করোনার প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টায় এবার জাপানও
করোনা ভাইরাসবিশ্বব্যাপী মহাবিপর্যয় এনেছে করোনাভাইরাস। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে তাণ্ডব শুরু করে এ ভাইরাস ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় তার ভয়াল থাবা ছড়িয়ে দিয়েছে। ইতালিতে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে করোনা। অথচ, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কার্যকর কোনো প্রতিষেধক তৈরি হয়নি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিন তৈরির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।
এবার করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে যোগ দিল এশিয়ার দেশ জাপান। ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির দিয়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালাচ্ছে জাপান। সোমবার (২৩ মার্চ) দ্যা ন্যাশনাল সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন (এনসিজিএম) বিষয়টি জানিয়েছে।
এনসিজিএম জানায়, তারা কোভিড-১৯ রোগীর ওপর এই ওষুধ পরীক্ষা শুরু করবে। যুক্তরাজ্যের ওষুধ উপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জিলিড সায়েন্সেস ইনকরপোরেশন ইবোলার চিকিৎসার জন্য রেমডেসিভির উৎপাদন করেছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ভাইরাসের প্রতিলিপি প্রতিরোধে ওষুধটি কার্যকর।
এই ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নেতৃত্বে করোনায় আক্রান্ত ৪৪০ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হবে। যাদের বয়স ২০ অথবা তারও বেশি। একটি গ্রুপের ওপর রেমডেসিভির ১০দিন পর্যন্ত পরীক্ষা চালানো হবে এবং আরেকটি গ্রুপের ওপর প্লাসেবো দেওয়া হবে। তাদের লক্ষণগুলো ১৫ দিনের মাথায় তুলনা করা হবে।
এনসিজিএম’র রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান নরিও ওমাগারি বলেন, আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা দরকার-এর জন্য আমাদের আগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে একটা ওষুধ বের করতে হবে। এনসিজিএম’র আরও সেসব ওষুধ আছে সেগুলোও করোনার চিকিৎসার জন্য গবেষণা চালানো হবে। কোনটা এই ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে তা বেছে নেব।
‘অ্যালভেসকো’ যেটি অ্যাজমা রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, এটাও করোনা রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালানো হবে। এছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক ‘অ্যাভিগান’ এবং অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহজনিত রোগের প্রতিষেধক ‘নাফামোস্ট্যাট’ এগুলোও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে জাপানের জৈব ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাঞ্জেস ইনকরপোরেশন জানায়, নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রতিষেধক হিসেবে ডিএনএ (প্লাজমিড) ভ্যাকসিন তৈরি করেছে জাপান। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাঞ্জেস করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করে। ভ্যাকসিনটি খুব শিগগিরই প্রাণীর দেহে প্রয়োগ করে দেখা হবে।
মূলত করোনা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য শরীরে ‘এক টুকরা ডিএনএ’ প্রবেশ করানো হবে, সেখান থেকে তৈরি হওয়া প্রোটিন পরবর্তীতে ইমোনাইজড হয়ে করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করে দেবে।
জাপানের প্রভাবশালী ওষুধ কোম্পানি ‘তাকারা’ ভ্যাকসিনটি বাজারজাতকরণের দায়িত্ব নিয়েছে।
করোনাভাইরাসের মহামারি রোধে সারা বিশ্বের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এর চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তাদের এই উদ্যোগ শিগগির বিশ্বে প্রাণ সংহার কমিয়ে আনবে বলে দাবি করছে গবেষকরা।