ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে
করোনা ভাইরাসকরোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞরা করোনার সর্বশেষ এ ধরনে মানুষের শরীরে কতটা প্রভাব ফেলছে, তা জানতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিশেষ করে যারা এখনো করোনার টিকা নেয়নি, তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
গত শুক্রবার প্রকাশিত একটি অ্যভন্তরীণ প্রতিবেদন অনুসারে—যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সর্তক করেছে যে, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভারতীয় ডেল্টা ধরন আগের চেয়ে বেশি সংক্রামক। খবর রয়টার্সের।
সংস্থাটি কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং স্কটল্যান্ডে গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছে যে, ডেল্টা সংক্রামিত ব্যক্তিরা মহামারির শুরুর সময়ের রোগীদের তুলনায় বর্তমানে রোগীরা হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন- এ তিনটি দেশের গবেষণা ডেল্টা ধরণের বেশি ঝুঁকির ধারণা দিচ্ছে। কিন্তু এই গবেষণার জনসংখ্যা সীমিত এবং বাইরের বিশেষজ্ঞ দ্বারা এটা পর্যালোচনা করা হয়নি।
ডেল্টায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা ডাক্তাররা বলেছেন, করোনার ডেল্টা ধরণে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীদের অবস্থা গুরুত্বর আকার ধারণ করে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মহামারিবিজ্ঞান গবেষণায় অনেক বেশি মানুষের মধ্যে ফলাফল তুলনা করার জন্য আরও বেশি গবেষণা করা প্রয়োজন।সিডিসি রিপোর্ট অনুসারে ডেল্টা চিকেনপক্সের মতো সংক্রামক এবং সাধারণ সর্দি বা ফ্লুর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক।
সান দিয়েগোর লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজির ভাইরোলজিস্ট শেন ক্রোটি বলেছেন, স্কটল্যান্ডের গবেষণায় দেখা গেছে যে করোনার ডেল্টা ধরণ আরও অনের রোগের কারণ হতে পারে। এমনকি ডেল্টা আগের ধরণগুলোর তুলনায় হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর বেশিরভাগই এমন লোকদের মধ্যে ঘটছে যাদের টিকা দেওয়া হয়নি। কিন্তু বয়স্ক ও ইমিউন সিস্টেম কম যাদের তারাও আক্রান্ত হচ্ছে।
মায়ো ক্লিনিকের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. গ্রেগরি পোল্যান্ড বলেছেন, টিকা নেয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হলে বেশিরভাগই উপসর্গহীন এবং হালকা সমস্যার সম্মুখীন হবে। গুরুতর অসুস্থতার হার, বিশেষত যেসব অঞ্চলে টিকা দেওয়ার হার কম, সেগুলো আবার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদেরকে মহামারির প্রথম সারিতে চাপিয়ে দিচ্ছে।
কলোরাডোর ইউসি হেলথের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সিনিয়র মেডিকেল ডিরেক্টর ড. মিশেল ব্যারন বলেছেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ক্যাম্প ফায়ার নয়, এটি দাবানলের মতো। এটি আগুনের শিখার মতো ছড়িয়ে পড়ছে।’
ব্যারন বলেন, চীনা গবেষণায় বলা হয়েছে যে—ডেল্টা ধরণ অনেক দ্রুত সংক্রামিত হয় এবং এটি শরীরে এক হাজারগুণ বেশি ভাইরাস উৎপন্ন করে। যা মূল স্ট্রেনের তুলনায় এই নতুন ধরনে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদের সংকেত দেয়।
আমেরিকান ফ্যামিলি কেয়ারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ড. বেঞ্জামিন বার্লো বলেছেন, ‘ডেল্টা ধরণে করোনা রোগীদের বেশিরভাগই অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে।’
আলাবামার বার্মিংহামে তার ক্লিনিকে বার্লো বলেছেন, ‘কয়েক সপ্তাহ আগেও ভারতের ২-৩ শতাংশ মানুষ করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু এখন তা ২০ শতাংশে পৌঁছেছে।’
ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের এইডস ভ্যাকসিন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ল্যাবরেটরির পরিচালক ডেভিড মন্টেফিওরি বলেন, ‘ডেল্টা ভেরিয়েন্টটি আরও সংক্রামক এবং রোগের দ্রুত সূত্রপাত ঘটায়—বিশেষত যারা টিকা নেননি তাদের মধ্যে।’