এই ‘শঙ্খনীল কারাগারে’ এখনও আমরা যাকে খুঁজে ফিরি



অসীম নন্দন
গ্রাফিক্স: নাছরিন আক্তার উর্মি

গ্রাফিক্স: নাছরিন আক্তার উর্মি

  • Font increase
  • Font Decrease

একজন গল্পের চরিত্রের ফাঁসির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করতে জনগণ রাস্তায় নেমেছে। মিছিল করে গল্পের চরিত্রের মৃত্যু ঠেকাতে চাওয়ার মতন ঘটনা কি আরো ঘটেছে? না, ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। মিছিল করে কি লেখকের গল্পের পরিণতি ঠেকানো যায়? জীবনের নিয়তি যেমন ঠেকানো যায় না, ঠিক তেমনি গল্পের নিয়তিও ঠেকানো অসম্ভব। কখনো কখনো তো লেখক নিজেও তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের নিয়তি পরিবর্তন করতে পারে না। তাই বাকের ভাইকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছিল। তাঁর নিয়তি খন্ডন করা যায় নাই। হ্যাঁ, আমি 'কোথাও কেউ নেই' নাটকের বাকের ভাইয়ের কথাই বলছি। নব্বইয়ের দশকের সেই আইকনিক চরিত্র; যার ফ্যাশন, স্টাইল এবং চরিত্রে মুগ্ধ হয়েছিল বাঙলার তরুণ সমাজ।

আজ সেই আইকনিক চরিত্রের স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদের ৭৩ তম জন্মদিন। বাংলা ভাষাভাষী কথাসাহিত্যে তিনি একজন প্রবাদ-পুরুষ। তাঁর লেখা বই প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম্যবধূর কাছেও পৌঁছে গিয়েছে। যে বধূ হয়তো দুপুরের সব কাজ সেরে বিকেলবেলাটায় হুমায়ূন আহমেদের লেখা কোনো গল্পের বইয়ে অবসর খুঁজে পায়। এখনও বইমেলাগুলোতে তাঁর লেখা বইগুলোই বেশি বিক্রি হয়। পাঠকেরা ভিড় করে সেই সব প্রকাশনা'র সামনে, যাদের কাছে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে। কোনো কোনো পাঠক হয়তো এখনও তাঁর একটা অটোগ্রাফের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। কিন্তু তিনি তো এই শঙ্খনীল কারাগার থেকে চলে গেছেন অনেক অনেক দূরের কোনো দেশে। যে দেশের ভাষা আমরা জানি না।

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'নন্দিত নরকে'। প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। যে গল্পে তিনি এঁকেছেন একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্নার ছবি। যে গল্পে ফুটে উঠেছে মধ্যবিত্ত পরিবারের টিকে থাকার লড়াইয়ের গল্প। যদিও 'নন্দিত নরকে' প্রথম প্রকাশিত বই, তবে লেখকের প্রথম লেখা উপন্যাস ছিল 'শঙ্খনীল কারাগার'। ১৯৭৩ সালে এই বইটি প্রকাশিত হয়। বই দুইটার চরিত্রের নামগুলো যদিও অভিন্ন, তবে গল্পের ট্রাজেডি ভিন্ন। হুমায়ূন আহমেদের লেখা এই উপন্যাস দুইটা ক্লাসিকের পর্যায়ে চলে গেছে। তাঁর লেখা অন্যতম মাস্টারপিস বই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে লেখা 'জোছনা ও জননীর গল্প'।

হুমায়ূন আহমেদ, যিনি একাধারে কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা। যিনি শিল্পের যে শাখাতেই হাত দিয়েছেন, সেই শাখাতেই ফলিয়েছেন সোনা। তিনি বাংলা সাহিত্যে সংলাপধর্মী কথাসাহিত্যের জনক। সহজ সরল ভাষায় পাঠকের হৃদয়ের মনিকোঠায় তিনি পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট অমর চরিত্র হিমু এবং মিসির আলী'র গল্পে গল্পে পাঠককে বারবার তিনি বিভ্রান্ত করেছেন। আরেক অমর চরিত্র শুভ্র'র মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীর শুদ্ধতম মানুষের ছবি এঁকেছেন। যে শুভ্র হাই-মাইওপিয়া রোগে আক্রান্ত। যে শুভ্র চশমা ছাড়া চোখে দেখে না। সেই দুর্বল চোখে হুমায়ূন আহমেদ দেখিয়েছেন পৃথিবীর শুদ্ধতাকে।

কথাসাহিত্যের সংলাপধর্মী বৈশিষ্ট্যকে বলা যায় হুমায়ূন আহমেদের একই সাথে শক্তি এবং দূর্বলতার জায়গা। সমালোচকদের মতে, কথাসাহিত্য আরো বেশি বর্ণনার দাবি রাখে। অথচ হুমায়ূন আহমেদ তাঁর লেখায় অনেক বেশি সংলাপ ব্যবহার করে কথাসাহিত্যের সেই বর্ণনাধর্মী বৈশিষ্ট্যকে উপেক্ষা করেছেন। যে কারণে সমালোচকরা বলে থাকেন, হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়েছেন।

তাঁর সৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্র হিমু; যে চরিত্র খুব সহজেই তরুণ পাঠকদের আকর্ষন করে। অথচ হিমু চরিত্রের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হচ্ছে এই চরিত্র অতিমাত্রায় খামখেয়ালি, বাস্তবতাহীন এবং বিভ্রান্তিকর। সমালোচকদের মতে সংলাপধর্মী লেখার কারণে তিনি যেমন সহজেই নতুন পাঠকদের আকর্ষন করেছেন, ঠিক একইভাবে পাঠকদের ক্ষতির মুখেও ফেলেছেন। কেননা বহুসংখ্যক নতুন পাঠকই সংলাপধর্মী সহজ-সরল গদ্য পাঠের পর বর্ণণাধর্মী গদ্যের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে। যার ফলে হুমায়ূন আহমেদের নতুন পাঠক হয়তো সৃষ্টি হয় ঠিকই, কিন্তু সেই পাঠক অন্যান্য মহান সাহিত্য পাঠের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করে। যা সত্যিকার অর্থেই সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকর।

সমালোচকরা বলে থাকেন, হুমায়ূন আহমেদের প্রথম দিককার লেখাগুলো বেশ খানিকটা সাহিত্যগুণসম্পন্ন থাকলেও, জনপ্রিয় হয়ে উঠার পরের দিককার লেখাগুলো আর তেমন সাহিত্যগুণসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে নাই। হুমায়ূন আহমেদের রাজনীতি-সচেতনতা নিয়েও সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলে থাকেন।

হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্টি করে গেছেন জনপ্রিয় অসংখ্য নাটক। জনপ্রিয় নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে 'আজ রবিবার', 'বহুব্রীহি', 'নক্ষত্রের রাত' ইত্যাদি। তবে এখানে 'পুষ্পকথা' নাটকের কথা উল্লেখ না করলে হয়তো এই এত এত কথা বলাটা বৃথা হয়ে যাবে। তিনি এই নাটকে সকল নেগেটিভ চরিত্রের মাথার ভিতর পোকা ঢুকিয়ে দেন। যে পোকা সেই খারাপ মানুষটাকে ভালো হতে বাধ্য করে। এই যে হাস্য-পরিহাসের মাধ্যমে প্রতীকীভাবে তিনি পুষ্পের পোকা'র চরিত্রকে সৃষ্টি করেছেন তা তো আসলে মানুষেরই বিবেক। মানুষের বিবেকের চেয়ে বড় কোনো আদালত তো এই পৃথিবীতে নাই।

যাই হোক, হুমায়ূন আহমেদ চলে যাবার পর এখনও একটা দশক পুরো শেষ হয়নি। তিনি এখনও প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। আর আগামী দিনের সময়ই বলে দেবে কতদিন পর্যন্ত তিনি বাংলাসাহিত্যে প্রাসঙ্গিক থাকতে পারবেন। সাহিত্যে কতদিন প্রাসঙ্গিক থাকবেন তা বলা না গেলেও বাংলা-নাটকের জন্য তিনি হয়তো বহুকাল প্রাসঙ্গিক থেকে যাবেন।

তবু এ কথা অনস্বীকার্য, হুমায়ূনের মৃত্যুর শূন্যতা কাটিয়ে বাংলা সাহিত্য-নাটক এখনও আপন ছন্দে ফিরতে পারেনি। তার জন্য জমে থাকা সেই প্রেম, সেই মোহগ্রস্ত পাঠ এখনও অন্য কারো জন্য হয়তো তৈরি হয়ে ওঠেনি। মানুষকে বদলে দেয়ার সুক্ষ সেই কারুকাজ, সাধারণের মনকে বদলে দেয়ার, প্রভাবিত করার সেই জাদুকরী ক্ষমতা নিয়ে এখনও হয়তো কেউ আসেনি তারপর। কথার সেই জাদুকরের প্রস্থান এখনও বাঙালির জন্য হাহাকারের কারণ।

জাগতিক সংকট ও জটিলতাগুলোকে সহজ করে দেখাবার মানুষটা নেই। কিন্তু আমরা জানি তিনি এসেছিলেন, ছিলেন আমাদের মাঝেই, এই শঙ্খনীল কারাগারে আমরা এখনও আপনাকে খুঁজে ফিরি।

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

ছবি: সংগৃহীতকিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর সম্মাননা পেলেন ছয় কীর্তিমান

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান করেছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান।

এতে সম্মাননা বক্তৃতা করেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ।

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

 এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।


অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সমাজকর্মী আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে।

;

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্য রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে: ড. মাহফুজ পারভেজ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

বক্তব্য রাখছেন ড. মাহফুজ পারভেজ

  • Font increase
  • Font Decrease

বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন'র নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ বলেছেন, 'বাংলার গৌরবদীপ্ত জনপদ কিশোরগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিকাশ ও রক্ষায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রয়েছে।'

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম স্মরণ, দোয়া ও ইফতার মাহফিল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি সম্মাননা বক্তব্য প্রদানকালে আরো বলেন, 'অবক্ষয়, অন্ধকার ও অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে আলোকিত সমাজ গঠনে ইতিহাস-ঐতিহ্যের শিক্ষা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।'

বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ্ব ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক স্থানীয় ছয় কীর্তিমানকে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক লাইজু আক্তার।

মাজহারুন-নূর সম্মাননা অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক বাদল রহমান।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলু, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি আবদুর রহমান রুমী, সাংবাদিক শেখ মাসুদ ইকবাল, সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, মহিলা পরিষদ সম্পাদক আতিয়া রহনান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এতে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও নানা শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, মহিলা পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক, সাহিত্য সম্পাদক বাবুল রেজা, ছড়াকার সামিউল হক মোল্লা, ঈসাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান বদরুল হুদা সোহেল, কিশোরগঞ্জ নিউজ প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননাপ্রাপ্তদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের আইনপেশার কৃতীজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হক।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ পেয়েছেন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসিরউদ্দিন ফারুকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, প্রবীণ সাংবাদিক মু আ লতিফ ও আলীমুদ্দীন লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. কামাল উদ্দিন সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন এবং প্রয়াত শাহ আজিজুল হকের পরিবারের পক্ষে ভাতিজা এডভোকেট শাহ আশরাফ উদ্দিন দুলাল ও মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ উষা রাণী দেবীর পক্ষে তার মেয়ে অধাপিকা গৌরি রাণী দেবী সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।

সম্মননা অনুষ্ঠান শেষে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রত্নগর্ভা নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে স্মরণ সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ইফতারের পূর্বে দোয়া পরিচালনা করেন জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাডভোকেট গাজি এনায়েতুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন সংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু। অনুষ্ঠানে স্পন্সর হিসাবে যুক্ত ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ২০১৫ সাল থেকে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

;

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান



কনক জ্যোতি,  কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

কলকাতায় বিশ্ব কবিতা দিবসের অনুষ্ঠান

  • Font increase
  • Font Decrease

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসে ছায়ানট (কলকাতা) এবং লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস যৌথভাবে আয়োজন করে একটি কবিতা সন্ধ্যার। অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতায় অবস্থিত একটি স্প্যানিশ রেস্টুরেন্ট তাপাস্তে - তে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ছায়ানট (কলকাতা)-এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক এবং পরিকল্পনা করেন  লা কাসা দে লোস পলিগ্লোতাস-এর প্রতিষ্ঠাতা শুভজিৎ রায়।

এই বিশেষ দিনে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করা হয় বাংলা এবং স্প্যানিশে। বিশ্ব কবিতা দিবসে কবিতার ভাষায় এক হয়ে যায় বাংলা এবং স্পেন। এক করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা এবং স্প্যানিশ দুই ভাষাতে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এই আয়োজন।

বাংলায় কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করেন সৌভিক শাসমল, তিস্তা দে, দেবলীনা চৌধুরী এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ ও পাঠ করেন শুভজিৎ রায়। অনুষ্ঠানটি দর্শকদের প্রশংসা লাভ করে।

বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষ্যে ছায়ানট (কলকাতা) এবং কৃষ্ণপুর নজরুল চর্চা কেন্দ্র যৌথভাবে আরও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শরৎচন্দ্র বাসভবনে। প্রায় ৫০ জন কবি এবং বাচিক শিল্পী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন কবির কবিতা এই অনুষ্ঠানে শোনা যায়।

;

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;