অ্যাপোলো হাসপাতাল হতাশ করল



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
অ্যাপোলো হাসপাতাল / ছবি: সংগৃহীত

অ্যাপোলো হাসপাতাল / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অ্যাপোলো হাসপাতালে (ঢাকা) রোগীর সঙ্গে সারাদিন অবস্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার এই লেখা। আগে কখনো এত লম্বা সময় ধরে এই হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়নি। সম্প্রতি অ্যাপোলো হাসপাতালে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে ভিন্ন রকমের এক অভিজ্ঞতা হয়েছে।

বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশি দেশ ভারতের বেশ কিছু হাসপাতাল পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছিল। কখনো রোগীর স্বজন হিসেবেও গিয়েছি। সেসব হাসপাতালের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করে শুধু হতাশাই বেড়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্বনামধন্য এই হাসপাতালটির ব্যাপারে। বিশেষ করে অন্দরের ব্যবস্থাপনা খুব একটা সুখকর হলো না। বলা চলে প্রত্যাশার সিকি ভাগ পূরণেও ব্যর্থ

হাসপাতালটির ব্যয়বহুল ভিভিআইপি সুইট রুমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে হয়। অপারেশন পরবর্তী এই রুমে অবস্থানের সময়টা জুড়ে কখনো মনে হয়েছে গ্রামীণ কোনো রেস্টুরেন্টে আছি, কখনোবা মনে হয়েছে মাছ বাজারে আছি। টিনের চালা মেরামত করার সময় যেমন গ্রামের অপর প্রান্ত থেকে শব্দ পাওয়া যায়। এখানেও তেমনি শব্দ কানে এসে বাজতে থাকে।

অবাক করা ব্যাপার এসব শব্দ বাইরের গাড়ির হর্ন কিংবা অন্য কিছুর নয়। বরং খোদ হাসপাতালের বয়, ক্লিনার ও স্টাফদের সৃষ্ট। তাদের চলনে বলনে কোনো সাবধানতা নেই, ক্ষিপ্ত গৃহিণী যেমন কাজের সময় হাড়ি-বাসন আছড়ে আছড়ে কাজ করে অনেকটা তেমনই চিত্র এখানকার। সাইলেন্স জোন হওয়ায় সেই শব্দ কানে বিঁধছিল শুলের মতো। রোগীর কাতরতা আরো উদ্বিগ্ন করে তুলছিল।

খাবার পরিবেশন করতে আসা বয়রা তো যেন কয়েকধাপ বেশি। ধড়াশ ধড়াশ শব্দে প্লেট গ্লাস রাখছিলেন খাবারবাহী স্টিল শিটের ট্রলিতে। এত বিদঘুটে শব্দ হচ্ছিল, যেটা যে কারো বিরক্তির কারণ হতে বাধ্য। আবার নার্সদের উচ্চস্বরে হাঁকডাক রুমে বসেও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। গ্রামীণ হাটবাজারে হাঁক ছেড়ে যেভাবে একে অন্যকে ডাকাডাকি করেন অনেকটা তেমন পরিবেশ। আবার টিফিন আওয়ারে স্কুলের কমন রুম থেকে যেমন গমগম শব্দ আসে এখানেও সারাক্ষণ তা বিদ্যমান।

অথচ তখন কেবিনে কেবিনে অনেক রোগী ঘুমাতে না পারায় ঘুমের ওষুধ প্রদান অব্যহত। জেগে উঠলেই যন্ত্রণা কাতর, স্বজনদের উদ্বিগ্ন অবস্থান। রোগী ও স্বজনদের সেই যন্ত্রণার বিষয়ে না আছে বয় বেয়ারাদের দৃষ্টি, না আছে নার্সদের কোনো ভাবান্তর। ভাবছিলাম ডাক্তার ও ম্যানেজমেন্ট বোধহয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। কিন্তু সেই ভুল ভাঙতেও বেশি সময় লাগল না। বিকেলে সার্জারি ডাক্তার এসে বন্ধ দরজায় যেভাবে নক করছিলেন মনে হলো ডাকাত পড়েছে, দরজা না খুললে ভেঙে ফেলতে পারে।

অথচ ঘণ্টা তিনেক আগে সেই রোগীর অপারেশন হয়েছে। তার যে তখন পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন সেদিকে যেন কারোরই কোনো মনোযোগ নেই। বেশি হতাশ লাগল যখন দেখা গেল ডাক্তার পরিদর্শনের সময়েও নার্সদের আচরণে কোনো রকম ভাবান্তর হলো না।

রাত সাড়ে ৯টায় রোগীর স্যালাইন চলছে। রোগী যেতে চাইলেন টয়লেটে, বয়কে ডাকা হলো। নার্স জানালেন নিচে গেছে ফোন করা হয়েছে এলেই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে দফায় দফায় খবর দিলে নার্স বারবার একই উত্তর দিচ্ছিলেন।

এভাবে ৩০ মিনিট অতিবাহিত হয়, নার্স জানালেন বয়ের ডিউটি ১১টা থেকে। রোগীর ত্রাহি অবস্থা দেখে ডিউটি অফিসারকে অভিযোগ দেওয়ার হুমকি দিলে আরো কয়েক মিনিট পর দেখা দিলেন বয়।
দেয়ালে দেয়ালে টানানো ডিউটি ম্যানেজারের নম্বর, আবার সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে মাঝে মাঝেই ভেসে আসছিলে মহীরূহ মুশকিল আসান ডিউটি ম্যানেজারের নম্বর। যে কোনো সমস্যায় তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ। কিন্তু সেই ডিউটি ম্যানেজারকেও পাওয়া গেল কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর।

তাকে জানানো হলো বয়ের সংক্ষিপ্ত সার। প্রথমে বললেন অভিযোগ দেন ব্যবস্থা নিচ্ছি। জানতে চাইলেন নার্সের নামও। সাক্ষাতে বিস্তারিত জানানোর আগ্রহ দেখিয়ে বলা হলো আপনি কোথায় আছেন দেখা করতে চাই। তখন বললেন, আমিই আসছি। রাত পৌনে ১০টায় কথা হয়, আর ডিউটি ম্যানেজার এলেন রাত ১টার দিকে। যখন রোগী, স্বজন সবাই ঘুমাচ্ছে।

আমাদের রোগীরা গণহারে বিদেশগামী হচ্ছে। এ বিষয়ে ডাক্তারদের বক্তব্য হচ্ছে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে অন্যদেশের বেসরকারি হাসপাতালের তুলনা করা হয়। যে কারণে হতাশ হয় রোগীরা। ডাক্তারের এই বক্তব্যের যুক্তি খুঁজে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যেত এতদিন। কিন্তু দেশের একমাত্র জেএমআই সার্টিফায়েড হাসপাতালের এমন করুণ হাল মনকে বড়ই হতাশাগ্রস্ত করল।

বাইরে বেরিয়ে দেখি পার্কিংয়ে রাখা বাইকের ওপর থেকে হেলমেট উধাও। সিকিউরটিকে জানালে তিনি বললেন, পরদিন দেখা করতে। কথা অনুযায়ী পরদিন দেখা হলে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার রুহুল আমিন প্রথম চোটেই বলে দিলেন, সামান্য কয়টা টাকা দাম, এটার খোঁজ করে আর কী করবেন। আপনি হাসপাতালে ছিলেন প্রায় ১২ ঘণ্টা, সিসি ক্যামেরার রেকর্ড দেখতে হলে ১২ ঘণ্টা লাগবে। এতক্ষণ সময় দেওয়া কঠিন। টেনে টেনে দেখলেও অনেক সময় লাগবে।

পাশে দাঁড়ানো সহকারী মুবিন বললেন, আপনি কি মনে করতে পারবেন কখন চুরি হয়ে থাকতে পারে। সবিনয়ে তাকে জানালাম, এইটা যদি জানতাম তাহলে তো চোরকেই পাকড়াও করতে পারতাম। এবার সিকিউরিটি অফিসার বললেন, দেখে কী করবেন, আপনার মতো কোনো বাইকার হয়ে নিয়ে গেছে। তাকে জানালাম, হ্যাঁ সেই বাইকারের নম্বর হলেই তাকে পাওয়া সম্ভব।

প্রায় ২০ মিনিট ধরে বোঝাতে চাইলেন, এটা জটিল বিষয়, আর দেখেই বা লাভ কী। আপনি তো আর হেলমেট ফিরে পাচ্ছেন না। আমিও নাছোড়বান্দা, তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখবই। পরে জানালেন, এই ফুটেজ থাকে বড় অফিসারের রুমে। সেখানে যখন তখন যাওয়া যাবে না। আমি দেখছি কী করা হয়। বিকেলে ফোন দিয়ে জানালেন, ভাই, যেখানে বাইক ছিল সেই জায়গায় লাইট কম ছিল, সিসি ক্যামেরায় বোঝা যায় না। বললেন, ছয় জনের একটি গ্রুপ আপনার হেলমেট চুরি করেছে। এবার জবাব দিলাম তাহলে তো বিষয়টি সহজ। ওরা যখন মেইন গেট দিয়ে বের হয়েছে সে সময়ের ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেন।

এবার যেন আগ্রহ কমে গেল রুহুল আমিনের। আবোল তাবোল বলা শুরু করলেন, সাদা কালো দেখলেও চেনা যায় না। আপনার হেলমেট চুরি হয়েছে রাত সাড়ে ১১টায়। একটু আগে যে সন্ধ্যা ৭টার কথা বললেন। এরপর বললেন, আমরাতো হেলমেটের দায়িত্ব নিই না। নোটিশ দেওয়া আছে।

তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু এ রকম একটি উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় চুরির ঘটনা নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। উল্টো জানালেন, মাঝেমধ্যেই নাকি এমন হেলমেট চুরি হয়। তাদের এই নীরবতা চরম হতাশ করল। অনেকে মনে করেন নিরাপত্তা কর্মীরাও কেউ কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। সে কারণে এ বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখান না।

   

ঢামেক হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করা হবে: নাছিম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীতকরণের উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হবে।

এ ছাড়া হাসপাতালের শূন্যপদে নিয়োগ, নতুন পদ সৃষ্টি, হাসপাতালের মূল প্রবেশ মুখে হকার উচ্ছেদ, হাসপাতালের যুগোপযোগী পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করাসহ নানা বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটি কাজ করছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার ঐকান্তিক ইচ্ছা, প্রচেষ্টা, নিষ্ঠা, সততা ও ভালোবাসার যে নিদর্শন ও আন্তরিকতা, তা বিরল। আমরা যদি তার দিকে তাকিয়ে সবাই একটু একটু করে পরিবর্তন আনতে পারি, তাহলে সে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ সাধিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নাছিম বলেন, আমরা চাই, প্রতিটি মানুষই চিকিৎসা পাক। একজন মানুষও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে পতিত হোক, সেটি আমরা চাই না। এটি জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। তিনি বৈষম্য দূর করার জন্য, মানুষের দরিদ্রতা কমিয়ে আনার জন্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য এবং মানুষের চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো ব্যয় করে যাচ্ছেন।

ঢাকা-৮ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশের সব মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার আস্থার জায়গা। বাংলাদেশের কোথাও যে রোগী চিকিৎসা পান না, তিনিও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কখনো ফেরত যান না। নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানুষের জন্য কাজ করেন। তবে রোগীরা যাতে আরো ভালো স্বাস্থ্যসেবা পান, ডাক্তার নার্সসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেজন্য আরো সচেষ্ট হতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২শ ৫০ শয্যা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ১ হাজার ৫০ শয্যায় উন্নীত করেন এবং ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ২ হাজার ৬শ শয্যায় উন্নীত করেন।

বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১শ ২০টি আইসিইউ বেড আছে। এটি যাতে আরো উন্নত ও বিস্তৃত চিকিৎসা সেবা দিতে পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেন্দ্রিক কোনো দালাল চক্র থাকবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় তাদের নির্মূল করা হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কোনো অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট যাতে না থাকে, সেজন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে রোগীর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহন করবে।

হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় উল্লেখ করে নাছিম বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, সেজন্য সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে এবং এনজিওর সমন্বয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাহাউদ্দিন নাছিম, ছবি- বার্তা২৪.কম

উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা সম্মিলিতভাবে সবাই কাজ করুন। সরকারের এক্ষেত্রে আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আমরা একটি সুন্দর পরিবেশ ও চিকিৎসা সেবা যাতে রোগীদের দিতে পারি, সে জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আরো সুনামের জায়গায় ও সমৃদ্ধির জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দেশে যারা বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করেন, তাদের সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এরা গুজব রটিয়ে ও নানা অপকর্মের মাধ্যমে সব সময় দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন আমাদের উন্নয়নের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করে, তখন দেশবিরোধী অপশক্তির মাথা খারাপ হয়ে যায়৷ এই অপশক্তি বিএনপি-জামাতকে কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।

সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

;

ঝুঁকি এড়াতে সব হাসপাতালের লিফট সেফটি পরীক্ষার নির্দেশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝুঁকি এড়াতে দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের জরুরি সেবা, লিফট সেফটি সিস্টেম ও সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সোমবার (১৩ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত সারাদেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অংশগ্রহণে এক জরুরি ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কনফারেন্সে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফট দুর্ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এরপর হাসপাতাল প্রধানদের জরুরি সেবা, লিফট ও সার্ভিস ম্যানেজমেন্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

ভিডিও কনফারেন্সে আলোচ্য সূচি ও সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান জানান, ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়েই আলোচনা করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিফট দুর্ঘটনা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের হাসপাতালগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জরুরি ভিত্তিতে দেশের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সব ইলেকট্রো মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও সব লিফট অপারেটরদের হাজিরা প্রতিদিন পরীক্ষা করা ও তাদের যোগ্যতা পুনরায় পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এমনকি প্রতিটি হাসপাতালকে দ্রুততম সময়ে লিফটের সেফটি সিস্টেম পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

ডা. মঈনুল আহসান বলেন, আজকের কনফারেন্সে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতকরণের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব লিফট পরীক্ষা করার জন্য পিডব্লিউডিকে চিঠি দিতে বলা হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসান, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. হারুন-অর- রশীদসহ আরও অনেক।

;

ডেঙ্গুতে মাকে হারিয়েছি, আর কারও মা যেন না হারায়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ১৯৮০ সালে ডেঙ্গুতে আমি মাকে হারিয়েছি। তাই এটা নিয়ে আমার চিন্তা আছে। ডেঙ্গুতে আর কারও মা ও স্বজন যেন মারা না যায়।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০২৪ সালের ডেঙ্গু প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির আগেই তা প্রতিরোধে জনসচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সব রোগের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রোগটি কারও হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যায়। মানুষের যেন ডেঙ্গু না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন এবং যে ঘরে মানুষ থাকে সেখানকার সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলা করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সম্মেলিতভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। ডেঙ্গু এখন গ্রামেও ছড়িয়ে গেছে। একটা রোগ হয়ে গেলে আমরা চিকিৎসা দিই। মানুষ যেন না মরে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা অনেক আলোচনা ইতোমধ্যে করেছি। আমি নির্দেশনা দিয়েছি যাতে ডেঙ্গু বৃদ্ধির সময়ে কোনোভাবেই স্যালাইন সংকট দেখা না দেয় এবং স্যালাইনের দামও না বাড়ে। ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলোকে খালি রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। বর্তমানে মশা মারার পদ্ধতি নিয়েও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশিদ আলম বলেন, ডেঙ্গু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য দেশের প্রত্যেকটা জায়গার জনপ্রতিনিধি যেমন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা স্তরের সবাইকে সংযুক্ত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান, বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) মালা খান প্রমুখ।

;

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মনে হয় গরু কুকুর মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে!



তোফায়েল আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনবার দেশ সেরার খ্যাতি পাওয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম এক কথায় ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালের ভেতরে গরু ও কুকুরের দলের অবাধ বিচরণ দেখে মনে হবে, হাসপাতালে গরু, কুকুর ও মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে। হাসপাতালের সেবার মানের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক রোগী এবং তাদের স্বজনেরা।

তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গরু ও কুকুরের অবাধ বিচরণের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়। ওই ছবিগুলোতে দেখা যায় যায়, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে কুকুর শুয়ে আছে। দেখলে মনে হবে যেন কুকুরের দল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে। আবার আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রোগীর সঙ্গে গরু হেঁটে হেঁটে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকছে।

Abdulla Al Amin নামে একজন ফেসবুকে ছবিগুলো আপলোড করে লিখেছেন-

‘মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ময়মনসিংহ (৪) সদর আসনের সংসদ সদস্য, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এশিয়া মহাদেশের মাঝে নামকরা উল্লেখযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান, আজ এই হাল কেন? যেখানে টেন্ডার নিয়ে মারামারি হয়, পুলিশ পাহারা দিতে হয়। হাসপাতাল নিরাপত্তায় কতজন সরকারি বেসরকারি (আউটসোর্সিং) নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে! অভ্যন্তরে টয়লেটগুলোর কি হাল সরেজমিন পরিদর্শন করুন’।

সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম তরফদার নামে একজন আইডি থেকে রোগীর পাশে কুকুর শুয়ে আছে, এমন ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘হায়রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালের দৃশ্য’।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল: দেখে মনে হয় গরু কুকুর মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে! ছবি- বার্তা২৪.কম

‘Mymensingh Helpline’ পেজে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের ছবিগুলো পোস্ট করে Rezwan Bidhuth নামে একজন লিখেছেন-

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে, বিস্তারিত আপনারাই বলেন??’

এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার মানুষ ছাড়াও কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ এবং গাজীপুর থেকে রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে চার থেকে সাড়ে চার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার রোগীর চাপ সামলিয়ে সেবার মান নিশ্চিত করে বিগত পরিচালনা প্রশাসনের নেতৃত্বে ২০১৮, ১৯ এবং ২০২০ সালে ‘হেলথ মিনিস্টার্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগী, তাদের স্বজন এবং সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি, লক্ষ করা দেখা যায়, নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মেঝে এবং বারান্দায় গাদাগাদি করে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছেন রোগীরা। দেড়, দুই বছর আগে নিয়মিত ওষুধ পাওয়া গেলেও এখন সংকট চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও বিস্তর ভুলের অভিযোগ। আবার অনেক চিকিৎসক বাইরে তাদের পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের।

হার্টের সমস্যা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭১ শয্যা কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন জেলার হালুয়াঘাটের মোশারফ হোসেন। শয্যা না পেয়ে বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পর পরই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেলেও ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষার সময় বেঁধে দেওয় হয় দুই মাস পর। বাধ্য হয়ে তিনি ইকোসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা বাইরে করান।

মোশারফ হোসেন বলেন, আমি হার্টের রোগী হওয়ায় অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গে ডাক্তার বলেছেন ইকো পরীক্ষা করাতে। কিন্তু তারা পরীক্ষার জন্য সিরিয়াল দিয়েছে দুই মাস পর। বাধ্য হয়ে তা বাইরে করিয়েছি। মেশিন নষ্ট থাকার কারণে অনেক পরীক্ষা তাদের এখানে হচ্ছে না। তাই, ডাক্তাররা অন্য ক্লিনিকে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা গরিব বলেই এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসি। কিন্তু এখানে এসে ভোগান্তির পাশাপাশি ফতুরও হচ্ছি আমরা।

একই অবস্থা আট মাস আগে ভর্তি হওয়া অনতি পালের। তাকে ঢাকায় গিয়ে ইকো এবং এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আক্ষেপ করে অনতি পাল বলেন, আমার যদি ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করার মতো অবস্থা থাকতো, তাহলে কি এখানে এতদিন থাকতাম! তাদের পরামর্শে বাইরের ক্লিনিক থেকে অনেক পরীক্ষা করিয়েছি। এখন হাতখালি। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচও জোগাড় করতে পারছি না। মনে হচ্ছে, মরলেই বাঁচি আর আপনাদের কাছেই-বা বলে কী লাভ হবে!

একই ওয়ার্ডে মাকে ভর্তি করিয়েছেন তারাকান্দার তরুণ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে ডাক্তার, নার্স পাওয়া গেলেও ওয়াশরুমের অবস্থা একেবারেই খারাপ। ভালো মানুষ সেখানে গিয়েও অসুস্থ হচ্ছেন। দেশসেরা হাসপাতালের এই অবস্থা ভালো লক্ষণ নয়!

প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কারণে তিনটি ইকো মেশিনের মধ্যে দুটিই অকেজো হওয়ায় পরীক্ষার সময় বেশ লাগছে বলে জানিয়েছেন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল।

তিনি বলেন, বেড ৭১টি কিন্তু রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন আসেন তিন থেকে চারজন করে। তাহলে ওয়ার্ডের পরিবেশটা কেমন হবে আপনারাই বলেন!

তা রোধে এবং সেবার মান নিশ্চিত করতে অ্যাটেন্ডেন্স কার্ড করা হয়েছে। একজন রোগীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুইজনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি।

যন্ত্রপাতি অকোজো থাকার বিষয়ে ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল বলেন, অকেজো ইকো মেশিন মেরামত এবং নতুন মেশিনের চাহিদার কথা জানিয়ে ২০২১ সাল থেকে গত তিন বছরে কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে সাত দফা হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গাইনি ওয়ার্ডে স্ত্রীকে ভর্তি করিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পরিচালক নাসির উদ্দিনের সময়ে হাসপাতালে একটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন তার কিছুই নেই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে রোগীরা সেবা নিচ্ছেন। নার্স এবং চিকিৎসকরাও আন্তরিক নন। তারা রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন।

সেইসঙ্গে তিনি এটাও বলেন, তিনটির মধ্যে একটি ওষুধ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। বাকি দুটি বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। বছরের শুরুতে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে শেষে কী হতে পারে আপনারাই বলুন!

ফরিদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, আমার এক রোগীকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ধরে ভর্তি রয়েছি। আলট্রা করানোর পর এখানকার চিকিৎসকেরা এক ধরনের রিপোর্ট দিয়েছেন আর বাইরের চিকিৎসকরা অন্য ধরনের রিপোর্ট দিয়েছেন। পরে বাইরের রিপোর্টই সঠিক হয়েছে।

হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা যে হাসপাতালটিকে নিয়ে গর্ববোধ করি, তার যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে যাওয়ার আর জায়গা নেই। কয়েকদিন এখানে ঘোরাঘুরি করে বুঝতে পেরেছি, মেডিসিন রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি খায়রুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালটিতে রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে মানুষ মেঝে এবং বারান্দাতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু সেখানটাও অপরিচ্ছন্ন।

ভেতরে অনেকগুলো গেট পার করে কুকুর এবং গরু প্রবেশ করছে। তাহলে দারোয়ান রেখে লাভটি কী হলো বলেন তো! চিঠি লিখেই বা এমপিকে বললে কী আর সমাধান হবে! আমরা সবাই নিজে বড় হতে চাই, কারো দিকে না থাকিয়ে।

হাসপাতালের নানা অসঙ্গতির বিষয়ে জানার পাশাপাশি রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর নির্দেশে জরুরি বিভাগের সঙ্গে ‘অনুভূতির বাক্স’ স্থাপন করেছে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। পর পর তিনবার দেশসেরার খ্যাতি অর্জন করা হাসপাতালের এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে ‘জনউদ্যোগ’ ময়মনসিংহের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, স্থানীয় সংসদের ‘অনুভূতির বাক্স’ স্থাপনকে অন্তত সম্মান দেখিয়ে হলেও রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। আমরা পুরস্কার না পেলেও চাই, রোগীরা যেন তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।

হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রশাসন মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যে, আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি, তা তো বলেন না! সেবার মান যদি খারাপ হতো তাহলে কি একহাজার শয্যার হাসপাতালে চার হাজার রোগী ভর্তি থাকতো!

অবাধে কুকুর এবং গরুর প্রবেশের প্রশ্নটি এড়িয়ে তিনি বলেন, কার্ডিওলজি বিভাগের দুর্ভোগ নিরসনে পরবর্তী অর্থবছরে নতুন ইকো মেশিন কেনা হবে। এছাড়াও সেবার মান নিশ্চিতে অন্যান্য সমস্যা নিরসনে কাজ হচ্ছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো নজরে এসেছে। সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।

রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার থেকে যে ওষুধ আসে, সব ওষুধই আমরা রোগীদের দিয়ে দিই।

 

;