সংযুক্ত পৃথিবীর বিচ্ছিন্নতা
করোনা ভাইরাসআমরা এখন একই সাথে দুটি বড় সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি; বৈশ্বিক মহামারি করোনা এবং এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট। ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় সংকট যে ক্ষতি করবে তা কাটিয়ে ওঠা অনেক বেশি কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদী হবে।
যদিও মানুষের জীবনের সঙ্গে অর্থনৈতিক লোকসানের তুলনা করার কোন মানে নেই। এই দুই সংকট আবার একইসাথে গভীরভাবে একটা আরেকটার সঙ্গে যুক্ত। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এখন বুঝতে পারছে আমাদের পৃথিবী আসলেই পরস্পরের সঙ্গে কতটা যুক্ত।
মহামারি বর্ণান্ধ
অসুস্থতার ব্যাপারে যে প্রচলিত উক্তি রয়েছে তা আবার সত্য প্রমাণিত হয়েছে; মহামারি কোন ভৌগোলিক সীমানা বা গায়ের রং চেনে না অথবা ধর্ম, সংস্কৃতি বা ভাষার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য করে না।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে যারা বর্ণবাদী নজর নিয়ে চীনের মানুষকে দেখছিল তারা নিশ্চয়ই এখন একইভাবে ইতালি, ইরান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকেও দেখবে। কারণ, ভাইরাস এই দেশগুলোয় যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এদের আর আলাদা করা যায় না। হয়তো ভবিষ্যতে একটা জিনিসই এদের সবাইকে এক করবে। আর তা হলো এই সংকট মোকাবিলায় সবাই যে অভিজ্ঞতার মধ্যে গিয়ে গেছে সেটা।
অস্তিত্বের সংকটকালে মানুষ এক হয়ে যায়। বৈশ্বিক বাণিজ্যের এই দৃঢ় নেটওয়ার্ক ছাড়াও মানবতা আমাদের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে।
তৃতীয় সংকট
করোনাভাইরাস আরো একটা সংকট তৈরি করেছে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব তৈরি। যা প্রথম দুটির সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম পশ্চিমের মানুষের চলাচলের স্বাধীনতা ব্যাহত হয়েছে।
মানুষ হয় নিজের বাড়ির চার দেয়ালের মাঝে বন্দী অথবা অচেনা পরিবেশে সঙ্গরোধে আছে। প্রতিবেশী, শহর, দেশ এমনকি গোটা পৃথিবীই একে অন্যের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমেরিকার মতো ইউরোপও তার বহিঃসীমা বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এমনকি এতদিন ইউরোপের যা গর্বের বিষয় ছিল সেই আন্তঃসীমা অবাধ চলাচলও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত
এই পরিস্থিতিতে সবাই নিষ্ক্রিয় বোধ করতে পারে। তবে বিচ্ছিন্নতাকে একটা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এতদিন যে বইগুলো পড়বেন বলে রেখে দিয়েছিলেন সেগুলো পড়ে ফেলুন।
ভ্যাটিকান সিটির সেইন্ট পিটার স্কয়ার, সৌদি আরবের মক্কা, মদিনার মতো স্থান— যেগুলো বিশ্বের প্রতিটি কোণা থেকে মানুষকে এক জায়গায় আনতো সেগুলোও এখন ফাঁকা পড়ে আছে। এটা খুবই হতাশাজনক হলেও মানুষ একে অপরকে নিশ্চিত করেছে যে এগুলো আছে এবং থাকবে। এখন তারা এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে নতুন জনসমাজ তৈরির জন্য লড়াই করছে।
আমরা সবাই এখন গৃহবন্দী। গত সপ্তাহে ইতালিয়ানরা যেমন নিজেদের জানালায়, বারান্দায় দাঁড়িয়ে একে অন্যকে সাহস জুগিয়েছেন তেমনি আমাদেরও করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একজনের আরেকজনকে সাহস দিতে হবে।