করোনাকালে যেসব আলেম ও ইসলামি রাজনীতিক ইন্তেকাল করেছেন



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
করোনাকালে যেসব আলেম ও ইসলামি রাজনীতিক ইন্তেকাল করেছেন, ছবি: বার্তা গ্রাফিক্স

করোনাকালে যেসব আলেম ও ইসলামি রাজনীতিক ইন্তেকাল করেছেন, ছবি: বার্তা গ্রাফিক্স

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস রোগের সূচনা। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এর পর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয় তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হবার তিন মাস পুরো হয়েছে ৮ জুন।

১৩ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্তু এই সময়টা আলেম-উলামাদের কাছে বেদনাদায়ক সময় হিসেবে চিহ্নিত। কারণ করোনার দহনকালে বাংলাদেশে আমরা হারিয়েছি শ্রদ্ধাভাজন ও শীর্ষস্থানীয় আলেমদের। অল্প সময়ের ব্যবধানে এতজন প্রতিথযশা আলেমের ইন্তেকাল বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য দুঃখজনক বিষয়।

এই আলেমরা কোরআন-হাদিসের শিক্ষা বিস্তার এবং দ্বীনের খেদমতে সারা জীবন ত্যাগ করেছেন। শিরক, বিদআত, কুসংস্কারমুক্ত জীবন গঠনে মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। সুন্নতে রাসূলের পরিপূর্ণ অনুসরণসহ মানবতার কল্যাণে জীবন ব্যয় করেছেন। ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং ইসলাম অবমাননারোধসহ ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠী মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের মাঝে তাদের অবস্থান ছিলো রহমতস্বরূপ, তারা ছিলেন আমাদের অভিভাবক।

আমরা জানি, নির্ধারিত সময় এলে সবাইকে চলে যেতে হবে। আল্লাহতায়ালার এ বিধানকে বিশ্বাস করতে হবে। হাদিসের ভাষ্য, ‘মওতুল আলেমে, মওতুল আলামে’ একজন আলেমের মৃত্যু যেন একটি জাহানের মৃত্যু। আলেমরা হচ্ছেন- পৃথিবীর বুকে হেদায়েতের বাতিস্বরূপ।

পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের মাঝে তারা থাকা অবস্থায় তাদের মূল্যায়ন করি না। বরং তাদের দুর্বলতাগুলোর দিকে তাকিয়ে, তাদের গুণাবলি সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম। তাদের দ্বারা যতটুকু উপকৃত হওয়া সম্ভব সেটা গ্রহণ করি না। কিন্তু যখন তারা বিদায় নিয়ে চলে যান, তখন তাদের মূল্য অনুধাবন করে আফসোস করি। উপলব্ধিটা আগে আসে না। এই মন্দ স্বভাব আমাদের থেকে কবে বিদায় নেবে জানি না। তবে এর অবসান দরকার। আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য হলো- আমরা যেন বর্তমান আকাবিরের মূল্য দেই এবং সর্বদা তাদের সুস্থতা ও দীর্ঘ হায়াতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। আল্লাহতায়ালা যেন আমাদেরকে তাদের মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার তওফিক দান করেন এবং নির্ধারিত সময়ে তাদের বিদায়ের পর তাদের যোগ্য উত্তরসূরী তৈরি করে দেন।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী (৮ মার্চ) শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ইন্তেকাল হওয়া আলেম ও ইসলামি রাজনীতিকদের কয়েকজনকে নিয়ে আজকের এই লেখা। লেখায় ক্রমিক সাজানো হয়েছে মৃত্যুর তারিখ হিসেবে।

আল্লামা আবদুল আলীম আল-হুসাইনী রহ.
১৮ মার্চ রাতে ইন্তেকাল করেন নারায়ণগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী হাজীপাড়া মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল আলীম আল-হুসাইনী। তিনি ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম শাইখুল আরব ওয়াল আজম সাইয়্যিদ হোসাইন আহমাদ মাদানি রহমাতুল্লাহি আলাইহির দীর্ঘ আট বছর সান্নিধ্য পাওয়া একজন সুযোগ্য শাগরিদ ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমাদ শফীর সহপাঠী ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো প্রায় ১০৪ বছর।

দীর্ঘ ত্রিশ বছর দেশের বিভিন্ন মাদরাসায় বোখারি শরিফের দরস দিয়েছেন। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ মারকাযুল উলূম আল ইসলামিয়া হাজীপাড়া মাদরাসায় তের বছর যাবত শাইখুল হাদিস দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৮ মার্চ রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থতায় ভুগতেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি চার ছেলে, চার মেয়ে এবং অসংখ্য ছাত্র, ভক্ত ও অনুরাগী রেখে গেছেন।

শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল হাই রহ.
সিলেটের বরেণ্য আলেম ও বাংলাদেশের প্রবীণ আলেমদের অন্যতম শাইখুল হাদিস আল্লামা আবদুল হাই ২৮ মার্চ ইন্তেকাল করেন। নিজ বাড়ির পাশে মারকাজু তালিমিন্নিসা বংশিবপাশা, আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ নামে একটি মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। একইসঙ্গে তিনি সিলেটের একাধিক মাদরাসার শাইখুল হাদিস ছিলেন। বর্ষিয়ান এই আলেম নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৮ বছর। তিনি পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন গুণগ্রাহী ও ছাত্র রেখে যান।

শায়খে ইমামবাড়ি আল্লামা আবদুল মোমিন রহ.
৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেন উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শাইখুল ইসলাম সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি রহ.-এর খলিফা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ও জামেয়া দারুল কোরআন সিলেটের শাইখুল হাদিস, প্রখ্যাত বুজুর্গ পীরে কামেল আল্লামা শাহ আবদুল মোমিন (শায়খে ইমামবাড়ি)। ৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ গৃহে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৯ বছর। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন তিনি বিভিন্ন শারিরীক অসুস্থতায় ভুগেছেন।

মুফতি ড. আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী রহ.
৮ এপ্রিল বাদ মাগরিব ইন্তিকাল করেন ইসলামি অর্থনীতিবিদ, শাইখুল হাদিস, মুফতি ড. আবদুল্লাহ বিক্রমপুরী। কর্মজীবনে তিনি ঢাকার ইসলামপুরস্থ তাতিবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ঐতিহ্যবাহী মোস্তফাগঞ্জ মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস ছিলেন। তিনি জামালুল কোরআন মাদরাসা গেন্ডারিয়ায় বোখারির দরস দিতেন। তিনি ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর শীর্ষস্থানীয় খলিফাদের মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া তিনি সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্ট ব্যাংক শরিয়াহ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন। ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুর্মিটোলা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬০ বছর।

মাওলানা মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী রহ.
১৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ইন্তেকাল করেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী (মির্জাপুরের পীর সাহেব)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০। বার্ধক্যজনিত কারণে ও দীর্ঘদিন শারিরীক অসুস্থতায় ভুগে তিনি ইন্তেকাল করেন।

মাওলানা আবদুর রহীম বোখারি রহ.
১৬ এপ্রিল দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন মুহাদ্দিস মাওলানা আবদুর রহীম বোখারি। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম আল্লামা মুফতি আবদুল হালিম বোখারীর ছোট ভাই। আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের পরিদর্শক ও চকরিয়া ইমাম বোখারি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। দার্শনিক রাজনীতিবিদ খতিবে আজম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ.-এর একান্ত শিষ্য, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা, গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী আলেম ও সুবক্তা ছিলেন তিনি।

মাওলানা আবদুর রহীম বোখারি ডায়াবেটিক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ডাক্তারের নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন। তার বয়স হয়েছিলো ৭১। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, চার মেয়ে সন্তানসহ অসংখ্য শাগরিদ ও গুণগ্রাহী রেখে যান।

আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী রহ.
১৭ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন বিশ্বনন্দিত মুফাসসিরে কোরআন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেড়তলা জামিয়া রাহমানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী। ১৭ এপ্রিল মাগরিবের পূর্বে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। বেশ কয়েক ধরে তিনি দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি দীর্ঘ সময় আমেরিকায় ছিলেন। তার বেশ কয়েকবার অপারেশন এবং কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিলো। সর্বশেষ গত কয়েক মাস ধরে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী বাংলদেশের একজন প্রখ্যাত ওয়ায়েজ। তিনি প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি দাওয়াতি ময়দানে কাজ করেছেন। দাওয়াতি কাজে সফর করেছেন- ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ।

শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী রহ.
বৃহত্তর সিলেট বিভাগের শীর্ষ আলেম মাওলানা আবদুল মুমিত (৭২) ঢেউপাশী ২৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মাওলানা আবদুল মুমিত দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ঢেউপাশা গ্রামের নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য সিলেট নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রচারবিমুখ সাদাসিধে জীবনের অধিকারী এই আলেম হাদিসের দক্ষ শিক্ষক হিসেবে কওমি অঙ্গনের মাদরাসাগুলোতে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। বুধবার (২৯ এপ্রিল) দেশব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন বিবেচনায় পারিবারিকভাবে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী ১৯৪৮ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ঢেউপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর সিলেটের শীর্ষ কওমি মাদরাসা গহরপুর থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। পারিবারিক জীবনে ৬ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে মাওলানা আবদুল মুমিত ঢেউপাশী ছিলেন সবার বড়। তিনি ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক।

মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী রহ.
দেশের প্রবীণ রাজনীতিবীদ, ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান ও নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী ১১ মে রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪। ইফতারের পর মাগরিবের নামাজের অজু করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন মাওলানা নেজামী। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নরসিংদীর শিবপুরের মুন্সেফের চর ইটাখোলা ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। তিনি দৈনিক সরকার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজনসহ অগণিত গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সাদামাটা জীবনের অধিকারী ও সহজ-সরল মানুষ হিসেবে মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর খ্যাতি ছিল। তাকে ইসলামি রাজনীতির জীবন্ত কোষ বলা হয়। নেজামে ইসলামে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। ইসলামি আন্দোলনের বিভিন্ন বাঁক ও প্রতিকূল মুহূর্তেও তিনি আক্রমণাত্মক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে দিতেন, এটা তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল।

মুফতি ওবায়দুল মাতিন রহ.
ঠাকুরগাঁও গোয়ালপাড়া জামেয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমীয়া দারুস সালাম কওমি মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা মুফতি ওবায়দুল মাতিন ৫২ বছর বয়সে ১২ মে ইন্তেকাল করলেন। এর আগে তিনি বাংলাহিলি আজিজিয়া মাদরাসায় প্রধান মুফতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তিনি দাওরায়ে হাদিস এবং ইফতা সম্পন্ন করেন। খুলনার খালিশপুরের একটি মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে ২ বসর দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাহিলি আজিজিয়া আনোয়ারুল উলুম মাদরাসা, হাকিমপুর, দিনাজপুরে যোগ দেন। সেখানে তিনি মুহাদ্দিস ও মুফতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এর পর যোগ দেন ঠাকুরগাঁও, গোয়ালপাড়া দারুসসালাম মাদরাসায়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি সেখানে কর্মরত ছিলেন।

মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের রহ
চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফের মুহাদ্দিস মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের ২০ মে ইন্তেকাল করেন। প্রচারবিমুখ এই আলেম অত্যন্ত পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি মহেশখালীর অন্তর্গত কালাগাজির পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাঁচ ভাইবোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

১৯৮০ সালে পটিয়া মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। চার ছেলে ও দুই কন্যার জনক মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের কক্সবাজার খুরুশকুল মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে ৮ বছর শিক্ষকতা শেষে ১৯৮৮ সালে আল্লামা সুলতান যওক নদভীর আহবানে সাড়া দিয়ে দারুল মাআরিফে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এখানে ৩২ বছর শিক্ষকতা করেন। লেখক ও কবি হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। তাকে জামেয়া দারুল মাআরিফের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

আল্লামা শাহ তৈয়ব রহ.
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদরাসা আল জামিয়াতুল আরাবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ্ তৈয়ব ২৪ মে দিবাগত রাত দেড়টায় চটগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ৭৯ বছর বয়সী প্রবীণ এই আলেম বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

দেশের অন্যতম শীর্ষ এই আলেম রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। ইতেকাফ শেষে অসুস্থতাবোধ করলে তাকে রাতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি জায়নামাজে সেজদারত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। জিরি মাদরাসায় তিনি আল্লামা মুফতি নুরুল হক রহ.-এর ইন্তেকালের পর থেকে দীর্ঘ ৩৬ বছর মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ে, নাতি-নাতনি, অসংখ্য ছাত্র, মুরিদ ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইমামতিতে জিরি মাদরাসার মাঠে তার জানাজার নামাজ শেষে মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রিস রহ.
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জামিয়া আরাবিয়া নাছিরুল উলুম নাজিরহাট বড় মাদরাসার মোহতামিম ও শাইখুল হাদিস আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস ২৭ মে, বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ৭৯ বছল বয়সী এই আলেম বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর মাদরাসার মাঠে আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর ইমামতিতে মরহুমের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজা শেষে মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ২০০৪ সালে আল্লামা শাহ শামসুদ্দিনের রহ.-এর ইন্তেকালের পর থেকে নাজিরহাট মাদরাসার মোহতামিমের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ ইদ্রিস।

মাওলানা আনওয়ারুল হক চৌধুরী রহ.
বৃহত্তর সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ আলেম, বালাগঞ্জের হজরত শাহ সুলতান রহ. মাদরাসা এবং মহিলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আনওয়ারুল হক চৌধুরী ১ জুন, সোমবার ভোর ৪টা ৫০মিনিটে সুলতানপুরস্থ নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ওইদিনই দুপুরে সুলতানপুর মাদরাসা প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আনোয়ারুল হক চৌধুরী সিলেটে নারী শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। প্রচারবিমুখ, সুন্নতের অনুসারী প্রথিতযশা এই প্রবীণ আলেম আমৃত্যু ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আপামর জনতার মাঝে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।

মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ বাশার রহ.
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ বাশার ৮ জুন রাত ১১টায় স্ট্রোক করে মিরপুরস্থ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ পুত্র ও ২ কন্যা রেখে গেছেন। মঙ্গলবার বাদ জোহর মরহুমের জন্মস্থান পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার বড়ইঘনিয়া গ্রামে জানাজার নামাজ শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর রহ.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মুফতি নূরুল্লাহ রহ.-এর বড় ছেলে মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর ১০ জুন, বুধবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ নূর নরসিংদী রায়পুরা পান্থশালা মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন। নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় অনেক দ্বীনি খেদমতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তিনি সুবক্তা হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ।

এই প্রতিবেদন রচনার সময় সংবাদ আসে, টুমচর ফাজিল মাদরাসার সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল ও লক্ষ্মীপুর চকবাজার জামে মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ইন্তেকাল করেছেন। তিনি বিখ্যাত ওয়ায়েজ মাওলানা মুশতাকুন নবীর বাবা। ১৩ জুন, শনিবার ফজরের আগে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন তিনি।

এই সময়ের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন দেওবন্দ মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা সাঈদ পালনপুরী। তিনি ১৯ মে সকাল ৭টায় মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। দারুল উলুম দেওবন্দে তিনি প্রায় একযুগ ধরে বোখারি শরিফের দরস প্রদান করেছেন। আরও ইন্তেকাল করেছেন বায়তুশ শরফের পীর মাওলানা কুতুব উদ্দীন। ২০ মে বিকাল ৫টার দিকে ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখিত আলেম ছাড়া আরও অনেক আলেম, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিনকে আমরা হারিয়েছি। তাদের প্রত্যেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা তাদেরকে বেহেশতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

   

রোজার প্রথম সপ্তাহে মসজিদে নববিতে ৫২ লাখ মুসল্লি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে মদিনার মসজিদে নববিতে ৫২ লাখের বেশি মুসল্লি উপস্থিত হয়েছে। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিতে অংশ নিয়েছেন।

মসজিদে নববি তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল অথরিটি বিভাগ রমজান মাসে মুসল্লিদের পরিষেবাবিষয়ক এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮ জন পবিত্র রওজা শরিফে নবী কারিম (সা.)-কে সালাম নিবেদন করেছে। একই সময়ে রওজা শরিফে নামাজ পড়েছেন ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ জন পুরুষ ও ১০ লাখ সাত হাজার ৬৯৭ জন নারী। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে শৃঙ্খলাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা নারী-পুরুষ সব মুসল্লির যাতায়াত সুনিশ্চিত করা হয়।

তাতে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহে বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ১০ হাজার ৪৮২ জন বিশেষ পরিষেবা পেয়েছেন।

তা ছাড়া বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ ১০ হাজার ৪১২ জনকে একাধিক ভাষায় যোগাযোগ সেবা দেওয়া হয়। আর মসজিদের লাইব্রেরিতে শিক্ষামূলক পরিষেবা থেকে উপকৃত হয়েছেন ১২ হাজার ২৭৯ জন এবং মিউজিয়ামে চার হাজার ৫৬৭ জন পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মসজিদে আসা এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪৯ জন দর্শনার্থীকে নানা রকম উপহারসামগ্রী দেওয়া হয় এবং মসজিদের সমন্বিত পরিষেবার মাধ্যমে ছয় লাখ ৪৮ হাজার ৪১১ জনকে সেবা দেওয়া হয়। তা ছাড়া এক লাখ ৪৪ হাজার জমজম পানির বোতল বিতরণ করা হয় এবং রোজাদারদের মধ্যে ১৫ হাজার ২৪৩টি ইফতারির খাবার বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ২৮ কোটির বেশি মুসল্লি পবিত্র মসজিদে নববিতে আগমন করে। একই বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম ওমরাহ পালন করে, যা ছিল সৌদি আরবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যা। আগামী হজ মৌসুম শুরুর আগেই দুই কোটির বেশি মুসল্লি ওমরাহ পালন করবে বলে আশা করছে সৌদি আরব।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যায়



মুফতি মো. আবদুল্লাহ
রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

রোজার মাসয়ালা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পবিত্র মাহে রমজানের ফরজ রোজা আদায় করছেন। কিন্তু কি কারণে রোজার পবিত্রতা নষ্ট হয়, কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কি কারণে ভঙ্গ হয় না, তা অনেকের কাছে অজানা। আজকে এ জাতীয় মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হলো-

রোজা নষ্ট হওয়ার কারণসমূহ
১. কানে ও নাকে ঔষধ ঢেলে দেওয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
৪. কোনো নারীর সঙ্গে আলিঙ্গন বা মাখামাখিতে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া।
৫. এমন কোনো বস্তু গিলে ফেলা যা সাধারণত খাওয়া হয় না। যেমন কাঠ, লোহা, কাঁচা গম ইত্যাদি।
৬. লোবান বা উদ কাষ্ঠ ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে বা কণ্ঠনালীর ভেতরে টেনে নেওয়া; বিড়ি, সিগারেট ও হোক্কা পান করারও একই বিধান।
৭. ভুলে পানাহার করার পর এমনটি ধারণা করে যে, আমার রোজা নষ্ট হয়ে গেছে; অতপর পানাহার করা।
৮. রাত বাকী আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পর পানাহার করা।
৯. সূর্য ডুবে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা। উল্লেখ্য, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যায় এবং শুধু রোজা কাজা করতে হয়; কাফফারা আবশ্যক হয় না।
১০. ভুলে নয়, জেনে-বুঝে সুস্থ-সবল অবস্থায়, কোনো ওজর-সমস্যা ব্যতীত দিনের বেলায় পানাহার করলে অথবা স্ত্রী-সঙ্গম করলে, সেই রোজার কাজাও করতে হয় এবং কাফফারাও প্রদান করতে হয়। ‘কাফফারা’ হলো, একটি ক্রীতদাস মুক্তকরণ; অথবা একাধারে ৬০টি রোজা পালন করা। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, সেক্ষেত্রে ৬০জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটপুরে খাবার খাওয়াতে হবে। এ যুগে যেহেতু শরিয়তসম্মত ক্রীতদাস বাস্তবে নেই, সে কারণে কাফফারার ক্ষেত্রে শেষোক্ত দু’টির যেকোনো একটি পালন করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়
১. রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় অপ্রয়োজনে কোনো বস্তু চিবানো অথবা লবণ ইত্যাদি জিহবায় দিয়ে থু থু ফেলে দেওয়া; টুথপেস্ট বা মাজন বা কয়লা দ্বারা দাঁত মাজা বা পরিস্কার করা।
২. সারাদিন গোসল ফরজ অবস্থায় অপবিত্র কাটিয়ে দেওয়া।
৩. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া শিঙ্গা লাগানো এবং দূর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে নিজ শরীর থেকে অন্যের জন্য রক্তদান করা মাকরূহ; কিন্তু তাতে রোজা নষ্ট হয় না।
৪. রোজা অবস্থায় গীবত করা তথা কারও অবর্তমানে তার দোষ বর্ণনা করা রোজার ক্ষেত্রে মাকরূহ বটে; কিন্তু এ গীবত কর্মটি অন্যতম একটি হারাম কাজ ও কবিরা গোনাহ বটে। মাহে রমজানে এর পাপ আরও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
৫. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ, গালি-গালাজ করা; হোক তা কোনো মানুষের সঙ্গে বা কোনো জীবজন্তুকে বা কোনো প্রাণহীন জড় বস্তুকে; এসব কারণেও রোজা মাকরূহ হয়ে যায়।

যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না, মাকরূহও হয় না
১. মিসওয়া করা।
২. মাথায় বা মোচ-দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।
৩. চোখে ঔষধ বা সুরমা দেওয়া।
৪. আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. গরম ও পিপাসার কারণে গোসল করা।
৬. যেকোনো রকম ইনজেকশন বা টিকা দেওয়া।
৭. ভুলবশত পানাহার করা।
৮. অনিচ্ছাবশত গলায় ধোঁয়া বা ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৯. কানে পানি দেওয়া (২/১ ফোটা) অথবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশ করা।
১০. অনিচ্ছাকৃত বমি হওয়া।
১১. শোয়া অবস্থায় স্বপ্নদোষ হয়ে যাওয়া।
১২. দাঁত হতে রক্ত বের হওয়া এবং তা গলা অতিক্রম না করা।
১৩. ঘুমের মধ্যে বা সহবাসের কারণে রাতে গোসল ফরজ হয়েছিল, অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করা হয়নি; আর এমতাবস্থায় রোজার নিয়ত করে নেওয়া হয়েছে; তাতেও রোজার কোনো ক্ষতি নেই।

লেখক : মুফতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গবেষণা বিভাগ।

;

অশ্লীলতামুক্ত সাইবার গঠনে ১৯ বছর বয়সী আবদুল রহমানের স্বপ্ন



ফাতেমা বিনতে আশরাফ
রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

রাইডার্স ক্রিয়েশন ও রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল রহমান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের জীবন এখন অনলাইননির্ভর। ছোট থেকে বড় সবধরনের কাজ এখন অনলাইনে করা যায়। এ জন্য আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিনিয়ত নানা সেবা নিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় হলো- অনলাইনের বিস্তৃত অঙ্গনজুড়ে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। তাই মাদরাসাশিক্ষার্থী আবদুল রহমান (Abdul Rahman) স্বপ্ন দেখেন এ অঙ্গনকে অশ্লীলতামুক্ত করে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে তিনি কাজও শুরু করেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) রাইডার ভাউ অফিসিয়াল, রাইডার্স ক্রিয়েশন এবং রাইডার্স মার্টের প্রতিষ্ঠাতা। এটি বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত আইটি সলিউশন কোম্পানি। তার তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উচ্চমানের পরিষেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তিনি সফলভাবে কোম্পানিটিকে আইটি সমাধান এবং পরিষেবা প্রদানকারী একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছেন।

পাশাপাশি তিনি আরও একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নাম রাইডার্স ফাউন্ডেশন। খুব শিগগির-ই এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আবদুল রহমান। তার উদ্দেশ্য, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষের সেবা করা। অভাবে কেউ কষ্ট না পাক এবং সবার মুখে হাসি থাকুন- এই প্রত্যাশা থেকেই তিনি এটি গড়ে তুলেছেন।

আবদুল রহমান (Abdul Rahman) বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন, ছবি : সংগৃহীত

উদ্যোক্তা প্রচেষ্টার পাশাপাশি, আবদুল রহমান (Abdul Rahman) সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষতার জন্যও স্বীকৃত। তিনি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সেক্টরে কাজ করছেন এবং তার অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ার বিষয়টিসহ তার এসব কাজকর্ম নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে আবদুল রহমানের সুগভীর জ্ঞান তাকে বিশ্বব্যাপী সাইবার অঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত স্পিকার হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।

ব্যবসায়িক উদ্যোগের পাশাপাশি আবদুল রহমান তার এ অঙ্গনের মানুষদের সহযোগিতার জন্যও নিবেদিত। তিনি বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন এবং অন্যদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে তার দক্ষতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে প্রশংসিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

আবদুল রহমান একজন বাংলাদেশী উদ্যোক্তা, সোশ্যাল মিডিয়া সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ। পিরোজপুরে তার জন্ম। তিনি তার কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্ভাবনের প্রতি আবেগের মাধ্যমে আইটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া শিল্পে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

আবদুল রহমানের কে.এম. লতীফ ইনস্টিটিউশন থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট রয়েছে। একই স্কুল থেকে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট, যেখানে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত করেছেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার থেকে কোরআন-হাদিসে স্নাতকোত্তর করছেন।

সামগ্রিকভাবে আবদুল রহমান তার বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ়তা এবং উদ্ভাবনের প্রতি তার যে আবেগ, তা দিয়ে সমাজে অবদান রাখতে চান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি; অশ্লীলতামুক্ত অনলাইন গড়ে আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বপ্ন দেখেন।

;

রমজানে দশ কাজ থেকে বিরত থাকা



আহমদ যাকারিয়া, অতিথি লেখক, ইসলাম
রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

রোজা একটি ফরজ ইবাদত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাস পালন করছেন। রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এই ইবাদতটি যেনো সুন্দরভাবে আদায় করা যায়, এ জন্য সবার সর্বাত্মক চেষ্টা করা দরকার। ইসলামি স্কলারদের মতে, রমজানের ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকা দরকার; তাহলে রোজা হবে পরিপূর্ণ। ওই দশ কাজ হলো-

সেহরি না খাওয়া : অনেকে সেহরি খান না, অনেকে আবার আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নতের পরিপন্থী। ইসলামে সেহরি খাওয়ার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, কারণ ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সেহরি খায় না। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) রোজার মাঝে পার্থক্য হলো- সেহরি গ্রহণ।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬০৪

বিলম্বে ইফতার করা : রোজার পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে, যে যাবৎ মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২৩৫৫

লাইলাতুল কদর তালাশ না করা : পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সুরা কদর : ৪

হরজত রাসুলুল্লাহ (সা.) (রমজানের) শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ।’ -সহিহ বোখারি : ২০২০

মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা : একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রেখে শুধু পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ -সহিহ বোখারি : ৬০৫৭

সুন্নত ত্যাগ করা : আমাদের প্রত্যেকটি আমল হবে সুন্নত মোতাবেক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে।’ -মুসনাদে আহমাদ : ৮৮৪৩

দান-সদকা না করা : পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তাদের জন্য হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল, আর রমজানে তার এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০২

অপচয় ও অপব্যয় করা : প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয় করা থেকে বিরত থাকা। অনেকে রমজান মাসে ইফতার ও সেহরিতে এমন খরচ করেন- যার প্রয়োজন নেই। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আরাফ : ৩১

তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম করা : শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতা করলে কোরআনের হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতম তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়।’ -সহিহ বোখারি : ৭৫২৭

ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করা : রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

দুনিয়ার ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা: ইবাদত-বন্দেগি মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়ার নানা কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া-দরুদ ও তওবা-ইস্তেগফার করা উচিত।

;