স্কুলে ‘UNO BOX’ বসানোর জন্য ‘থ্যাংক ইউ ইউএনও স্যার’
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা, পরামর্শ জানতে ও সমাধান করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার উপজেলার দুটি স্কুলে “UNO BOX” বসানো হয়েছে। এই বক্সটি বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে খোলা হয়। বিভিন্ন সমস্যা ও পরামর্শের মাঝে কয়েকটি চিঠি পাওয়া যায় যাতে এই বক্সটি বসানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন “সম্মানিত ইউএনও স্যার। আমরা অনেক আনন্দিত আমাদের স্কুলে ইউএনও বক্সটি বসানোর জন্য। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার- Thank You UNO Sir”
গত ২৮ জানুয়ারি আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার উপজেলার সরকারি হাজি আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় ও রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি ‘UNO BOX’ বসানো হয়। এই বক্সে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারবেন। উপজেলার দুটি স্কুলে এটি পরীক্ষামূলকভাবে দেয়া হলেও সচেতন মহল এই বিষয়টিকে খুবই ভালভাবে দেখছেন।
ইতোমধ্যেই বক্স দুটির মধ্যে ২৫টি চিঠি জমা পড়েছে। রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বক্সে ১৯টি ও সরকারি হাজি আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬টি । এর মধ্যে ১০ টি পরামর্শ, ৩টি অভিযোগ এবং বাকিগুলো ইউএনওকে ধন্যবাদ জানানো ও দুষ্টুমি করে লেখা।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এই চিঠিগুলো খোলা হয়। এ সময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ উপস্থিত ছিলেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার মূলে ছিল ইভটিজিং। ভাল রেজাল্টের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রশ্নফাঁসের মতো অপরাধ। তাছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্লাস প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র্যাগিং এসব সমস্যা সংক্রান্ত তথ্যগুলো সঠিক সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌঁছায় না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পরিবারের ভয়ে কিংবা শিক্ষকদের সাথে খোলামেলা কথা বলতে না পরার কারণে অনেক সময় চুপ করে থাকেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাঠ ও স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি করে “UNO BOX” স্থাপন করার চিন্তা করা হয়।
তিনি জানান, সপ্তাহের বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই বক্সটি খুলবেন। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা অন্য কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রাথমিকভাবে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি বক্স বসানো হয়েছে।পর্যায়ক্রমে এটি উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে। আজকে বক্সগুলো খোলা হয়েছে। এতে মোট ২৫টি চিঠি পাওয়া যায় এরমধ্যে ১০ টি পরামর্শ ও তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু চিঠি দুষ্টুমি করেও লেখা রয়েছে। কয়েকটি চিঠিতে এই বক্স বসানোর জন্য ইউএনওকে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে।
চিঠির বিষয়ে তিনি জানান, চিঠিগুলোতে রওশন আরা জলিল স্কুলের সামনের মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ, হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো বন্ধ, বাল্যবিয়ে রোধে মা সমাবেশ করে অভিভাবকদের সচেতন করে তোলা, বিভিন্ সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষকদের প্রাইভেট বন্ধ করা, প্রাইভেটে শিক্ষকদের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহ বন্ধ করা, যৌন হয়রানি বন্ধ করতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি তিনটি অভিযোগও রয়েছে।
সবগুলো বিষয়ই আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। অভিযোগ ও পরামর্শের বিষয়ে সব ধরনের গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। তবে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ও অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-পরামর্শ শুনতে স্কুলে ‘UNO BOX’