স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিকদের ফিট থাকার প্রস্তুতি সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গ্রিন টি-র তুলনা নেই। নিয়ম করে যদি গ্রিন টি খাওয়া যায়, তা হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। তবে শুধু ধারাবাহিকভাবে খেলেই হবে না, গ্রিন টি খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। সেগুলি মেনে না চললে গ্রিন টি খেয়েও কোনও লাভ হয় না।
খালি পেটে খাওয়া
বিজ্ঞাপন
মুখ ধোয়ার আগেই গ্রিন টি-র কাপে চুমুক দেন অনেকে। এই অভ্যাস কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। খালি পেটে গ্রিন টি খেলে গ্যাস, অম্বল, বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। গ্রিন টি-তে রয়েছে ট্যানিন। পেট খালি থাকলে ট্যানিন হজমের গোলমাল তৈরি করে। আর কিছু না হোক, অন্তত এক গ্লাস জল খেয়েও গ্রিন টি খাওয়া জরুরি।
বেশি পরিমাণে খাওয়া
বিজ্ঞাপন
গ্রিন টি ওজন কমাতে সাহায্য করে, সেটা ঠিক। দ্রুত ওজন কমাতে অনেকে আবার দিনে কয়েক বার গ্রিন টি খেতে শুরু করেন। এই ভাবনা ভুল। বেশি গ্রিন টি খেলেই রোগা হওয়া সম্ভব, বিষয়টি ততটাও সহজ নয়। বরং পরিমাণে বেশি খেলে অনিদ্রা, উদ্বেগ, হজমের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
রাতে খাওয়া
কফি, লিকার চায়ের বদলে গ্রিন টি খান অনেকে। রাতে অফিস থেকে ফেরার পর গরম ধোঁয়া ওঠা গ্রিন টি-র কাপে চুমুক দেওয়া অনেকেরই অভ্যাস। পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, রাতে গ্রিন টি খাওয়ার ফলে ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ঘুমের অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে গ্রিন থেকে টি না খাওয়াই ভাল।
বর্তমানে আমরা এমন এক পর্যায়ে আছি যেখানে আমরা যখন কারও সঙ্গে কথা বলি প্রায়শই অনুভব করি যে তারা আসলে শুনছেই না। আবেগের প্রতি যথাযথ মনোযোগের অভাব কিংবা ক্রমাগত নেতিবাচকতা ও বিভিন্ন কারণে খুব সহজেই সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার এবং অন্যদের মধ্যে অজান্তেই তৈরি হতে পারে। আসুন মনোবিজ্ঞানের মতে সম্পর্কের ৭টি লক্ষণের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া যাক, যেসব লক্ষণের কারণে মানুষ সম্পর্কে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
সঙ্গীর প্রতি অমনোযোগী
দুজন কথা বলার সময় যখন কেউ একজন অমনোযোগী হয়, তখন অন্যজন অপমানিত বোধ করতে পারে। মনে হতে পারে সে মূল্যহীন। একসঙ্গে থাকার পরও যখন কেউ ফোন স্ক্রলিং কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থাকে এতে ক্রমাগত দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সত্যিই এমন পরিস্থিতিতে সম্পর্ক তৈরি হওয়া কঠিন। কেউ আপনার প্রতি যত্নশীল, আপনার খেয়াল রাখছে মানুষ সাধারণত এটাই পছন্দ করে। সঙ্গীর প্রতি আপনার মনোযোগ দিন এতে সঙ্গী নিজেকে মূল্যবান ভাবতে শেখে।
আবেগহীন মনোভাব
যদি একজন ব্যক্তি তার অনুভূতি গোপন রাখে বা নিজের আবেগকে যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারে না, তাহলে অন্য ব্যক্তির সাথে কোন সম্পর্ক তৈরি হয় না। দুজনের আবেগ অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ পেলে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বাড়ে, তৈরি হয় ঘনিষ্ঠতা। অন্যথায়, এটি কেবল বন্ধুত্বের বন্ধনে পরিণত হতে পারে।
অতিরিক্ত ঈর্ষা
সামান্য ঈর্ষা স্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু যখন তা চরম আকার ধারণ করে, তখন তা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণমূলক হয়ে ওঠে। সঙ্গী কোথায় আছে এবং তারা কার সাথে সময় কাটাচ্ছে তা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। সঙ্গীর প্রতি ঈর্ষাও ভালোবাসার প্রতিফলন। তবে, অতিরিক্ত ঈর্ষা নিরাপত্তাহীনতা অবিশ্বাসের লক্ষণ। যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে তা সহজেই ভেঙে পড়ে।
নেতিবাচকতা পোষণ
যখন একজন ব্যক্তি সবসময় খারাপ আশা করে বা সবকিছুকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে, তখন তার চারপাশে থাকা মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। যারা কঠিন সময়েও ইতিবাচক থাকে, প্রিয়জনকে দূরে না সরিয়ে কাছে টানে মানুষ এমন লোকদের পছন্দ করে।
যোগাযোগে অদক্ষ
এমন মনে হতে পারে যে একজন ব্যক্তি যদি কথোপকথন চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন বা সঠিকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে না পারে তবে সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এবং একে অপরকে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য কথা বলা প্রয়োজন। দুজনের অবস্থা সুখ-দুঃখ ভাগ করে না নিলে সত্যিকারের মানসিক সংযোগ ঘটে না।। সুন্দর সম্পর্কের জন্য ভালো যোগাযোগ খুবই নিয়ামক।
লক্ষ্যহীন মনোভাব
যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন তিনি সহজেই সঙ্গীর কাছে মূল্যহীন হতে পারে। জীবনে কোনও দিকনির্দেশনা না থাকলে মানুষ খুব কমই সফলতা অর্জন করে।। মানুষ উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পন্ন ব্যক্তি বা পরিশ্রমী ব্যক্তিদের প্রতি আগ্রহী হয়। সঙ্গীর সঙ্গে জীবনের উদ্দেশ্য ভাগ করে নেওয়া, কর্মপরকিল্পনা ঠিক করার মাধ্যমে সম্পর্ক অটুট থাকে।
অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ
অনেকেই মনে করে সঙ্গীকে অতিরিক্ত চাপে রাখলে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। যখন কাউকে চাপে রাখা হয় তখন সুস্থ আলোচনা এবং আপোষের কোনও সুযোগ থাকে না। মানুষ সাধারণত অতিরিক্ত চাপের প্রতি বিরক্ত বোধ করে। মানুষ নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। একটি সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত নয়, যাতে শুধুমাত্র সম্পর্ক টিকে রাখার জন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত মানষিক চাপে থাকতে হয়।
কর্মব্যস্তময় আমাদের জীবন। সারা দিনের পরিশ্রম ও ঘরে-বাইরে সামাল দিতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত। এসব ব্যস্তার মাঝে মুখের কিছুটা যত্ন নেয়া হলেও একেবারেই নেয়া হয় না চুলের যত্ন। সপ্তাহ কিংবা মাসে একবারও নিয়ম করে স্যালনে যাওয়ার অবসর হয় না। কিংবা সময় সুযোগ হলে তা অনেকের জন্য ব্যয় সাপেক্ষ। নিত্যদিনের সকল চাহিদার ভিড়ে স্যালনে অনেকেরই যাওয়া হয়ে ওঠে না। কারও আবার স্যালনের কেমিক্যাল চুলে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। সারা সপ্তাহে চাকরি-বাকরির পর অথবা ঘরকন্যা করার পর সপ্তাহে অন্তত এক ঘণ্টা রাখুন নিজের জন্য।
চাইলেই ঘরোয়া কিছু উপকরণ দিয়ে স্যালনের মতোই স্পা বাড়িতে করে ফেলা যায় নিমিষে। রুক্ষ চুল সহজেই হবে মসৃণ-ঝলমলে। সত্যি বলতে সপ্তাহ জুড়ে রোদ, জল, ধুলোর আক্রমণে চুলের যে দুরবস্থা হয়, তা অন্তত কিছুটা পুষিয়ে নিতে সপ্তাহের যেকোন দিন কিংবা ছুটির দিনটিকে কাজে লাগাতে পারেন।
ঘরে বসে হেয়ার স্পা করতে যে যে উপকরণ প্রয়োজন
১) যেকোন নারকেল, অলিভ বা কাঠবাদামের তেল।
২) চুলের যেকোনও ভাল স্পা ক্রিম। হাতের নাগালে ক্রিম না থাকলে কলা হাতে মেখে কিংবা ব্লেন্ড করে নিতে পারেন।
ধাপে ধাপে চুলে স্পা করবেন কীভাবে?
১. প্রথমে বড় দাঁতের চিরুনি দিয়ে শুকনো চুলের জট ছাড়িয়ে নিন।
২. তারপর পছন্দ মতো যে কোনও তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বক এবং চুলে মেখে নিন। চুলের ডগা ফাটার সমস্যা থাকলে সেই অংশে তেল মাখুন ভাল করে। অন্তত আধ ঘণ্টা তেল মেখে রাখুন।
৩. এবার চিরুনি দিয়ে সিঁথি ভাগ করে স্পা ক্রিম মেখে নিন। যদি স্পা ক্রিমের পরিবর্তে কলা মাখতে চান তা হলে কলা ভাল করে মেখে কিংবা ব্লেন্ড করে একটি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে মাথায় মেখে নিন।
৪. অন্তত মিনিট ২০ শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। শাওয়ার ক্যাপ না থাকলে তোয়ালেও ব্যবহার করতে পারেন।
৫. বাড়িতে যদি ভেপার নেওয়ার যন্ত্র থাকে, তা দিয়ে চুলে গরম জলের ভাপ নিন। অন্যথায় গরম জলে তোয়ালে ভিজিয়ে, নিংড়ে নিয়ে তা মাথায় মুড়িয়ে রাখতে পারেন।
৬. আরও আধ ঘণ্টা পর হালকা গরম পানিতে মাথা ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন। প্রয়োজনে বার দুয়েক শ্যাম্পু করতে হবে।
৭. সব শেষে কন্ডিশনার দিতে ভুলবেন না। মিনিট পাঁচেক মাথায় কন্ডিশনার রেখে, তার পর ধুয়ে ফেলুন।
৮. মাথা ঘষে ঘষে মুছবেন না। তোয়ালেতে মাথার পানি টেনে নিলে তারপর সিরাম মাখতে পারেন।
করোনা মহামারির পর বিশ্বে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। চলতি জানুয়ারির শুরুতে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনে প্রথম এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এখন এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব মালয়েশিয়া ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি বাংলাদেশেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এই ভাইরাস নিয়ে এখনও কোনো সতর্কতা জারি করেনি।
তবে এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখন থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদের সচেতন থাকা জরুরি। বয়সের তারতম্যের কারণে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে জানাচ্ছেন ভারতীয় চিকিৎসক আশিস নন্দী। এইচএমপিভি থেকে যাদের ঝুঁকি বেশি, তিনি তাদের চারটি ভাগে ভাগ করেছেন।
১। শিশু এবং বালক-বালিকা
চিকিৎসকের মতে, এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যেহেতু পরিণত হয়নি, তাই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ফুসফুসে সংক্রমিত হয় এমন যেকোনও ভাইরাসের মতোই হবে এইচএমপিভির উপসর্গ। জ্বর, কাঁশি, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া। খুব ছোট শিশুদের হাইপক্সিয়া এবং ডিহাইড্রেশনও হতে পারে।
২। বয়স্করা
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রোগপ্রতিরোধ শক্তিও দুর্বল হয়। ফলে যেকোন সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতাও কমে যায়। সিওপিডির বা হার্ট ফেলের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে এইচএমপিভি।
৩। কোমর্বিডিটি থাকলে
শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস থাকলে বা এমন যেকোনও রোগ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, তা থাকলে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা কমবে।
এর কারণে রোগের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, নতুন কোনও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যান্য রোগীর তুলনায় তাদের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগতে পারে।
৪। অপুষ্টির সমস্যা থাকলে
পুষ্টির অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের ২০২৪ এর তথ্য অনুযায়ী, না খেতে পাওয়া জনগণের সংখ্যার মাপকাঠিতে ১২৭ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। পাশাপাশি দেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে।
কীভাবে সতর্ক হবেন?
ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় যুগে যুগে মানুষ বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হয়েছে । তবে সতর্ক থাকলে তার প্রভাব অনেকটাই এড়ানো যায়। কমানো যায় শারীরিক ক্ষতিও। চিকিৎসক নন্দী বলছেন, চিকিৎসা সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি জীবনযাত্রারও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
১। টিকা: এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্য এখনও কোন টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তবে, ভবিষ্যতে তেমন টিকা আবিষ্কার হলে তা নিয়ে নেওয়া উচিত।
২। চিকিৎসা: চিকিৎসক নন্দীর মতে, মোনোক্লোনার অ্যান্টিবডিজ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা রক্ষা করতে সাহায্য করে।
৩। পরীক্ষা: উপসর্গ দেখলে এইচএমপিভির পরীক্ষা করতে হবে।
৪। অসুখের যত্ন: যাদের ডায়াবটিস বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তারা প্রতিনিয়ত নিজেদের শরীরের দিকে খেয়াল রাখুন। দরকার হলে যত্ন নিন।
৫। জীবনযাত্রা রদ-বদল: নিয়মিত হাত ধোয়া, মুখে-নাকে হাত না দেওয়া, মাস্কের ব্যবহার এবং যতটা সম্ভব জমায়েত এড়িয়ে চলা।
ডিম খেলে পুষ্টি বাড়ে। প্রতিনিয়ত এ কথা শুনেই আমরা বড় হই। প্রতিদিন অন্তত একটি হলেও সিদ্ধ ডিম খাওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিন দুটো সিদ্ধ ডিম খেলে শরীরের পুষ্টির অনেক ঘাটতি মিটবে। সরাসরি সিদ্ধ ডিম খেতে সমস্যা হলে কেউ চাইলে সিদ্ধ ডিমের স্যালাদ করেও খেতে পারেন।
প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি আদৌ উচিত বা নিরাপদ? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডিম খাওয়া বা না-খাওয়া নির্ভর করবে যিনি খাচ্ছেন, তার স্বাস্থ্যের ওপর। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, রোজ দু’টি করে সিদ্ধ ডিম খেলে তা শরীরের ১০ রকম পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
ডিম খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
১। প্রোটিন: এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কতটা প্রোটিন জরুরি, তা নির্ভর করে তার শরীরের ওজনের ওপর। ব্যক্তির শরীরের ওজন অনুযায়ী ০.৮ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, কারও যদি ওজন ৭৫ কেজি হয়, তবে তার দিনে প্রোটিন প্রয়োজন ৬০ গ্রাম। যেহেতু একটি ডিমে ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে, তাই নিয়মিত দু’টি করে ডিম খেলে ১২ গ্রাম প্রোটিন যাবে শরীরে। যা নিয়মিত প্রয়োজনের অনেকটা প্রোটিনই পূরণ হয়ে যাবে।
২। ভিটামিন এ: দু’টি সিদ্ধ ডিমে রয়েছে ৫৪০ আইইউ (আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ভিটামিন এ। চোখ এবং ত্বক ভাল রাখতে এই ভিটামিন জরুরি। পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভাল রাখে ভিটামিন এ। কোষবৃদ্ধি, প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও এই ভিটামিন উপযোগী। এক জন প্রাপ্তবয়স্কের নিয়মিত ৩০০০ আইইউ ভিটামিন এ প্রয়োজন। ডিম তার অনেকটাই পূরণ করে।
৩। ভিটামিন ডি: হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয় হল ভিটামিন ডি। আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও উপযোগী এটি। শরীরে প্রতিদিন ৬০০ আইইউ ভিটামিন ডি প্রয়োজন। দু’টি ডিমে থাকে ৮২ আইইউ ভিটামিন ডি।
৪। ভিটামিন বি ১২: মস্তিষ্ক সঞ্চালনে সাহায্য করে ভিটামিন বি ১২। পাশাপাশি স্নায়ুর কাজেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এছাড়াও রক্তে লোহিতকণিকা বৃদ্ধি, দৈনন্দিন কাজে সতেজ ভাব বজায় রাখতেও ভিটামিন বি ১২ দরকার। সাধারণত রোজ ২ মাইক্রোগ্রাম এই ভিটামিনের প্রয়োজন। দু’টি সিদ্ধ ডিমে থাকে ১.৬ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি ১২।
৫। ভিটামিন বি ২: ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট পরিপাকের জন্য দরকার হয় এই ভিটামিন। তা ছাড়া, ত্বক আর চোখের স্বাস্থ্যও ভাল রাখতে সাহায্যে করে ভিটামিন বি ২। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ১.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ২ প্রয়োজন। ডিমে এই ভিটামিন থাকে ০.৬ মিলিগ্রাম।
৬। ফোলেট: ডিএনএ সংশ্লেষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ-র মেরামতে সাহায্য করে ফোলেট। কোষের স্বাস্থ্যের জন্যও ফোলেট প্রয়োজনীয়। যে কারণে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নিয়মিত ফোলেটের চাহিদা পূরণ করার কথা বলে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়মিত ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট জরুরি। প্রতিটি ডিমে ২৪ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে।
৭। স্যালেনিয়াম: এটি একটি জরুরি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। কোষের স্বাস্থ্য, থাইরয়েড, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল রাখতে কাজে লাগে। প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৫৫ মাইক্রোগ্রাম স্যালেনিয়ামের মধ্যে ২৮ মাইক্রোগ্রামেরই জোগান দিতে পারে দু’টি সিদ্ধ ডিম।
৮। কোলাইন: দু’টি ডিমে ২৯৪ মিলিগ্রাম কোলাইন থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনের অর্ধেক। কোলাইন মস্তিষ্ক এবং লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
১০। জিঙ্ক: দু’টি সিদ্ধ ডিমে ১.১ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে। জিঙ্ক শরীরের ক্ষত নিরাময়ে সহযোগী। কোষের ক্ষয় রোধ করতে এবং প্রোটিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এক জন প্রাপ্তবয়ষ্কের জন্য প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিঙ্ক জরুরি।