করোনাকালে যেসব আলেম ও ইসলামি রাজনীতিক ইন্তেকাল করেছেন



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
করোনাকালে যেসব আলেম ও ইসলামি রাজনীতিক ইন্তেকাল করেছেন, ছবি: বার্তা গ্রাফিক্স

করোনাকালে যেসব আলেম ও ইসলামি রাজনীতিক ইন্তেকাল করেছেন, ছবি: বার্তা গ্রাফিক্স

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস রোগের সূচনা। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এর পর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয় তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হবার তিন মাস পুরো হয়েছে ৮ জুন।

১৩ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্তু এই সময়টা আলেম-উলামাদের কাছে বেদনাদায়ক সময় হিসেবে চিহ্নিত। কারণ করোনার দহনকালে বাংলাদেশে আমরা হারিয়েছি শ্রদ্ধাভাজন ও শীর্ষস্থানীয় আলেমদের। অল্প সময়ের ব্যবধানে এতজন প্রতিথযশা আলেমের ইন্তেকাল বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য দুঃখজনক বিষয়।

এই আলেমরা কোরআন-হাদিসের শিক্ষা বিস্তার এবং দ্বীনের খেদমতে সারা জীবন ত্যাগ করেছেন। শিরক, বিদআত, কুসংস্কারমুক্ত জীবন গঠনে মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। সুন্নতে রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণসহ মানবতার কল্যাণে জীবন ব্যয় করেছেন। ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং ইসলাম অবমাননারোধসহ ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের মাঝে তাদের অবস্থান ছিলো রহমতস্বরূপ, তারা ছিলেন আমাদের অভিভাবক।

আমরা জানি, নির্ধারিত সময় এলে সবাইকে চলে যেতে হবে। আল্লাহতায়ালার এ বিধানকে বিশ্বাস করতে হবে। হাদিসের ভাষ্য, ‘মওতুল আলেমে, মওতুল আলামে’ একজন আলেমের মৃত্যু যেন একটি জাহানের মৃত্যু। আলেমরা হচ্ছেন- পৃথিবীর বুকে হেদায়েতের বাতিস্বরূপ।

পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের মাঝে তারা থাকা অবস্থায় তাদের মূল্যায়ন করি না। বরং তাদের দুর্বলতাগুলোর দিকে তাকিয়ে, তাদের গুণাবলি সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম। তাদের দ্বারা যতটুকু উপকৃত হওয়া সম্ভব সেটা গ্রহণ করি না। কিন্তু যখন তারা বিদায় নিয়ে চলে যান, তখন তাদের মূল্য অনুধাবন করে আফসোস করি। উপলব্ধিটা আগে আসে না। এই মন্দ স্বভাব আমাদের থেকে কবে বিদায় নেবে জানি না। তবে এর অবসান দরকার। আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হলো- আমরা যেন বর্তমান আকাবিরের মূল্য দেই এবং সর্বদা তাদের সুস্থতা ও দীর্ঘ হায়াতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। আল্লাহতায়ালা যেন আমাদেরকে তাদের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার তওফিক দান করেন এবং নির্ধারিত সময়ে তাদের বিদায়ের পর তাদের যোগ্য উত্তরসূরী তৈরি করে দেন।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী (৮ মার্চ) শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ইন্তেকাল হওয়া আলেম ও ইসলামি রাজনীতিকদের কয়েকজনকে নিয়ে আজকের এই লেখা। লেখায় ক্রমিক সাজানো হয়েছে মৃত্যুর তারিখ হিসেবে।

আল্লামা আবদুল আলীম আল-হুসাইনী রহ.
১৮ মার্চ রাতে ইন্তেকাল করেন নারায়ণগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী হাজীপাড়া মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল আলীম আল-হুসাইনী। তিনি ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম শাইখুল আরব ওয়াল আজম সাইয়্যিদ হোসাইন আহমাদ মাদানি রহমাতুল্লাহি আলাইহির দীর্ঘ আট বছর সান্নিধ্য পাওয়া একজন সুযোগ্য শাগরিদ ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমাদ শফীর সহপাঠী ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ১০৪ বছর।

দীর্ঘ ত্রিশ বছর দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় বোখারি শরিফের দরস দিয়েছেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ মারকাযুল উলূম আল ইসলামিয়া হাজীপাড়া মাদরাসায় তের বছর যাবত শাইখুল হাদিস দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৮ মার্চ রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থতায় ভুগতেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি চার ছেলে, চার মেয়ে এবং অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত ও অনুরাগী রেখে গেছেন।

শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল হাই রহ.
সিলেটের বরেণ্য আলেম ও বাংলাদেশের প্রবীণ আলেমদের অন্যতম শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল হাই ২৮ মার্চ ইন্তেকাল করেন। নিজ বাড়ির পাশে মারকাজু তালিমিন্নিসা বংশিবপাশা, আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ নামে একটি মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। একইসঙ্গে তিনি সিলেটের একাধিক মাদরাসার শাইখুল হাদিস ছিলেন। বর্ষিয়ান এই আলেম নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৮ বছর। তিনি পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন গুণগ্রাহী ও ছাত্র রেখে যান।

শায়খে ইমামবাড়ি আল্লামা আবদুল মোমিন রহ.
৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শাইখুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর খলিফা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ও জামেয়া দারুল কোরআন সিলেটের শাইখুল হাদিস, প্রখ্যাত বুজুর্গ পীরে কামেল আল্লামা শাহ আবদুল মোমিন (শায়খে ইমামবাড়ি)। ৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ গৃহে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৯ বছর। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন তিনি বিভিন্ন শারিরীক অসুস্থতায় ভুগেছেন।

মুফতি ড. আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী রহ.
৮ এপ্রিল বাদ মাগরিব ইন্তিকাল করেন ইসলামি অর্থনীতিবিদ, শাইখুল হাদিস, মুফতি ড. আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী। কর্মজীবনে তিনি ঢাকার ইসলামপুরস্থ তাতিবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ঐতিহ্যবাহী মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস ছিলেন। তিনি জামালুল কোরআন মাদরাসা গেন্ডারিয়ায় বোখারির দরস দিতেন। তিনি ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর শীর্ষস্থানীয় খলিফাদের মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া তিনি সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্ট ব্যাংক শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুর্মিটোলা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর।

মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী রহ.
১৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ইন্তেকাল করেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী (মির্জাপুরের পীর সাহেব)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০। বার্ধক্যজনিত কারণে ও দীর্ঘদিন শারিরীক অসুস্থতায় ভুগে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মাওলানা আবদুর রহীম বোখারি রহ.
১৬ এপ্রিল দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রহীম বোখারি। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বোখারীর ছোট ভাই। আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের পরিদর্শক ও চকরিয়া ইমাম বোখারি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। দার্শনিক রাজনীতিবিদ খতিবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ.-এর একান্ত শিষ্য, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা, গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী আলেম ও সুবক্তা ছিলেন তিনি।

মাওলানা আবদুর রহীম বোখারি ডায়াবেটিক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ডাক্তারের নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন। তার বয়স হয়েছিলো ৭১। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, চার মেয়ে সন্তানসহ অসংখ্য শাগরিদ ও গুণগ্রাহী রেখে যান।

আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী রহ.
১৭ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কোরআন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেড়তলা জামিয়া রাহমানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী। ১৭ এপ্রিল মাগরিবের পূর্বে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। বেশ কয়েক ধরে তিনি দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দীর্ঘ সময় আমেরিকায় ছিলেন। তার বেশ কয়েকবার অপারেশন এবং কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিলো। সর্বশেষ গত কয়েক মাস ধরে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী বাংলদেশের একজন প্রখ্যাত ওয়ায়েজ। তিনি প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি দাওয়াতি ময়দানে কাজ করেছেন। দাওয়াতি কাজে সফর করেছেন- ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ।

শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী রহ.
বৃহত্তর সিলেট বিভাগের শীর্ষ আলেম মাওলানা আবদুল মুমিত (৭২) ঢেউপাশী ২৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মাওলানা আবদুল মুমিত দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ঢেউপাশা গ্রামের নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য সিলেট নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রচারবিমুখ সাদাসিধে জীবনের অধিকারী এই আলেম হাদিসের দক্ষ শিক্ষক হিসেবে কওমি অঙ্গনের মাদরাসাগুলোতে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। বুধবার (২৯ এপ্রিল) দেশব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন বিবেচনায় পারিবারিকভাবে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী ১৯৪৮ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ঢেউপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর সিলেটের শীর্ষ কওমি মাদরাসা গহরপুর থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। পারিবারিক জীবনে ৬ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী ছিলেন সবার বড়। তিনি ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক।

মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী রহ.
দেশের প্রবীণ রাজনীতিবীদ, ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী ১১ মে রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪। ইফতারের পর মাগরিবের নামাজের অজু করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন মাওলানা নেজামী। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নরসিংদীর শিবপুরের মুন্সেফের চর ইটাখোলা ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। তিনি দৈনিক সরকার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজনসহ অগণিত গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সাদামাটা জীবনের অধিকারী ও সহজ-সরল মানুষ হিসেবে মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর খ্যাতি ছিল। তাকে ইসলামি রাজনীতির জীবন্ত কোষ বলা হয়। নেজামে ইসলামে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। ইসলামি আন্দোলনের বিভিন্ন বাঁক ও প্রতিকূল মুহূর্তেও তিনি আক্রমণাত্মক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে দিতেন, এটা তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল।

মুফতি ওবায়দুল মাতিন রহ.
ঠাকুরগাঁও গোয়ালপাড়া জামেয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমীয়া দারুস সালাম কওমি মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা মুফতি ওবায়দুল মাতিন ৫২ বছর বয়সে ১২ মে ইন্তেকাল করলেন। এর আগে তিনি বাংলাহিলি আজিজিয়া মাদরাসায় প্রধান মুফতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তিনি দাওরায়ে হাদিস এবং ইফতা সম্পন্ন করেন। খুলনার খালিশপুরের একটি মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে ২ বসর দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাহিলি আজিজিয়া আনোয়ারুল উলুম মাদরাসা, হাকিমপুর, দিনাজপুরে যোগ দেন। সেখানে তিনি মুহাদ্দিস ও মুফতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এর পর যোগ দেন ঠাকুরগাঁও, গোয়ালপাড়া দারুসসালাম মাদরাসায়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন।

মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের রহ
চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফের মুহাদ্দিস মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের ২০ মে ইন্তেকাল করেন। প্রচারবিমুখ এই আলেম অত্যন্ত পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি মহেশখালীর অন্তর্গত কালাগাজির পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাঁচ ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

১৯৮০ সালে পটিয়া মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। চার ছেলে ও দুই কন্যার জনক মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের কক্সবাজার খুরুশকুল মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে ৮ বছর শিক্ষকতা শেষে ১৯৮৮ সালে আল্লামা সুলতান যওক নদভীর আহবানে সাড়া দিয়ে দারুল মাআরিফে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এখানে ৩২ বছর শিক্ষকতা করেন। লেখক ও কবি হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। তাকে জামেয়া দারুল মাআরিফের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

আল্লামা শাহ তৈয়ব রহ.
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদরাসা আল জামিয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ্ তৈয়ব ২৪ মে দিবাগত রাত দেড়টায় চটগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই আলেম বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

দেশের অন্যতম শীর্ষ এই আলেম রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। ইতেকাফ শেষে অসুস্থতাবোধ করলে তাকে রাতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি জায়নামাজে সেজদারত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। জিরি মাদরাসায় তিনি আল্লামা মুফতি নুরুল হক রহ.-এর ইন্তেকালের পর থেকে দীর্ঘ ৩৬ বছর মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ে, নাতি-নাতনি, অসংখ্য ছাত্র, মুরিদ ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইমামতিতে জিরি মাদরাসার মাঠে তার জানাজার নামাজ শেষে মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রিস রহ.
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জামিয়া আরাবিয়া নাছিরুল উলুম নাজিরহাট বড় মাদরাসার মোহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস ২৭ মে, বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ৭৯ বছল বয়সী এই আলেম বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর মাদরাসার মাঠে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ইমামতিতে মরহুমের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ২০০৪ সালে আল্লামা শাহ শামসুদ্দিনের রহ.-এর ইন্তেকালের পর থেকে নাজিরহাট মাদরাসার মোহতামিমের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রিস।

মাওলানা আনওয়ারুল হক চৌধুরী রহ.
বৃহত্তর সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম, বালাগঞ্জের হজরত শাহ সুলতান রহ. মাদরাসা এবং মহিলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আনওয়ারুল হক চৌধুরী ১ জুন, সোমবার ভোর ৪টা ৫০মিনিটে সুলতানপুরস্থ নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ওইদিনই দুপুরে সুলতানপুর মাদরাসা প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আনোয়ারুল হক চৌধুরী সিলেটে নারী শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। প্রচারবিমুখ, সুন্নতের অনুসারী প্রথিতযশা এই প্রবীণ আলেম আমৃত্যু ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আপামর জনতার মাঝে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।

মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ বাশার রহ.
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ বাশার ৮ জুন রাত ১১টায় স্ট্রোক করে মিরপুরস্থ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ২ কন্যা রেখে গেছেন। মঙ্গলবার বাদ জোহর মরহুমের জন্মস্থান পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার বড়ইঘনিয়া গ্রামে জানাজার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর রহ.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুফতি নূরুল্লাহ রহ.-এর বড় ছেলে মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর ১০ জুন, বুধবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর নরসিংদী রায়পুরা পান্থশালা মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন। নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় অনেক দ্বীনি খেদমতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তিনি সুবক্তা হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ।

এই প্রতিবেদন রচনার সময় সংবাদ আসে, টুমচর ফাজিল মাদরাসার সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল ও লক্ষ্মীপুর চকবাজার জামে মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ইন্তেকাল করেছেন। তিনি বিখ্যাত ওয়ায়েজ মাওলানা মুশতাকুন নবীর বাবা। ১৩ জুন, শনিবার ফজরের আগে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন তিনি।

এই সময়ের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন দেওবন্দ মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা সাঈদ পালনপুরী। তিনি ১৯ মে সকাল ৭টায় মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। দারুল উলুম দেওবন্দে তিনি প্রায় একযুগ ধরে বোখারি শরিফের দরস প্রদান করেছেন। আরও ইন্তেকাল করেছেন বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা কুতুব উদ্দীন। ২০ মে বিকাল ৫টার দিকে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখিত আলেম ছাড়া আরও অনেক আলেম, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনকে আমরা হারিয়েছি। তাদের প্রত্যেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা তাদেরকে বেহেশতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;

মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারির সময় মৃতদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।

করোনা মহামারির সময় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

বুধবার (২৪ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপ দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। যদিও করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করাকে নিরাপদ বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।

করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সেসময় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে হবে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানরা মুসলিমদের লাশকে কেবলার দিকে মুখ করে দাফন করে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মরদেহ হিন্দুদের মতো সাধারণত দাহ করা হয়।

শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এই ঘটনার আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

;

ব্রিটিশ রাজনীতিতে মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথমবারের মতো দেশটির মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী। শাবানা মাহমুদ নামের ওই মন্ত্রী পবিত্র কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন।

এ ছাড়া আরও দুই মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। তিনি গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হয়েছেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ।

মুসলিম নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে ২০১৯ সালে ১৯ জন এমপি ছিলেন। এবারের নির্বাচনে ২৫ জন মুসলিম নির্বাচিত হয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম এমপি এবারই নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচিতদের মধ্যে ১৮ জন লেবার পার্টির, চারজন স্বতন্ত্র, দুজন কনজারভেটিভ পার্টির এবং একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের।

মুসলিম নেটওয়ার্কের দাবি, গাজার প্রতি মুসলিম ভোটারদের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। ফলে চারজন মুসলিমসহ পাঁচটি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

তারা মোট ৬৫০ এমপির প্রায় ৪ শতাংশ। তবে মুসলিমরা যেহেতু ব্রিটেনের জনসংখ্যার ৬.৫ শতাংশ, তাই হাউস অফ কমন্সে মুসলিমদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরও ১৭ জন এমপি দরকার।

নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ইসলামি মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মাসুদ শাজারেহ বলেছেন, ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলমানরা প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ব্রিটেনে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয় প্রায় এক শতাব্দী আগে। বর্তমানে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

মাসুদ শাজারেহ সম্প্রতি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা কার্যকর শক্তিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানরা। এটাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহারের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে মুসলমানদের অসন্তোষের কারণে ব্রিটিশ লেবার পার্টি কয়েকটি আসন হারিয়েছে। এই প্রভাব ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের মতো আরও সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি মুসলমানদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তা মানুষের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করে।

গত ৪ জুলাই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে লেবার পার্টি পাঁচ বছরের জন্য সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তবে গাজায় নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপারে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল মুসলমানেরা। তারা নির্বাচনে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

ব্রিটিশ জনগণ দেশটির খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দখলদার ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সরকারের সমর্থনের প্রতিবাদে ভোট দিয়েছে। এর অর্থ হলো, লেবার পার্টি বিজয় পেলেও সেটা তার নিজের নীতির কারণে পায়নি বরং বিরোধী দলের অপছন্দনীয় কিছু কাজ ও নীতির কারণে মানুষ বিদ্যমান বিকল্প ধারাটিকে বেছে নিয়েছে।

;