মৌমাছির সঙ্গে দিন-রাত কাটিয়ে জীবিকা নির্বাহ

  • গনেশ দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বগুড়া, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

নেই কোনো প্রশিক্ষণ, নেই সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তার পরও ফসলের মাঠ থেকে কৃত্রিম চাষে মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বগুড়ার শতাধিক মানুষ। আর এ জীবিকার টানে ফসলের মাঠে তাবু টাঙিয়ে মৌমাছির সঙ্গে দিন-রাত কাটাচ্ছে অনেকেই। সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার পরও মৌচাষিদের সংগৃহীত মধু স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পর যাচ্ছে ভারতেও।

এখন সরিষার ভরা মৌসুম চলছে। মাঠে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি চাষ করা হচ্ছে সরিষা। যে এলাকায় সরিষার চাষ বেশি, সে সব এলাকায় মাঠের পর মাঠ সরিষার ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ। পাশাপাশি বিস্তীর্ণ এলাকা হলুদ রঙে সমারোহ।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল গ্রামের সরিষা মাঠে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন করছেন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ভাটবেড়া গ্রামের নুরবক্স, আব্দুল আলীম এবং শফিকুল ইসলাম। সরিষার জমির পাশে ১১০টি মৌমাছির বাক্স সাজিয়ে রেখেছেন তারা। এর পাশে তাবু টাঙিয়ে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে তিনজনের। তাবুর ভেতরেই চলছে রান্না এবং খাওয়ার ব্যবস্থা।

বিজ্ঞাপন

নুরবক্স জানান, পাঁচ বছর আগে ৫০ হাজার টাকায় ২০ বাক্স মৌমাছি কিনে মধু সংগ্রহের ব্যবসা শুরু করেন। এখন মৌমাছি হয়েছে ১১০ বাক্স। এরমধ্যে দুই দফায় আরও ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। ব্যবসার সহযোগী হিসেবে সঙ্গে আছেন প্রতিবেশী আব্দুল আলীম এবং শফিকুল ইসলামকে।

তিনি আরও জানান, সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ দিন। সরিষার মৌসুমে তারা পাঁচ মণ মধু সংগ্রহ করবেন। এরপর চলে যাবেন শরিয়তপুর ও মাদারীপুর এলাকায়। সেখানে ধনিয়া এবং কালোজিরার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করবেন। এরপর লিচুর মৌসুম শুরু হলে দিনাজপুর এবং নাটোর এলাকায় লিচু বাগান থেকে মধু সংগ্রহ করবেন। তবে প্রতিবছর আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত তাদেরকে বসে থাকতে হয়। এ সময় মৌমাছি পালন করতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার চিনি কিনতে হয়।

বিজ্ঞাপন

নুরবক্স জানান, এসব বিষয়ে তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এ কারণে সংগ্রহ করা অধিকাংশ মধু মাঠ থেকেই বিক্রি করে দেন। ভারতের ব্যবসায়ীরাও আসেন তাদের কাছ থেকে মধু কিনতে। মৌসুমের শুরুতেই দাম নির্ধারণ করে আগাম টাকাও দিয়ে যায় বিভিন্ন কোম্পানি। প্রশিক্ষণ না থাকায় মৌমাছির বিভিন্ন রোগ ব্যাধির জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদেরকে।

এদিকে ফসলের মাঠ থেকে মধু সংগ্রহের ব্যবসা দিন দিন বাড়তে থাকায় বগুড়ায় গড়ে উঠেছে মৌমাছি সমবায় সমিতি। সমিতির সভাপতি সাহাদত হোসেন বার্তা২৪কে বলেন, ‘আমার সংগঠনে বর্তমানে ৬০ জন ব্যবসায়ী আছেন। এর বাইরে আরও অনেকেই মধু সংগ্রহের কাজ করে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরিষা, ধনিয়া, কালোজিরার মতো ফসলের চাষ দিন দিন কমে যাওয়ায় সংগ্রহ করা মধুর পরিমাণও দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ বছর আমরা পাঁচ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র নিয়ে কাজ করছি।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস বার্তা২৪কে বলেন, ‘মৌমাছি চাষিদের নিয়ে কৃষি বিভাগ এখনো কাজ শুরু করেনি। চলতি মৌসুমে জেলার ১২ উপজেলায় ২৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হচ্ছে। তবে বগুড়ার বিভিন্ন ফসলের মাঠে ১ হাজার ৭২৫টি মৌমাছির বাক্স রয়েছে বলে শুনেছি।’