আনন্দবাজার পত্রিকার সেই অবিস্মরণীয় সম্পাদকীয় ‘পাক বিধান’



সম্পাদকীয় বিভাগ, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৪৭ সালে ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামক যে দু’টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়, স্বল্প সময়েই এর প্রবক্তাদের উচ্চাশা কোটি কোটি অধিবাসীদের দুরাশায় পরিণত হয়। বিশেষ করে পূর্ববঙ্গকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ করে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়, তা পাকিস্তানি শাসকদের সীমাহীন অবিচার আর দুঃশাসনে এক নব্য ঔপনিবেশিক শাসনের চরিত্র ধারণ করে। ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ ধ্বনিতে মোহিত করা অধুনা পূর্ববঙ্গবাসীর আকাঙ্খা বছর গড়াতেই দুঃস্বপ্নের রূপ নেয়। শুরু হয় নব্যঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসকদের কবল থেকে নিজেদের স্বাধিকার আদায়ের প্রাণান্তর চেষ্টা। আমরা জানি, পূর্ববঙ্গের ন্যায্যতা প্রশ্নে উদাসীন পিন্ডির শাসকদের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে গড়ে উঠা প্রতিরোধ আন্দোলন ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবির মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত পরিণতি পায়। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে পরবর্তী বছরগুলোতে আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে বাংলা। ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ‘মুক্তিযুদ্ধে’ ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে ও দুই লক্ষ নারীদের চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত হয় চূড়ান্ত মুক্তি।

আজ ঐতিহাসিক ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আমরা জানার চেষ্টা করব ঊনসত্তরের উত্তাল দিনগুলিতে স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল বাঙালি জাতি কি আত্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে মুক্তিসংগ্রামের পথে ধাবিত হয়েছিল। ১০ চৈত্র ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ (২৪ মার্চ ১৯৬৯) কলকাতার ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ তাদের সম্পাদকীয় পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেছে সেই সময়কার দৃশ্যপট। স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ আয়োজনে বার্তা২৪.কম পুনঃপ্রকাশ করছে আনন্দবাজার পত্রিকার সেই অবিস্মরণীয় সম্পাদকীয়।

গত চার মাস ধরিয়া পাকিস্তানে যে তুলকালাম কা- চলিয়াছে নানা জন নানা ভাবে তাহার ব্যাখ্যা করিতে চাহিবেন এটাই স্বাভাবিক। কেহ বলিতেছেন, পাকিস্তান আর একটি বিয়াফ্রা বা ভিয়েৎনাম সৃষ্টি হইতে চলিয়াছে। মৌলানা ভাসানিরও মনে হয় তাহাই অভিমত, তিনি গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়াছেন, বলিয়াছেন, সে মহৎ কর্মে কুড়িলক্ষ পাকিস্তানীর জান কোরবানি করিতে তিনি তৈয়ার। লারকানরি আমুদে-যুবা ভুট্টো ‘প্লেবয়’ হিসাবে খ্যাত হইলেও আগুন লইয়া খেলায় কতখানি মাতিবার সামর্থ্য রাখেন, সে বিষয়ে অনেকেরই বিলক্ষণ সন্দেহ। বিশেষতঃ, পশ্চিম পাকিস্তানে শুধু ফৌজীদের ঘাঁটি নয়, মওদুদি তথা মোল্লাদেরও ছাউনি পড়িয়াছে। শুধু ভুট্টোর ধারণা নাকি পাকিস্তানে ‘বিপ্লব’ চলিয়াছে, এবং এ বিপ্লব যদিও অন্তরে ঐশ্লামিক, লক্ষ্যে-সমাজতান্ত্রিক।

চারিদিকে সকলের মুখে মুখে যখন ‘‘বিপ্লবের’’ ফুলঝুরি, তখন পাক-আইনমন্ত্রী সৈয়দ মহম্মদ জাফর অনায়াসে প্রস্তাবিত শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিগুলিকেও আখ্যা দিতে পারিতেন-‘‘বিপ্লব’’। একসঙ্গে শাসনতন্ত্রের নব্বুইটি অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের চিন্তা আপাতদৃষ্টিতে নিশ্চয়ই প্রকৃতিতে বিপ্লবাত্মক। ১৯৫৮ সনের অক্টোবরে আয়ুব যখন আচমকা গদীয়ান হন , সে ঘটনা অন্যের চোখে বিশুদ্ধ সামরিক অভ্যুত্থান হইলেও পাকিস্তানে বলা হয় ‘অক্টোবর রিভলিউশন’, আইনমন্ত্রী নির্দ্বিধায় ফেডারেল ব্যবস্থা নামক বিলটির নাম দিতে পারিতেন ‘‘মার্চ রিভলিউশন’’-আয়ুব এক জনমে দুইটি বিপ্লবের কৃতিত্ব লাভ করিতেন!

জাফর সাহেব আয়ুব খাঁর তরফ হইতে যে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের কথা শুনাইয়াছেন তাহার সারমর্মঃ পাকিস্তান এক যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হইবে। সরকার পরিচালনা করিবেন মন্ত্রিসভা; তাহার শীর্ষে থাকিবেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতিও থাকিবেন একজন, তবে তিনি থাকিবেন রবার স্ট্যাম্প মাত্র। তাঁহাকে নির্বাচন করিবেন রাজ্য আইনসভার সদস্যবৃন্দ। অন্যরা সকলে প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে নির্বাচিত হইবেন, ইত্যাদি কথাবার্তার ধরণ দেখিয়া মনে হইতে পারে চৌদ্দমাস ধরিয়া বিস্তর কাঠখড় পোড়াইয়া মাথা খাটাইয়া ১৯৬২ সনে আয়ুব যে শাসনতন্ত্র তাঁহার দেশকে উপহার দিয়েছিলেন সেটির খোলনলচে বুঝি সবই পাল্টাইতে চলিয়াছে। বলা হইয়াছে পরিকল্পিত নূতন শাসনতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যÑইহা এককেন্দ্রীয় নয়, ফেডারেল বা যুক্ত রাষ্ট্রীয়; দ্বিতীয়ত ইহাতে স্বায়ত্বশাসনের অধিকার স্বীকৃত, তৃতীয়ত স্বীকৃত জনসাধারণের ভোটাধিকারের দাবিও।

শেষোক্ত অধিকারটি নিশ্চয়ই পাক নাগরিকদের কাছে মস্ত পাওনা, এক যুগেরও পরে তাঁহারা একটি মৌলিক অধিকার পাইতে চলিতেছেন। এবিষয়ে পুনর্বিবেচনা করিয়া দেখিবার জন্য আয়ুব অবশ্য ১৯৬৩ সনে একটি কমিশন বসাইয়াছিলেন। তাহারাও বলিয়াছিলেন-প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার মানিয়া লওয়া সঙ্গত। আয়ুব তাহাতে রাজী হইতে পারেন নাই, আর একটি কমিটী বসাইয়া সিদ্ধান্তটিকে নিজের পছন্দসই করাইয়া লইয়াছিলেন। আইনমন্ত্রী জাফর বলিয়াছেন-আগামী মাসেই জাতীয় পরিষদে একটি ‘বিল’ আনিয়া সকলকে ভোটের অধিকার দেওয়া হইবে। ‘‘ঠগের বাড়ির নিমন্ত্রণ: না আঁচাইলে বিশ্বাস নাই’Ñতবু মনে হইতেছে নীট লাভ এইটিই।

যুক্তরাষ্ট্রের যে রূপরেখা মিলিয়াছে তাহাতে মনে হয়, খোল নলচে পালটাইলেও কলকেতে সেই পুরনো তামাকই পুড়িবে। নলটি প্রেসিডেন্টের নয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখে লাগানো থাকিবে-এই যা। প্রথমত, পশ্চিম পাকিস্তানের ‘এক ইউনিট’ কর্তার ইচ্ছায় অতঃপর দুই হইবে হয়তো কিন্তু জনসাধারণের ইচ্ছা অনুযায়ী ‘বহু’ হইতেছে না। দ্বিতীয়ত কেন্দ্রীয় সংসদে সব ত্যাগের সমনাধিকার , অর্থাৎ চলতি নিয়মই বহাল থাকিবে, আসন জনসংখ্যার অনুপাতে বন্টিত হইতেছে। ফলে পূর্বের উপর পশ্চিমীদের আধিপত্য থাকিয়াই যাইবে।

পাক শাসনতন্ত্রে অমুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার অধিকার নাই, নয়া-শাসনতন্ত্রে বাঙালী মুসলমানের পক্ষে সে সম্ভাবনা সামান্য। সাত কোটি বাঙালীর উপর পাঁচ কোটি পশ্চিম পাকিস্তানীর শাসন শোষণ চলিতেই থাকিবে। বিশেষত, পাক সামরিক বাহিনীতে বা দেশরক্ষা ব্যবস্থায় কোন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি মিলে নাই। পাকিস্তানের সামরিক খরচ বাজেটের শতকরা ষাট ভাগের বেশী সেখানে টাকা দিতে হয় পূর্ব পাকিস্তানকেও কিন্তু বাহিনীতে তাহার ভূমিকা নামমাত্র। পশ্চিম পাকিস্তান তাহার আসল বল হাতের ওই মুগুরটি হাতছাড়া করিবে কি?

খাঁটাইয়া দেখিলে সন্দেহ থাকে না, আয়ুব স্বায়ত্বশাসনের ধোঁকা দিতেছেন মাত্র। যে আঞ্চলিক স্বাধীনতার কথা জাফর শুনাইয়াছেন, অন্য ভাষায় পুরনো শাসনতন্ত্রেও সে-সব প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের দুই অঙ্গে বৈষম্য তবু বাড়িয়াছে বই কমে নাই। মোটকথা শেখ মুজিবর রহমান যে ছয়দফা চাহিয়াছিলেন তাহার সামান্যই দেওয়ার উদ্যোগ দেখা যাইতেছে। শেখ মুজিবর তাহার ইঙ্গিত পাইয়াই গোলটেবিল বৈঠকের ফলাফলকে আখ্যা দিয়াছিলেন-শূণ্য। তিনি এবং তাঁহার দল নাকি একটি বিকল্প ফেডারেল শাসনতন্ত্রের খসড়া রচনা করিতেছেন।

আগামী মাসে জাতীয় পরিষদের বৈঠকে তাহা উত্থাপিত হইবে। তদানুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানে গঠিত হইবে চারিটি রাজ্য, পূর্বে একটি। কেন্দ্রীয় আইনসভায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মানিয়া লওয়া হইবে। সরকারী ‘‘বিল’’ এবং এই বেসরকারী ‘‘বিল’’-দুইয়ের ভাগ্যই কিন্তু এখন অবধি অনিশ্চিত। আয়ুবের মতলব নাকি-যাবতীয় পরিবর্তনের প্রস্তুতি আগামী বছর ২৩ মার্চের মধ্যে শেষ করা-এক যুগ পরে প্রেসিডেন্টের তখনই বানপ্রস্থে যাত্রার ইচ্ছা। তাঁহার দ্বিতীয় বাসনা, সব পরিবর্তনই নিয়মতান্ত্রিক পথে হোক। কিন্তু অনেকেই আশঙ্কা করিতেছেন, পাক জাতীয় পরিষদের সম্মতি লইয়া শাসনতন্ত্র সংশোধন সম্ভব নাও হইতে পারে।

দুই পাকিস্তানেরই প্রতিনিধি সংখ্যা সেখানে সমান, সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে আয়ুব কি প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পাইবেন? আর মুজিবুরের ‘‘বিল’’ যদি পাস হইয়া যায়, তবে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা কি তাহা মানিয়া লইবেন? সুতরাং লক্ষণ দেখিয়া মনে হয় না পাকিস্তানের সংকট কাটিবার মুখে। বরং মনে হইতেছে, প্রকৃত সংকট ক্রমে আরও ঘনাইয়া আসিতেছে। দিশাহারা আয়ুব পশ্চিম পাকিস্তানে গভর্নর বদল করিয়াছেন, পূর্ব-পাকিস্তানেও মোনেম খাঁর বদলে নূতন গভর্নর নিযুক্ত হইয়াছেন হুদা।

পশ্চিম হইতে পুবে সৈন্য আমদানির কথাও শোনা যাইতেছে। পাকিস্তান কোন্ পথে চলিয়াছে? বিলাতের একটি কাগজ বলিতেছে-বিচ্ছিন্নতার পথে। নূতন শাসনতন্ত্রে জোড়াতালির যতো চেষ্টাই করা হোক, একটি সত্য আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট, ধর্মীয় ঐক্য খানিকদূর অবধি কাজে লাগে, বেশীদূর নয়। যদি তাহা না হইত তবে লাহোর অধিবেশনের আটশ বছর পরে, পাকিস্তান-স্বপ্নের তথাকথিত ঐতিহাসিক জন্মতারিখের দুইদিন আগে পাক নেতাদের এই মেকি ‘ফেডারেল-ইজম’ এর স্তোকবাক্য শুনাইতে হইত না!

প্রকাশকাল: সোমবার ১০ চৈত্র ১৩৭৫ বঙ্গাব্দ (২৪ মার্চ ১৯৬৯): আনন্দবাজার পত্রিকা

সংগ্রহ: আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম

ঋণস্বীকার: ন্যাশনাল লাইব্রেরি, কলকাতা।

   

চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন

চিড়িয়াখানায় কুকুরকে পান্ডা বানিয়ে প্রদর্শন

  • Font increase
  • Font Decrease

পূর্ব চীনের একটি চিড়িয়াখানা কুকুরকে ‘পান্ডা’ বানিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে। কুকুরের শরীরে সাদা এবং কালো রং মাখিয়ে আসল পান্ডাদের মতো বানিয়ে প্রদর্শন করা হয়। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের তাইঝু চিড়িয়াখানায় গত ০১ মে এ ঘটনা ঘটে।

সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এমন অবাক কাণ্ডের তথ্য প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়- পহেলা মে’র ছুটিকে কেন্দ্র করে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী বাড়াতে কর্তৃপক্ষ চিড়িয়াখানায় ‘পান্ডা কুকুর’ দেখা যাবে বলে বিজ্ঞাপন দেয়। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানায় ছুটে আসে। এসে তাদের এমন কাণ্ড দেখে অনেক দর্শনার্থী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

নিউইয়র্ক পোস্টে বলা হয়, চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা দুটি চৌ চৌ কুকুরের মুখ কালো রং করেছেন, যাতে কুকুরগুলোকে ক্ষুদ্রাকৃতির পান্ডাদের মতো দেখা যায়। এই কুকুরগুলোকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে প্রদর্শনের জন্য রেখে দেওয়া হয়, যেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় করে তাদের দেখার জন্য জড়ো হয়।

যখন দর্শনার্থীরা বুঝতে পারেন কুকুরগুলো আসল পান্ডা নয়, তখন অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা অভিযোগ করেন, প্রাণীর সঙ্গে এমন আচরণ নিষ্ঠুরতা।

তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে রং তারা ব্যবহার করেছেন তা ক্ষতিকারক নয় এবং এ রঙে কোনো রাসায়নিকও নয়।

চিড়িয়াখানার একজন মুখপাত্র জানান, তাদের চিড়িয়াখানায় কোনো পান্ডা ভাল্লুক ছিল না। তাই তারা এমনটি করেছেন। মানুষও চুলে রং করে। কুকুরের লম্বা পশম থাকলে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা যায়।

অন্য একজন জানান, তাদের চিড়িয়াখানায় আসল পান্ডা রাখার জায়গা নেই। এভাবে করলে দর্শনার্থীদের আরও বেশি আনন্দ দেওয়া যাবে বলে তারা এমনটি করেছেন।

উল্লেখ্য, চৌ চৌ একটি স্পিটজ-টাইপ কুকুর, যা মূলত উত্তর চীনে পাওয়া যায়।

;

চম্পারণের ১০৭ বছর



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১০৭ বছর আগে ১৯১৭ সালের ১৫ এপ্রিল বিকেলের কথা। শোষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য হাজার হাজার কৃষক বিহারের চম্পারণের মতিহারি রেলস্টেশনে তীক্ষ্ণ চশমা পরা এক লোকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রাজকুমার শুক্লা নামে একজন চম্পারণের কৃষক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জী কে চম্পারণে আসার জন্য অনুরোধ করেন।

তিনি এখানে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে না আসলেও প্রায় এক বছর ধরে তার উকিল বন্ধু ব্রজ কিশোর প্রসাদ, রাজেন্দ্র প্রসাদ, গোরখ প্রসাদ, চন্দ্রভাগা সহায় এবং বাবু ধারনীধরদের নিয়ে ভারতীয় ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কৃষকদের সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। সাবধানতার সাথে ৪ হাজারের বেশি সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেন তারা। প্রধানত কৃষকদের দুঃখজনক জীবনের বর্ণনা ও দ্বিগুণ করের আওতায় তাদের শোষণের কথা সমীক্ষায় উঠে আসে।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এবং ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের পদ্ধতি ও মতাদর্শ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি অহিংস প্রতিরোধ এবং নাগরিক অবাধ্যতার সাথে মহাত্মা গান্ধীর প্রথম দিকের পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি চিহ্নিত করে, যা পরে তার নেতৃত্ব এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য বৃহত্তর আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। চম্পারণ সত্যাগ্রহ ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে ভারতের বিহারের চম্পারণ জেলায় সংঘটিত হয়েছিল।

১০০ বছর পর হস্তলিখিত সাক্ষ্যগুলি জাতীয় আর্কাইভস থেকে সংগ্রহ করে সবরমতী আশ্রমের আর্কাইভ বিভাগে প্রতিলিপি করা হচ্ছে। এসব আর্কাইভ আটটি খণ্ডে রূপান্তরিত হচ্ছে। কীভাবে কৃষকরা তাদের কণ্ঠস্বর উত্থাপিত হতে দেয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকারের দাবি জানায়। সাক্ষ্য রেকর্ড করার এই সত্যাগ্রহের ফলেই চম্পারণ কৃষি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ গান্ধীর নিপীড়ক ব্রিটিশ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের উপায় হিসাবে অহিংস প্রতিরোধকে নিয়োগ করার প্রথম প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। তিনি এই কৌশলটিকে “সত্যাগ্রহ” বলে অভিহিত করেন, যার অনুবাদ “সত্য শক্তি”।

 চম্পারণের মতিহারি রেলস্টেশন। ছবি: সংগৃহীত

চম্পারণ অভিযানের জনগণের হতাশা একটি কার্যকর রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়। গান্ধী জী এবং তার দল রেকর্ড করছিল কিভাবে কৃষকরা নীল চাষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নীলকররা কিভাবে কৃষকদের বাধ্য করছে নীল চাষ করার জন্য এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। নীল চাষ না করলে কৃষকদের উপর দ্বিগুণ করন চাপিয়ে দেওয়া হতো। ব্রিটিশ রোপনকারীরা এজেন্টদের ব্যবহার করে বলপ্রয়োগ ও সহিংসতার মাধ্যমে কর আইন কার্যকর করতো।

সবরমতি আশ্রমের পরিচালকের মতে, গান্ধী ও তার অ্যাডভোকেট বন্ধুরা শ্রোতার ভূমিকা পালন করেন। গান্ধীর মাধ্যমে কৃষকরা নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন। তারই ফল হলো আজ আমাদের সাথে কৃষকদের সম্পর্কের বিস্তারিত রেকর্ড রয়েছে জমিদার, ব্রিটিশ নীল কারখানার মালিকদের সাথে সম্পর্ক এবং ভূমি রাজস্ব কাঠামোর শোষণমূলক প্রকৃতি।

তিনি বলেন, চম্পারণ সত্যাগ্রহের সময়, বাপু দেখিয়েছিলেন যে মানুষকে স্বাধীনতার জন্য একটি গণআন্দোলনে আকৃষ্ট করার জন্য তাদের ব্যক্তিগত জীবনে একটি সুস্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ। তবেই স্বাধীনতার ধারণা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

চম্পারণ সত্যাগ্রহের ফলস্বরূপ, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কৃষকদের অভিযোগ তদন্তের জন্য চম্পারন কৃষি তদন্ত কমিটি নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল। এই কমিটি শেষ পর্যন্ত কৃষকদের অনুকূলে সংস্কারের সুপারিশ করেছিল, যা গ্রামীণ জনগণের মধ্যে উন্নত অবস্থা এবং ক্ষমতায়নের বোধের দিকে পরিচালিত করে।

;

রেলস্টেশনে বুকশপ আর চোখে পড়ে না!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
ছবি: বার্তা২৪, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

ছবি: বার্তা২৪, খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা সময় ছিল যখন রেলের দীর্ঘ যাত্রায় রেলের বগিতে সময় কাটাতে হতো। তখন এই অলস সময় কাটাতে বইয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। যাত্রাপথে বই খুলে গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়তেন। সে কারণে রেলের বগিতে, স্টেশনগুলোতে কিছুক্ষণ পর পর বই বিক্রেতাদের হাকডাকও ছিল বেশ রকমের। স্টেশনেও থাকতো বই বিক্রির দোকান, যা ‘বুকশপ’ নামে পরিচিত ছিল। এখন তা শুধুই স্মৃতি মাত্র!

রেলস্টেশনে এসব বইয়ের দোকানে অনেক ধরনের বই পাওয়া যেতো, যা বাজারের বইয়ের দোকানগুলোতে থাকতো না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সবকিছু। এখন বই কিনে আর কেউ রেলে চড়েন না। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় স্মার্টফোনে সময় পার করেন। রেলের কোচে এখন আর বইয়ের ফেরিওয়ালাও ওঠেন না, বই কেনার কাউকে পাওয়া যায় না বলে।

১৯৮৫ সালে খুলনা রেলস্টেশনে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন মো. আবু বক্কার। বিশাল বইয়ের দোকান ছিল রেলস্টেশনে। বইয়ের দোকানের নাম ছিল ‘প্রজ্ঞা রেলওয়ে বুক স্টল’। কিন্তু এখন আর এত বই নেই সে দোকানে। গুটি কয়েক বই রয়েছে সে বুকশপে। তবে এগুলোও বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন পুরনো স্টেশনের সেই দোকানটিতে চা, পান, সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, খুলনার রেলস্টেশনটি এখন আন্তর্জাতিক মানের। যদিও সেখানে বইয়ের দোকান দেওয়ার জন্য কোনো স্থানই আর খালি নেই। আগ্রহও নেই রেল কর্তৃপক্ষের।

এ বিষয়ে প্রজ্ঞা রেলওয়ে বুক স্টলের মো. আবু বক্কার আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এখন আমার বয়স ৮০। কী আর করবো! কেউ আর বই কিনে রেলে চড়েন না। বই পড়েনও না। অন্য ব্যবসা পারি না। তাই, এখন এই দোকানে বসে চা, পান, বিড়ি বিক্রি করি। কিছু পুরনো বই রয়েছে। কিন্তু বিক্রি হয় না’।

আবৃত্তিকার কামরুল কাজল জানান, রেলে চড়ার অনেক স্মৃতি রয়েছে আমার। প্রতিবার রেলে উঠলে নতুন নতুন বই কিনতাম। অনেক নতুন বই রেলস্টেশনের স্টলে পেতাম, যা খুলনার অনেক বইয়ের দোকানে পেতাম না। আবার রেলে উঠলে অনেক হকার বই বিক্রি করতেন। সেই সব বইগুলো ছিল সময় কাটানোর বড় অনুষঙ্গ। কিন্তু এখন বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখি না।

রেলস্টেশনে বুকশপ বা বইয়ের স্টল এখন আর চোখেই পড়ে না! খুলনা রেলওয়ে স্টেশন, ছবি- বার্তা২৪.কম

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দীন বিশ্বাস জানান, এখনকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে গেছে। আগ্রহ তৈরিতে এলাকাভিত্তিক পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। বইয়ের চাহিদা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের (রাজশাহী) ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানালেন, পুরনো রেলস্টেশনগুলোতে বই বিক্রির জন্য স্থান থাকলেও নতুন যেসব স্টেশন তৈরি হয়েছে, সেসব স্টেশনে আলাদা স্থান রাখা হয়নি। এছাড়া যারা স্টেশনে ব্যবসা করার জন্য আবেদন করেছেন, তারা বেশির ভাগ খাবারের দোকান হিসেবে বরাদ্দ চান।

 

;

প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে ‘সোনালু ফুল’



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজের ফাঁকে উঁকি দিয়ে হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়ানো ফুল সোনালু। নজরকাড়া সৌন্দর্যে মুখরিত এই ফুল পথিকের মনে এনে দিচ্ছে প্রশান্তির ছোঁয়া। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধনে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। এই ফুলের দেখা মিলছে নওগাঁর বিভিন্ন পথে প্রান্তরে।

মঙ্গলবার (৭ মে) বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, নওগাঁ শহরের বরেন্দ্র অফিসের পাশে থোকায়-থোকায় হলুদ আভায় ঝুলে আছে সোনালু। ফুলের মাথা হতে লম্বা লতার মত বড় হয়েছে।

শীতকালে সব পাতা ঝরার পর বসন্তে একেবারেই মৃতের মতো দাঁড়িয়ে থাকে গাছটি। গ্রীষ্মের শুরুতে দু’একটি কচিপাতার সাথে ফুল ফুটতে শুরু করে। হলুদ সোনালি রঙের অসংখ্য ফুল সারা গাছজুড়ে ঝাড় লণ্ঠনের মতো ঝুলতে দেখা যায়।


জানা যায়, সোনালু গাছের পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির । এটি আট থেকে ৯ মিটার উঁচু হয়। হলুদ বরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠিসহ আরো অনেক। ফুল থেকে ধীরে ধীরে লাঠির মত কালো রঙের ফল হয়ে সেটি কয়েক সেন্টিমিটার অব্ধি লম্বা হয়ে থাকে।

পথচারী আলমগীর বলেন, সোনালু দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর শহরের মধ্যে চোখে পড়েনা বললেই চলে। যতবার দেখি খুব সুন্দর লাগে। মনের মধ্যে এনে দেয় এক প্রশান্তি। 

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু বলেন, আমি মোবাইল দিয়ে প্রচুর ছবি তুলেছি এই ফুলের। আমার খুব ভালো লাগে সোনালু ফুল। তবে এই ফুল যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য আমাদের গাছ লাগানো উচিৎ। আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেক সোনালু গাছ আছে যা আমাদের মুগ্ধ করে।


নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন- এটি মূলত সৌন্দর্য বর্ধনে রোপণ করা হয়। গ্রাম বাংলায় এই ফুলকে বাদর লাঠি গাছ বলেও ডাকা হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম 'কেসিয়া ফিসটুলা (Cassia Fastula)। এই উদ্ভিদ বাংলাদেশে অনেক জাতের আছে। ফুলটার জন্য বেশি খ্যাতি রয়েছে বলে অনেক জায়গায় লাগানো হয়। গাছের কাঠগুলো জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়।

;