয়ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। চানাচুর বিক্রি কোন অসৎ কাজ নয়। ব্যবসা ছোট হলেও সততার সাথে থাকলে ভাল ভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব। তাছাড়া আমি শারীরিক ভাবে অক্ষম, আমি আর কী করবো?

আগামী বছর পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। সেতু হলে তো লঞ্চ আর চলবে না। তখন হয়তো পরিবার নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে- এমন হতাশার বাণী শোনালেন এই জীবনযোদ্ধা।