করোনার প্রভাবে রফতানি আয়ে বড় ধস
করোনা ভাইরাসপৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। চীনসহ বেশকিছু দেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে পণ্য রফতানি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা কোনটাই স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এদিকে একক মাস হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার।
ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার।
চলতি অর্থবছর প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই আট মাসে রফতানি আয় এসেছে ২ হাজার ৬২৪ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার। সে হিসেবে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে রফতানি আয় ও লক্ষ্যমাত্রা কোনটাই পূরণ হয়নি।
জানুয়ারিতে মোট রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। একই সঙ্গে ১ দশমিক ৮০ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে।
জানা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয় এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রফতানি থেকে আয় অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ২ হাজার ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। সে হিসেবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত আট মাসে নিট পোশাক রফতানি থেকে আয় এসেছে ১ হাজার ৮৯ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। পাশাপাশি ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ওভেন পোশাকে।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রা ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ১২ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত অর্থবছর জুড়েও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
এদিকে গত আট মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩ দশমিক ৯১ শতাংশ কম।
গত ৭ মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৫২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই ফেব্রুয়ারি মাস শেষে কৃষি পণ্য রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।