রাজধানীতে করোনায় মৃতদের দাফনের অনুমতি চায় ইকরামুল মুসলিমীন

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করছেন, ছবি: সংগৃহীত

ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করছেন, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাসহ সারাদেশে টিম গঠন করার পরও রাজধানীতে করোনায় মৃতদের কাফন-দাফনের অনুমোদন পায়নি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন। অনুমোদন না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংগঠনের নেতারা।

বুধবার (২২ এপ্রিল) সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অনলাইন সভা শেষে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের যথাযোগ্য ধর্মীয় বিধানমতে কাফন-দাফন কিংবা লাশের সৎকার করার লক্ষে সারাদেশে টিম গঠন করেছে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন।

সংগঠনের আহ্বায়ক, পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক, বিশিষ্ট বক্তা মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ বলেন, দেশের ৬৪ জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা ও সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় একজন করে নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টিমের সদস্যদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক পিপিইসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে। তারা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় করোনায় মৃতের কাফন-দাফনে অংশগ্রহণও করছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমাদের জেলা স্বেচ্ছাসেবক টিমগুলো স্ব স্ব জেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন, তারা জেলা স্বেচ্ছাসেবক টিম ও কেন্দ্রীয় তদারকি টিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কার্যক্রম, ছবি: সংগৃহীত

মুফতি মিছবাহ আরও বলেন, আমরা পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছি। ঢাকায় শক্তিশালী একাধিক টিম গঠন করেছি। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহতভাবে যোগাযোগের পরও লাশ দাফনের সরকারি অনুমোদন পাচ্ছি না। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সচিব বরাবর আবেদন করেছি। কিন্তু ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন নিবন্ধিত সংস্থা নয় বলে কাফন-দাফনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী এই মহাসঙ্কটে নিবন্ধনের অজুহাত দাফনের অনুমোদন না দেওয়ায় আমরা হতাশ। আমাদের টিমের সদস্যরা কাজ করতে মুখিয়ে আছেন। মানবতার এ দূর্দিনে তারা নিঃস্বার্থভাবে মানবসেবা করতে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমাদের প্রস্তুতির কথা প্রচারও হয়েছে। ফলে প্রচুর ফোন আসে মৃতের পরিববার থেকে। কিন্তু অনুমোদন না পেয়ে আমরা দাফন কাজে অংশ নিতে পারছি না। ফলে আমাদের চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।

দাফন-কাফনের জন্য কোনো সংস্থাকে নিবন্ধিত হতে হবে কেন এমন প্রশ্নও তোলেন মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ।

সারাদেশে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এতগুলো টিম প্রস্তুত করতে পারেনি বলেও দাবি তার।

তিনি বলেন, আমাদের দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত। কাজ শুরু করলে আরও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হত। তবুও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সরকারি অনুমোদন ছাড়া ঢাকায় কাজ করবো না আমরা।

অনলাইন সভায় অংশগ্রহণ করেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ, মাওলানা জিয়াউল আশরাফ, মাওলানা এহসান সিরাজ, মুফতি আব্দুর রহমান কোব্বাদী, মাওলানা এম সামসুদ্দোহা তালুকদার, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম আকন ও ইমতিয়াজ উদ্দীন সাব্বির প্রমূখ।

উল্লেখ্য ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন মৃতদের কাফন-দাফনের পাশাপাশি সামাজিক সেবায়ও কাজ করে যাচ্ছে সমানভাবে।

এ প্রসঙ্গে প্রচার সম্পাদক এহসান সিরাজ সামাজিক সেবার বিবরণ দিয়ে বলেন, শুধু কাফন-দাফন নয়- লকডাউনের শুরু থেকেই সামাজিক সেবায় অবদান রেখে চলেছে ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন।

ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশনের সদস্যদের একাংশ, ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও জানান, চাল, ডাল, আলু ও সয়াবিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করি আমরা। বর্তমানে জেলাভিত্তিক টিম থেকে ডাটা গ্রহণ করে গরিব, দিনমজুর ও বলতে না পারা অসহায় পরিবারকে বিকাশ একাউন্টে নগদ অর্থ পাঠাচ্ছি। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শুরু করে নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকার প্রায় দেড় হাজার মানুষের কাছে অনুদান পৌঁছে দিয়েছি।

ফাউন্ডেশনের অর্থ সম্পাদক মাওলানা জিয়াউল আশরাফ বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার মানুষের বৃত্তান্ত জমা রয়েছে। কিন্তু এত মানুষকে সহায়তা করার মতো ফান্ড নেই। ইতোপূর্বে হৃদয়বান ও বিত্তশালী লোকদের পক্ষ থেকে পাওয়া অনুদান আমানতের সঙ্গে প্রাপ্য পরিবারে পৌঁছে দিয়েছি। বর্তমানে যেভাবে আবেদন আসছে এবং সেসব পরিবারের যে করুণ অবস্থা তা সহ্য করার মতো নয়। কিন্তু আমাদের ফান্ড খালি। এমতাবস্থায় হৃদয়বান ও বিত্তশালীরা এগিয়ে না এলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।

পবিত্র রমজানে কোনো আয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে প্রতি পরিবারের জন্য ২ হাজার টাকার প্যাকেজ করেছি আমরা। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে আমাদের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব বলে আশাবাদী।