চাকরি আগে, জীবন পরে

  • সোহেল মিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ক'দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোশাক শ্রমিকদের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফেরা এবং পুনরায় বাড়ি ফেরার কয়েকটা ছবি বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ছবিগুলো দেখেই মনে হয়েছে আমরা কী একবিংশ শতাব্দীতে এসে অমানবিক হয়ে যাচ্ছি? বিবেকবর্জিত একটি পৃথিবীতে কী আমরা বাস করছি? সমাজ ও সমাজের মানুষের প্রতি আমাদের কোনোই দায়িত্ব বা কর্তব্য নেই। বিবেকের তাড়নায় বিশেষ একটি কারণে আজ এটি লিখতে বসছি।

কারণ হলো, আমার পরিচিত আপনজনসহ বন্ধু মহলের সবাই জানে আমি একজন গণমাধ্যমকর্মী। আর এখন পর্যন্ত সমাজের অবহেলিত নির্যাতিত মানুষগুলোর কাছে শেষ আশ্রয়স্থল হলো গণমাধ্যমকর্মীরা। সেই জায়গা থেকে আমার কলেজ জীবনের গার্মেন্টসকর্মী এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে তাদেরকে নিয়ে কিছু লেখার অনুরোধ করেন।

বিজ্ঞাপন

আমার সেই গার্মেন্টসকর্মী বন্ধু যা কিছু লিখতে বলেছেন তার সারমর্ম হলো- পৃথিবীতে আমাদের মতো মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। নিজের পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি বিশ্বের চোখে আমরা এক আজন্ম পাপী। আমাদের জন্মই শুধু মানুষকে ভালো রাখার জন্য।

আমরা সমাজকে শুধু দিতে এসেছি। সমাজ থেকে আমরা কিছু পেতে পারি না, এমন কি আশাও করতে পারি না। যাদের রক্তের অক্লান্ত পরিশ্রমের ঘামে একটি দেশের পোশাক শিল্প সারা বিশ্বের বুকে সুনাম অর্জন করছে সেই সকল পোশাক শ্রমিকদের প্রতি অমানবিক আচরণের কোনো জবাবদিহিতা নেই। রাষ্ট্রের কাছে আজ আমরা অবহেলিত। আমাদেরকে নিয়ে সবাই খেলতে পছন্দ করে। তা নাহলে কেন আমাদের সাথে এরকম আচরণ করা হচ্ছে?

বিজ্ঞাপন

করোনার সংক্রমণ রোধের জন্য সরকার ছুটি ঘোষণা করার পরও আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়- চাকরি করতে হলে আসতে হবে। তাই কি আর করা। গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমরা পোশাক শ্রমিক যার যার কর্মস্থলে যথাসময়ে পৌঁছে যাই। কিন্তু পৌঁছানোর পর গিয়ে দেখি বড় বড় অক্ষরে নোটিশে লেখা- ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এবার কি করতে পারি আমরা?

কি আর করার আছে। আবার সেই ঝুঁকি নিয়ে গ্রামে ফেরা। বন্ধ গণ পরিবহন। স্বাধীন দেশে আবার যুদ্ধ করতে করতে এক অভাগা পোশাক শ্রমিকের বাড়ি ফেরা। তবে এ যুদ্ধ শত্রুর সাথে নয়, এ যুদ্ধ নিজের সাথে নিজের। কারণ একদিকে জীবন, অন্য দিকে চাকরি টিকিয়ে রাখা। বেঁচে থাকার জন্য চাকরিটা খুবই প্রয়োজন। তাই আমাদের কাছে চাকরিই আগে, জীবন পরে!

গার্মেন্টসে চাকরি করা এই বন্ধুর প্রতিটা শব্দ আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। আমরা কি সত্যি দিনদিন অমানবিক হয়ে যাচ্ছি? যাদের শ্রমে আজ দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে, সেই মানুষগুলোর জন্য আমরা কতটুকু সহানুভূতি দেখাতে পারছি। আমাদের কাছে কি তাদের শ্রমের কোনো মূল্যেই নেই? আমরা কি পারি না- আমাদের জং ধরা হৃদয় দিয়ে তাদেরকে একটু শ্রদ্ধা করতে?

সোহেল মিয়া: স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম