সতত স্মরণীয় বিদ্যাসাগরের দ্বিশততম জন্মদিন

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

জন্মের ২০০ বছর পরেও স্মরণীয় হওয়ার গৌরব লক্ষ বা কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র এক-দুজনের ক্ষেত্রেই সম্ভব। ২০০ বছর আগে ১৮২০ সালে, অবিভক্ত বঙ্গদেশে  মোট বাঙালির সংখ্যা নাকি ছিল চার কোটি। তার মধ্যে বহুজনের নাম ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকলেও মানুষ সত্যিকার অর্থে মনে রেখেছে কয়জনকে?

খোদ রবীন্দ্রনাথের মতে, 'একজনই'। তাঁর নাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। জন্ম ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। প্রয়াণ ২৯ জুলাই ১৮৯১ সাল।

বিজ্ঞাপন

১৮২০ সাল যে শতাব্দীর অংশ, সেই উনিশ শতক বাঙালির আত্মপরিচয় গঠনের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। তখন মধ্যযুগের খোলস  ছেড়ে সূচিত হচ্ছে আধুনিকতা। কুসংস্কার, পশ্চাৎপদতা, ধর্মীয় কূপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে আলোর মশাল। অন্ধকার থেকে আলোর পথে বাঙালির সেই আদি যাত্রাপথে প্রথম প্রজন্মের যাত্রীদের অন্যতম নেতৃস্থানীয় একজন বিদ্যাসাগর।

বিদ্যমান সমাজের অচলায়তনের বিরুদ্ধে একাকী এগিয়ে এসেছিলেন তিনি লড়াইয়ের ময়দানে। বিধবা বিবাহের পক্ষে দাঁড়িয়ে পুরো ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। সতীদাহ প্রথা রোধে কাজ করেছেন সুদৃঢ় প্রত্যয়ে । প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পাঠ্যক্রম বা সিলেবাসের কাঠামো দিয়েছেন। ব্যাকরণকে করেছেন সর্বসাধারণের সহজবোধ্য। সার্বজনীন শিক্ষাকে করেছেন সহজলভ্য। নারী শিক্ষার ভিত গড়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যাসাগরের এসব কাজ সমাজের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিলনা। তৎকালের সামন্ত সমাজ ভোগ ও বিলাশে মত্ত হয়ে মধ্যযুগীয় অন্ধ প্রকোষ্ঠে ছিল আবর্তিত। খোদ হিন্দু সমাজের বৃহত্তম অংশ তীব্র বিরোধিতা করেছিল বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার প্রচেষ্টাকে। কিন্তু তিনি জানতেন, গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসমান সমাজ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ইতিহাসের বিচারে পরাজিত হবে। জানতেন বলেই, একজন বিদ্যাসাগর রেনেসাঁস বা নবজাগরণের বাতিকে একাই অনেকটুকু আলোকিত করেছিলেন।

দামোদর নদ পেরিয়ে সুদূর মেদিনীপুর থেকে বিদ্যাসাগর কলকাতায় এসেছিলেন জ্ঞানের অন্বেষণে। জীবনভর তিনি জ্ঞানের মশাল বহন করেছেন। হিন্দু ধর্মের অনাচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, প্রগতিবিরুদ্ধ তৎকালীন সমাজের মূলস্রোতের বিরুদ্ধে তাঁকে লড়তে হয়েছে একাই। কলকাতার বাদুড়বাগানের বাড়ি থেকে যুক্তি ও শিক্ষার পক্ষে নিঃসঙ্গ বিদ্যাসাগর লড়াই ছেড়ে সরে যাননি প্রলোভন বা ভয়ের কাছে মাথা নত করে। বরং যারা প্রথা ও প্রাচীন পন্থা আঁকড়ে ধরে বিদ্যাসাগরের বিরেধিতা করেছিলেন, তাঁদের লড়াই ভুল ও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে মহাকালের অমোঘ রায়ে।

বরং বিদ্যাসাগরের নিঃশঙ্ক চিত্তের লড়াই ২০০ বছরে ছড়িয়েছে তাবৎ বঙ্গদেশে। বাংলার, বাঙালির আলোকায়নের সারথি হয়ে দ্বিশত বর্ষেও সদা দেদীপ্যমান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।