মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা পণ্য বর্জনের হিড়িক, তুরস্কে কোকা-কোলা নিষিদ্ধ
গাজায় সঙ্ঘাত চলার মধ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার জেরে বিশ্বখ্যাত কোম্পানি কোকা-কোলা ও নেসলের পণ্য পার্লামেন্ট ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তুরস্ক। সরকারি এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে এবং একজন কর্মকর্তা এ দুই কোম্পানির নাম বলেছেন।
তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বলেছে, ‘ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া কোম্পানিগুলোর পণ্য পার্লামেন্ট এলাকার রেস্তোরাঁ, ক্যাফেটেরিয়া ও চায়ের দোকানগুলোতেও বিক্রি করা হবে না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, পার্লামেন্ট স্পিকার নুমান কুর্তুলমুস এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ এবং নিরীহ মানুষ হত্যার পরও প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়েছে যেসব কোম্পানি, তাদের পণ্য বয়কট করা নিয়ে গণমানুষের ভাবাবেগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্পিকার।
এ দিকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পশ্চিমা পণ্য বর্জনের হিড়িক পড়েছে। আল জাজিরার খবরে এ সংক্রান্ত কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বাহরাইনের একটি দোকানে ১৪ বছরের জানা আবদুল্লাহ ট্যাব নিয়ে প্রবেশ করে। গাজায় ইসরায়েলের হামলার মধ্যে ট্যাবে সে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর তালিকা বের করে, যাতে এগুলো চিহ্নিত করে বর্জন করা যায়। জানা ও তার ১০ বছর বয়সী ভাই আলি প্রায় নিয়মিতই পার্শ্ববর্তী ম্যাকডোনাল্ডসে গিয়ে কিছু না কিছু খেত। কিন্তু এখন তারা মধ্যপ্রাচ্যের অনেকের মতোই এর পণ্য বর্জন করছে। কারণ, তারা মনে করে, এসব পণ্য কিনে ইসরায়েলকে সহায়তা করা হচ্ছে।
টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্টারবাকস, কেএফসি ও কারিফোরের মতো ব্র্যান্ডগুলো বর্জন করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে শিশুসহ সব বয়সের মানুষ এগুলো বর্জন করছে। জানা এএফপিকে বলে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা কোম্পানিগুলোর সব পণ্য বর্জন শুরু করছে। তারা চায় না তাদের অর্থ আরো হামলায় ভূমিকা রাখুক। বিকল্প হিসেবে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর দিকে নজর তাদের।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ব্যাপক হামলা ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে ইসরায়েল। বন্ধ করে দেওয়া হয় পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। স্কুল, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, শরণার্থী শিবিরসহ সব জায়গায় বেপরোয়া হামলা চালাতে থাকে ইসরায়েল। এতে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
এর জেরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়েছে। আরব দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। লোকজন ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলোকেও বর্জন শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি উঠেছে। এসব দেশের প্রধান প্রধান শহরে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। তুরস্ক ও জর্দান ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনা স্থগিত করেছে। বাহরাইনের পার্লামেন্ট বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আহত শিশুর ব্যান্ডেজ করা মুখ ঠাঁই পেয়েছে কুয়েত সিটির চার লেনের মহাসড়কের পাশে বিশাল বিলবোর্ডে। যারা এখনো মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা ব্র্যান্ডের পণ্য কিনছে, তাদের প্রতি ওই বিলবোর্ডে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে- ‘আপনি কি আজ একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন?’
কুয়েতের অধিকারকর্মী মিশারি আল-ইবরাহিম বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন কুয়েতে ‘বর্জনের ডাক’ কে আরো শক্তিশালী করেছে। এটা কুয়েতের মানুষের কাছে একটি ধারণাকে তুলে ধরেছে- পশ্চিমারা মানবাধিকার নিয়ে যে স্লোগান দেয় বা বলে, তা তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
বর্জনের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে ম্যাকডোনাল্ডস। গত মাসে মার্কিন ফাস্টফুড চেইনটির ইসরাইলি শাখাপ্রধান ঘোষণা দেন, তারা ইসরায়েলি সেনাদের হাজার হাজার প্যাকেট খাবার বিনামূল্যে দিয়েছে। এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিতর্ক শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে কুয়েতের ম্যাকডোনাল্ডস (মূল ব্র্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়) গাজায় এক লাখ ৬০ হাজার ত্রাণসহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়। সামাজিক মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করে। একই পদক্ষেপ নেয় কাতারের ম্যাকডোনাল্ডস।
কাতারে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক অনলাইনে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। অক্টোবরেই কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন ক্যাফে পুরা ভিদা মিয়ামি ও ফ্রান্সের প্যাস্ট্রি কোম্পানি মাইত্রি চোক্স বন্ধ হয়ে গেছে।