টেস্টে ফেল, ‘শিক্ষা বোর্ড’ থেকে প্রবেশপত্র নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা!

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্র

নিজ বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) ফেল ও পরীক্ষার ফরম পূরণ না করেও দুই ছাত্র পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

অভিযুক্ত ওই দুই ছাত্র হলেন সাগর আহমেদ ও সাইদুল ইসলাম। দুজনেই গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষার্থী। অকৃতকার্য হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এসএসসির ফর্ম ফিলআপের সুযোগ দেয়নি তাদের। সুযোগ না পেয়ে ওই দুই ছাত্র শিক্ষা বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঈশ্বরগঞ্জ চরজিথর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র দেখিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া ২টি পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণ করে তারা।

এর আগে, একই রকম আরও একটি অভিযোগ পাওয়া যায় একই বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর বিরুদ্ধে। নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ ও ফর্ম ফিলআপ না করেও বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র আসায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অভিযুক্ত ওই দুই ছাত্রী। সেখানেও বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত বলে জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডৌহাখলা বিদ্যালয় থেকে নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) অংশ নেয় ২৫৯ জন শিক্ষার্থী। এরমধ্যে কৃতকার্য হয় ২৪৫ জন ও অকৃতকার্য হয় ১৪ জন শিক্ষার্থী।

এদিকে, বিদ্যালয় থেকে কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে জানুয়ারি মাসে বোর্ড থেকে ৩৮ জন শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র কম আসে। ওই সময় বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে একটি চক্র অকৃতকার্য দুই ছাত্রীর ফরম পূরণের পাশাপাশি ওই বিদ্যালয়ের ৩৮ শিক্ষার্থীর ডাটা মুছে ফেলা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। পরে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায় বোর্ডে যোগাযোগ করলে পরীক্ষার একদিন পূর্বে শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র পায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায় বলেন, ৩৮ পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র না আসা ও তাদের ডাটা মুছে যাওয়ার বিষয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করলে বোর্ডের কর্মচারী আনোয়ার ও মহসিন আমাকে বিদ্যালয়ের অকৃতকার্য ১৪জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমার ধারণা প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই দুই কর্মচারী বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড হ্যাকড করে অকৃতকার্য ২ ছাত্রীর ফরম পূরণ করে প্রবেশপত্র পাঠিয়েছে। ৩৮ শিক্ষার্থীর ডাটা মুছে ফেলার পেছনেও ওদের হাত আছে। ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন: টেস্ট পরীক্ষায় ফেল সত্ত্বেও বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র, জানে না স্কুল

এদিকে, ঈশ্বরগঞ্জের চরজিথর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে গত রোববার রাতে মানবিক শাখার এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. সাগর আহমেদ ও সাইদুল ইসলামের প্রবেশপত্র পৌঁছে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড থেকে মহসিন আলম রনি নামের এক কর্মকর্তা চরজিথর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান প্রধান মো. মিসবাহ উদ্দিনকে ফোন করে ওই দুই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দেন। পরে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যাচাই বাছাই শুরু করলে জানা যায় ওই দুই শিক্ষার্থী তাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র না। তারা গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল।

চরজিথর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. মিসবাহ উদ্দিন বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগের দিন ওই দুই ছাত্রের প্রবেশপত্র আসে। পরে যাচাই-বাছাই করে জানতে পারি তারা আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র নয়, দুজনেই ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। এরপর বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানাই।

ডৌহাখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম রায় বলেন, সাগর আহমেদ ও সাইদুল ইসলাম আমার বিদ্যালয়ে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ফরম পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু তারপরও পাশের উপজেলার একটি স্কুল থেকে তারা পরীক্ষা দিচ্ছে। আমার ২৮ বছরের চাকরিজীবনে এমন জালিয়াতি আর চোখে পড়েনি।

ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. জাকির হোসেন বলেন, এখানে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর ওই দুই শিক্ষার্থীর বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। পাশাপাশি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে দুই ছাত্রের পরীক্ষা বাতিলের কোনো নির্দেশনা এখনো আমাদের কাছে আসেনি।