করোনার প্রভাব নেই নরসিংদীর চরাঞ্চলে!

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • শরীফ ইকবাল রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাজার এলাকায় মানুষের ভিড়, ছবি: বার্তা২৪.কম

বাজার এলাকায় মানুষের ভিড়, ছবি: বার্তা২৪.কম

করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে যেখানে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে সেখানে পুরো উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে নরসিংদীর চরাঞ্চলের এলাকাগুলোতে। করোনার কোনো প্রভাবই যেন পড়েনি এই এলাকাগুলোতে।

সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নরসিংদী জেলা প্রশাসন মানুষকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করতে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং অন্যতম। এর পাশাপাশি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় ও এর অধীনস্থ থানা পুলিশের মাধ্যমেও নানামুখী প্রচারণা চালিয়েছেন জনগণকে সচেতন করতে। এই কার্যক্রম শহর ও গ্রামগুলোতে বেশি দেখা গেলেও চরাঞ্চলে তুলনামূলক জনসচেতনতা কার্যক্রম বেশ কম হয়েছে বলে দাবি করছেন চরাঞ্চলবাসী।

নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুর, নজরপুর, আলোকবালী ও চরদিঘলদী এলাকা চরাঞ্চল বেষ্টিত। এই চারটি ইউনিয়নে যানবাহন যাতায়াতে কিছুটা সমস্যা ও প্রশাসনের ছত্রছায়া থেকে কিছুটা দুরে হওয়ার কারণে এখানে করোনার প্রভাব তেমন একটা পড়েনি বলে চরাঞ্চলবাসীর ধারনা।

এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রায়পুরা উপজেলা। এই উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ইউনিয়নের সংখ্যা ৮টি। এরমধ্যে চাঁনপুর, বাশগাড়ী, চরআড়ালিয়া, চরমধূয়া, নিলক্ষা, পাড়াতলী, শ্রীনগর ও মির্জারচর। এই ইউনিয়নগুলো নরসিংদী জেলা শহর কিংবা উপজেলা সদর থেকে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিছুটা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে এ অঞ্চলের মানুষগুলো সচেতনতা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে।

নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল করিমপুর ইউনিয়নের রসুলপুর বাচ্চু মার্কেট, করিমপুর বাজার ও পঞ্চবটি বাজার। নজরপুর ইউনিয়নের কালাইগোবিন্দপুর বাজার, নবীপুর বালুয়া ঘাট দিলারপুর ও চেঙ্গাতুলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারের সকল দোকানপাটই খোলা, শতশত মানুষ সমবেত হয়ে কেনাকাটা করছেন। আবার চায়ের স্টল খোলা থাকায় প্রতিটি চা স্টলেই ১০/১৫ জন লোক একসাথে আড্ডা দিচ্ছেন। দোকানগুলোতে বসেই কেউ টিভি দেখছেন, কেউ চা পান করছেন আবার কেউ-বা সিগারেট খাচ্ছেন।

হোটেলগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকছে
হোটেলগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকছে

হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক জায়গায় বসে ৫-৬জন খাওয়া দাওয়া করছেন। এদের কারও মধ্যে করোনা নিয়ে সামান্য চিন্তা আছে বলে মনে হয়নি।

করোনা সম্পর্কে অবগত কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, টিভিতে দেখেছি ও শুনেছি করোনা সম্পর্কে। এছাড়া কেউ আমাদের বলেনি বা কোন বিধি নিষেধও করেনি যে দোকান বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া গরিব মানুষ এটা করেই খেতে হয়।

বাজারগুলোতে আগত লোকজনের মধ্যে শতকরা দু/চারজনের লোক মুখে মাস্ক পরে বাজারে আসেন, বাকিরা মাস্ক পরার বিষয়ে যেনো কিছু জানেন-ই না।

এছাড়া রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ গ্রাম সরেজমিনে গেলে তাদের জন্য খাবার এসেছে ভেবে মিনিটেই জড়ো হয় শতাধিক নারী-পুরুষ। কাছে এসে সাংবাদিক পরিচয় জানতেই একে একে সকলেরই অভিযোগ আমরা মুখে লাগানোর মাস্ক, সাবান, চাল কিংবা কোন প্রকার খাদ্যই পাইনি।

এ সময় কথা হয় নুর মহল নামে এক শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীর সাথে। তিনি জানান, তার স্বামীও একজন প্রতিবন্ধী। তাদের ঘরে এক ছেলে ও দুটি মেয়ে। ছেলেটি অন্যের নৌকায় কাজ করে। নুর মহল অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পেতো তাই দিয়ে চলতো তাদের জীবন। করোনা পরিস্থিতিতে নৌকাও চলে না আর নুর মহলকেও কাজ দেয় না, সরকারের সাহায্যও সে পায়নি তাই অনেকটা না খেয়েই দিন পার করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন
করোনার মধ্যেও বাজার এলাকায় মানুষের এমন ভিড় নিয়মিত ঘটনা এখানে
করোনার মধ্যেও বাজার এলাকায় মানুষের এমন ভিড় নিয়মিত ঘটনা এখানে

তার সাথে সুর মিলিয়ে অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, শুনেছি সরকার সাহায্য দিয়েছে কিন্তু আমরা চোখেও দেখিনি।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আইনুল হক জানান, চরাঞ্চলে জনসংখ্যার তুলনায় খাদ্যের পরিমাণ কম থাকায় তারা প্রথম ধাপে খাদ্য পায়নি।

এছাড়া করোনা বিষয়ে তারা কতটা সচেতন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারণা না থাকলেও টিভিতে তারা দেখছেন।

তারসাথে একই সুরে কথা বলেছেন স্থানীয় শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান আজাদুর রহমান আজান। তিনি জানিয়েছেন, এই এলাকার জন্য হাজার হাজার ব্যাগ খাদ্যের দরকার, সেখানে দেওয়া হয়েছে মাত্র একশত। এই খাদ্য দিয়ে কিভাবে একটি ইউনিয়নে সকলকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব।

চরাঞ্চলে সচেতনতা ও খাদ্য বিতরণ নিয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জানালেন, চরাঞ্চলবাসীতো নরসিংদীর মধ্যেই। তারা আলাদা কোনো অংশের মানুষ নয়। সমস্ত নরসিংদীতে করোনা বিষয়ে সচেতনতার জন্য মাইকিং করে প্রচারণা করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানগণ এই কাজে দায়িত্ব পালন করছেন। আর সরকারিভাবে প্রথম পর্যায়ে যে খাদ্যসামগ্রী সরকার থেকে পাঠানো হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবে পর্যায়ক্রমে সকল হত দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে।