দেশি মুরগি পালনে শামীমের ভাগ্য বদল
এক বছর আগেও বেকার ছিলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কালীপুর মধ্যমতরফ এলাকার বাসিন্দা শামীম আলভী। কিন্তু এখন তিনি পুরোদস্তুর খামারি। দেশি মুরগির খামার করে ভাগ্য বদলে গেছে তার।
জানা গেছে, বেকারত্ব ঘোচাতে ঢাকায় মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নেন শামীম। প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে দেশি মুরগির খামার দেন। প্রথমে ২০ হাজার টাকায় ২০০ দেশি মুরগির বাচ্চা তোলেন। তিন মাস লালন-পালন করে ওই মুরগি বিক্রি করেন ৬০ হাজার টাকা। সেই থেকে শুরু, এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে উপজেলা শহরে জমি ভাড়া নিয়ে দেশি মুরগির খামার করেছেন তিনি। তার খামার থেকে দেশি মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মাংসের মুরগি উৎপাদন করে বাণিজিক্যভাবে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।
রোববার বার্তাটোয়ন্টিফোর.কমকে নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প বলেন কে আই এগ্রো ফার্মের পরিচালক শামীম আলভী।
সরেজমিনে কে আই এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, নেটে ঘেরা টিনশেড ঘরে দেশি মুরগি লালন-পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম শেডে ছোট মুরগির বাচ্চা, দ্বিতীয় শেডে ডিম পাড়া মুরগি এবং তৃতীয় শেডে মোরগ। তবে মোরগগুলো বিক্রির জন্য নয়, খামারের উন্নত মানের ডিম উৎপাদনের জন্য। ওই ডিম দিয়ে খামারে বাচ্চা ফোটানো হয়।
শামীম আলভী বলেন, ‘খামারে উৎপাদিত ডিম খাওয়ার জন্য নয়, বাচ্চা উৎপাদনের জন্য বিক্রি করা হয়। প্রতিটি বীজ ডিম ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর ডিম থেকে ফুটানো বাচ্চা প্রতি পিছ ৪০ টাকা বিক্রি হয়।’
জানা গেছে, ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য নিজে বৈদ্যুতিক ইনকিউবেটর আবিষ্কার করেছেন শামীম। খামারের ডিম ইনকিউবেটরে ফুটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে তিনি ইনকিউবেটরও বিক্রি করেন। প্রতিটি ইনকিউবেটরের দাম রাখা হয় ২৭ হাজার টাকা।
ইনকিউবেটরে ডিম থেকে ফুটানো বাচ্চা বিক্রির পাশাপাশি নিজ খামারে তিন মাস পালন করেন শামীম। খাওয়া ও পরিচর্যা বাবদ প্রতিটি বাচ্চার পেছনে প্রায় ১১০ টাকার মতো খরচ হয়। কিন্তু বিক্রি হয় ৩০০-৩৫০ টাকা।
শামীম আরও বলেন, ‘ব্রয়লার, সোনালি ও কক মুরগি পালনের চেয়ে দেশি মুরগি পালন অনেক সাশ্রয়ী। কারণ, দেশি মুরগিগুলো আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে উপযোগী। তাছাড়া খুব বেশি রোগ হয় না। তাই খামরিদের আর্থিক ক্ষতির সম্ভবনা কম থাকে।’
বছর খানেক আগে বিশ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করা শামীমের খামারে এখন দুই লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন বয়সী মুরগি রয়েছে। পাশপাশি স্থানীয় ২৭টি খামারেও মুরগির বাচ্চা ও ডিম সরবরাহ করেন শামীম। প্রতিমাসে সব বাদ দিয়ে তার ত্রিশ হাজার টাকা লাভ থাকছে।
দেশি মুরগি পালন করে শামীমের স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি অনুপ্রাণিত করেছেন স্থানীয় অনেক বেকার যুবকদের। তাদেরই একজন সহনাটি গ্রামের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘শামীম ভাইয়ের পরামর্শে আমি বাড়িতে দেশি মুরগির খামার করে মুনাফা করছি। এখন নিজেই নিজের পড়াশোনার খরচ চালাই।’