বন্যপ্রাণীর অবাধ বাণিজ্য, ভয়াবহ মহামারির দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

  করোনা ভাইরাস
  • ফাতিমা তুজ জোহরা, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের এক বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়— এমনটিই ধারণা করেছেন অনেক বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সেখানে বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু, শুধু চীন নয়, বিশ্বের অনেকে দেশেই রয়েছে বন্যপ্রাণীর বাজার। যেখানে অবাধে বন্যপ্রাণী কেনা-বেচা হয়।

বন্যপ্রাণীর এই অবাধ বাণিজ্য বন্ধ করা না গেলে বিশ্ব আরও ভয়াবহ মহামারির দিকে ধাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণীর এ বাণিজ্য চলতে থাকলে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে মানবজাতি। আর সেটি করোনাভাইরাস থেকেও বড় মাহামারি হতে পারে, যা মোকাবিলায় মানবজাতিকে প্রস্তুত থাকতে বলছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞাপন

মহামারি করোনাভাইরাস রুখতে সবাই যখন হাঁপিয়ে উঠেছেন, ঠিক এমন সময় বিজ্ঞানীরা আরেকটি ভবিষ্যৎ বাণী দিলেন বিশ্বকে। চলমান গবেষণা বলছে, বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য বন্ধ করা না গেলে আরেকটি বড় বিপর্যয় আসা কেবল সময়ের ব্যাপার। আর সেটি মোকাবিলা করা মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভব। এজন্যই আগাম বার্তা দিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।

শিয়াল

উহানের একটি বন্যপ্রাণী বিক্রির বাজার থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে দাবি করেছে চীন কর্তৃপক্ষও। মার্কিন গবেষকরা বলেছেন, ধারণা করা হচ্ছে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। বাদুর, সাপ ও বনরুই থেকে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে বলেও জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

এসব বন্যপ্রানীর বাজারে সাপ, শিয়াল, শজারু, বিড়াল, ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীই কেনা-বেচা হয়।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিও পুন বলেন, এসব বন্যপ্রাণীদের নিজস্ব ভাইরাস আছে। এসব ভাইরাস এক শরীর থেকে অন্য শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। এমনকি এসব ভাইরাস বাজারে থাকা অন্য প্রাণীর শরীরেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। যেখানে প্রতিদিন বড় সংখ্যক মানুষ চীনের এসব বাজারে যাচ্ছেন, সেখানে এসব ভাইরাস খুব সহজেই মানুষের শরীরে আসতে পারে।

বাদুর

অধ্যাপক পুন একমাত্র ব্যক্তি যিনি ২০০৩ সালে মহামারি আকার ধারণ করা সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ ডিকোড করেছিলেন। চীনের গুনজুয়াং প্রদেশের একটি বন্য বিড়ালের মাংস থেকে এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছিল। তবে সার্স ভাইরাস এই বিড়ালের শরীরে ছিল না, অর্থাৎ অন্য প্রাণী থেকে কোনো ভাইরাস এই বিড়ালের শরীরে এসে তারপর সংক্রমিত হয়েছে।

প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডস ইউনিভার্সিটির আটলান্টিক ভেটেরিনারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জেসন স্টাল বলেন, এসব মার্কেট সাধারণত ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে। এতে খুব সহজেই ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। আর এসব স্থান থেকে মানুষের শরীরে ভাইরাস আসাটা অসম্ভব কিছু নয়।

বনরুই ও সাপ 

তিনি আরও বলেন, বন্যপ্রাণী খাওয়া চীনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অংশ। এর ধারাবাহিকতায় তারা যদি নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এর নিশ্চয়তা দেবে কে? অবশ্যই চীনকে এমন নীতিমালা নিয়ে আসতে হবে যেখানে তারা এসব প্রাণীর পরিষ্কার মাংস সরবরাহ করবে। একইসঙ্গে বায়োসিকিউরিটি ও চেকিং সংক্রান্ত বিষয়গুলোও আমাদের ভাবতে হবে।

ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোর সহকারী অধ্যাপক ক্যারি বোম্যান বলেছেন, আমরা যদি এ বাণিজ্য বন্ধ না করি, তাহলে আগামী ১৮ মাস সময়ের মধ্যে আবারো একটি মহামারির মুখে পড়তে পারি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বাণিজ্য বন্ধ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে একটি দেশের সংস্কৃতিচর্চা, ঐতিহ্য ও হাজার বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য। উপরন্তু বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য বন্ধ করতে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ।