করোনার প্রকোপ রোধে সফলতা আনছে সামাজিক দূরত্ব

  করোনা ভাইরাস
  • মেহেদি হাসান শিপন, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায়বারবার হাত ধোয়া, মুখে স্পর্শ না করা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলার পাশাপাশি সামাজিকদূরত্ব বজায় রাখার বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশ এর সুফলওপাচ্ছে।

কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ববজায় রাখার মাধ্যমে করোনার বিস্তার নিজেদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনেছে এশিয়ার চীন, হংকং,সিঙ্গাপুর, তাইওয়ানসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ।

বিজ্ঞাপন

করোনার বিস্তার ঠেকাতে চীন তাদের সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোবন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিদেশি শিক্ষার্থীদের ঘর থেকে বের না হতে কঠোর নির্দেশ দেয়। সেই সাথে তাদের সংকটকালীন সব সুযোগ সুবিধা সরকার প্রদান করেছে দেশটির সরকার। এমনকি শিক্ষা ব্যবস্থাযেন চালু থাকে সেজন্য অনলাইন ক্লাসও চালু রাখে দেশটি।

সিঙ্গাপুরে নাগরিকদের চলাফেরার উপরে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়।  বিদেশ ফেরত নাগরিকদের সরকার বাধ্যতামুলক সঙ্গরোধে থাকার নির্দেশ দেয়। সঙ্গরোধে থাকা নাগরিকদের মোবাইল ফোনের লোকেশনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হত।

বিজ্ঞাপন

তাইওয়ানে লকডাউন অমান্য করে ক্লাবে যাওয়ার অপরাধে এক ব্যক্তিকে ৩৩ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।

এশিয়ার দেশগুলো করোনার প্রাদুর্ভাব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তর্জাতিক সব যোগাযোগ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়। নতুন করে যাতে দেশে কোনো করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি না প্রবেশ করতে পারে সেজন্য তারা তাদের সীমান্তগুলোও বন্ধ করে দিয়েছিলো। আর তাতে অনেকটা সফল হয়েছে বলা যায়।

সামাজিক দূরত্ব
ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

তবে চিন্তার দাগ কাটছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। প্রথমদিকের অসতর্কতার কারণে খুব দ্রুতই বেড়েছে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। দেশগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা, জনসাধারণের অবাধ চলাচল, দেরি করে বিধি-নিষেধ আরোপ, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল খোলা রাখাই মূলত এর বিশেষ কারণ।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারের জরুরি পদক্ষেপের ইতিবাচক ফল পেতে যাচ্ছে দেশটি। এ বিষয়ে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন  বলেন, হাসপাতালে ভর্তির হারে পার্থক্যই বলে দিচ্ছে সামাজিক দূরত্বের দিক-নির্দেশনাটি কার্যকর হয়েছে।

করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি-

সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে মোট ৮ লাখ ৫৯ হাজার মানুষ। প্রাণহানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার।

আক্রান্তের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৮ জন। মারা গেছে ৪ হাজার জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ২৫০ জন। ইউরোপের দেশ ইতালিতে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণহানির সংখ্যা ১২ হাজার ৪২৮। সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৭২৯ মানুষ। স্পেনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৫ হাজার ৯২৩, মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৬৪ জনের, সুস্থ হয়েছেন ১৯ হাজার ২৫৯ জন। ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সে ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা ৫২ হাজার ১২৮, মারা গেছে ৩ হাজার ৫২৩ এবং সুস্থের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৪৪। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে ভাইরাসটিতে বর্তমানে নতুন আক্রান্ত নেই বললেই চলে। দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৫১৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৩০৫ যা আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় কম।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোরমধ্যে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৫ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩৯৭ জন। বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ৫৪ জন। মারা গেছেন ৬ জন। ইতিমধ্যেই ৭০ ও ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধসহ মোট ২৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।