যৌন হেনস্তা ইস্যুতে তোলপাড় মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রি, মোহনলালের পদত্যাগ

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সুপারস্টার মোহনলাল, অভিনেত্রী মিনু মনির ও সোনিয়া মালহার

সুপারস্টার মোহনলাল, অভিনেত্রী মিনু মনির ও সোনিয়া মালহার

যৌন হেনস্তা ইস্যুতে মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতেও শুরু হয়েছে তোলপাড়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাসোসিয়েশন অব মালায়ালাম মুভি আর্টিস্টের (এএমএমএ) প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বরেণ্য অভিনেতা মোহনলাল। সংগঠনটির কয়েকজন সদস্যর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠায় নৈতিক কারণে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ‘দৃশ্যম’খ্যাত এই অভিনেতা।

মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে নারীদের যৌন হেনস্থা করা হয়, তা বেরিয়ে এসেছে সরকারি একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। হেমা কমিটির এই রিপোর্ট ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে কেরালা, যার ঢেউ ভারতের অন্যত্রও দেখা গিয়েছে। যৌন হয়রানির অভিযোগে এখন পর্যন্ত মোট ১৭টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে যা মালয়ালম চলচ্চিত্র শিল্পকে নাড়া দিয়েছে এবং মালায়ালাম মুভি আর্টিস্টদের সমিতি ভেঙে দিয়েছে। বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র তারকা ও চলচ্চিত্র নির্মাতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন
অভিনেত্রী সোনিয়া মালহার

সর্বশেষ অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিনেত্রী সোনিয়া মালহার। তার অভিযোগ, যে এক অভিনেতা তাকে ২০১৩ সালে একটি ছবির সেটে শ্লীলতাহানি করেছিলেন। ‘মি টু’ ঝড় মোকাবেলা করার জন্য কেরালা সরকার দ্বারা গঠিত বিশেষ তদন্ত দলের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিনেত্রী। তবে তিনি এই অভিযোগের সঙ্গে অভিনেতা জয়সুরিয়ার সংযোগ না খোজার জন্য অনুরোধ করেছেন গণমাধ্যমকে।

অভিনেত্রী মিনু মুনির, যিনি এর আগে অভিনেতা এম মুকেশ, জয়সুরিয়া, মানিয়ানপিল্লা রাজু এবং ইদাভেলা বাবুর বিরুদ্ধে সিনেমার শুটিং চলাকালীন যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেছিলেন, বলেছেন যে তিনি মুখ খোলার পরে হুমকি বার্তা পাচ্ছেন। গত সন্ধ্যায়, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি হুমকি দেয়া বার্তার স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন।

বিজ্ঞাপন

এনডিটিভির সাথে একটি কথোপকথনে, মুনির তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘একটি চলচ্চিত্রের শুটিং করার সময় আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমি টয়লেটে গিয়েছিলাম এবং যখন আমি বাইরে আসি, তখন জয়সুরিয়া আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন এবং আমার সম্মতি ছাড়াই আমাকে চুম্বন করেন। আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমি দৌড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম।’ এছাড়াও অভিনেতা তাকে আরও কাজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন যদি তিনি তার সাথে থাকতে ইচ্ছুক হন।

অভিনেত্রী মিনু মুনির

অভিনেত্রী আরও অভিযোগ করেছেন, প্রাক্তন এএমএমএ সেক্রেটারি ইদাভেলা বাবু তাকে সদস্যপদ পেতে সাহায্য করার নামে ফ্ল্যাটে ডেকেছিলেন এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন।
তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে ক্ষমতাসীন সিপিএমের বিধায়ক অভিনেতা মুকেশের অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরে তাকে সদস্যপদ দেয়া হয়নি।

সাক্ষাৎকারে মিনু মুনির বলেন, ‘মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর শোষণ হচ্ছে। আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগী। আমি যখন চেন্নাইতে চলে আসি, তখন কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি, কী হয়েছে?’

মুনিরের অভিযোগের জবাবে, মুকেশ বলেছেন সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। অভিনেতা দাবি করেছেন যে মুনির অতীতে তার কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছিলেন এবং তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেছিলেন।

সুপারস্টার মোহনলাল

গত সপ্তাহে হেমা কমিটি মালায়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্তা, কাস্টিং কাউচ, বেতন বৈষম্য, শোষণের তথ্য প্রকাশ করে। ২৩৫ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে সিনিয়র অভিনেতা ও নির্মাতাদের যৌন হেনস্তার বিষয়গুলো প্রকাশ করা হয়। হেমা রিপোর্ট প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং অভিযোগগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গঠিত হয়েছে সাত সদস্যের তদন্ত দল।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি