ইউক্রেন-রাশিয়ার শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করবে ভারত
রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল শহর কাজানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৬তম ব্রিকস সম্মেলন। এ সম্মেলন ২২ অক্টোবর শুরু হয়েছে এবং চলবে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ১৬তম ব্রিকস সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ শেষ করতে শান্তি আলোচনায় সরাসরি মধ্যস্থতাকারীর বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রিকস-এর পার্শ্ব আলোচনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আলোচনা করেন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া অনলাইন এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করে।
খবরে বলা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি বলেছেন, ব্রিকস সম্মেলনের পার্শ্ব আলোচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে আলোচনায় মোদি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের অবসানে সরাসরি মধ্যস্থতার ওপর জোর দিয়েছেন।
যেহেতু রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশই শান্তি আলোচনার বিষয়ে সক্রিয় নয়, সেহেতু ভারত এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানানো হয়।
এর আগে জুন মাসে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে প্রথমবারের মতো ভারত ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেয়। যদিও এসময় দুই দেশ শান্তি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো বিবৃতিতে সই করেনি। সে সময় রাশিয়া এ সম্মেলনে অংশ নেয়নি। কিন্তু ভারত রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা পোষণ করে।
ভারত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার বিকল্প উপায় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বিষয়ে প্রস্তাবনা পেশ করেছে বলে জানান বিক্রম মিস্ত্রি।
ব্রিকস (BRICS) মূলত আঞ্চলিক দেশগুলোর নিজেদের মধ্যকার অর্থনৈতিক বিষয় এবং পাশ্চাত্যের সামরিক হুমকি মোকাবিলায় কাজ করার উদ্দেশ্যে গঠিত। কয়েকটি দেশের নামের প্রথম বর্ণ নিয়ে এটি তৈরি। দেশগুলি হচ্ছে- ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া এবং সাউথ আফ্রিকা।
এর আগে চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ইউক্রেন রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের অবসানে মধ্যস্থতার ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতিতে রাশিয়ায় যান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ‘ব্রিকস’ (ব্রাজিল-রাশিয়া-ইন্ডিয়া-চীন-দক্ষিণ আফ্রিকা)-সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি।
এই সম্মেলনের সাইডলাইন আলোচনায় ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাশিয়ার প্রতিপক্ষ সের্গেই শোইগু’র সঙ্গে কথা বলেন অজিত দোভাল। এ সময় দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ এবং ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ভারতের মধ্যস্থতা করার বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুলাই মাসে মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এরপর তিনি ২৩ আগস্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনেস্কির সঙ্গেও দেখা করেন।
২৭ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টেলিফোনে জেলেনেস্কির সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত পুতিনের কাছে তুলে ধরেন। এরপরই সিদ্ধান্ত হয়, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল সেপ্টেম্বরে আলোচনা করতে মস্কো যাবেন।
৫ সেপ্টেম্বর পুতিন বলেছিলেন, ভারত, চীন এবং ব্রাজিলের সঙ্গে তিনি অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবেন।
এ সময় পুতিন বলেন, আমরা আমাদের সব বন্ধু এবং অংশীজনদের সম্মান করি। তারা যুদ্ধের সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে একটা সমাধানে আসবেন আশা করি।
তিনি বলেন, যদি ইউক্রেন মনে করে, এ জন্য মধ্যস্থতাকারী প্রয়োজন, তাতেও রাজি আছি আমরা।
অন্যদিকে, ভ্লাদিভস্তকে আয়োজিত দ্য ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরাম’-এর বৈঠকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র ডিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, সবকিছু ব্রিকসের ফ্রেমওয়ার্কে মধ্যেই হচ্ছে।
৮ সেপ্টেম্বর এনডিটিভি জানায়, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল মোদির ইচ্ছানুসারে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই মস্কো যাবেন। তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবেন। কারণ, ইউক্রেন এবং রাশিয়া দুই দেশই ভারতের বন্ধু।