হাত-ই করোনাভাইরাস রোধের প্রধান অস্ত্র!

  করোনা ভাইরাস
  • ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রকোপ যতটা বেড়েছে, তার সাথে প্রতিযোগিতা দিয়ে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা ও দাম। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণমূলক এই ভাইরাসটি বায়ুবাহিত হলেও এতে সংক্রমণের প্রধান ও প্রথম মাধ্যমটি হল আপনার হাত! এ কারণেই বলা হচ্ছে, হাত-ই করোনাভাইরাস রোধের প্রধান অস্ত্র। কেন এমনটা বলা হচ্ছে? চলুন একটু বিস্তারিতভাবে জানানো যাক।

করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ও এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে যে মাস্কগুলো আমরা সাধারণভাবে ব্যবহার করছি সেটাকে বলা হয়ে থাকে সার্জিক্যাল মাস্ক। বেশ ভারিক্কি ধরনের নাম হলেও, কাজের বেলায় এই মাস্কের কোন ভূমিকাই নেই।

বিজ্ঞাপন

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এর পরিচালক ড.মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ভাইরাস এতোই ক্ষুদ্র ও সূক্ষ্ম যে সেটা খুব সহজেই সাধারণ (সার্জিক্যাল) মাস্কের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে। এই মাস্ক ব্যবহারে কোন ধরনের প্রতিরক্ষাই নেওয়া হয় না।

corona

একই রকম তথ্যের খোঁজ পাওয়া যায় বাইরের দেশের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের অ্যাসিসটেন্ট রিসার্চ প্রফেসর এরিন শরেল জানান, শ্বাসযন্ত্রের রোগ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে মাস্কের ব্যবহার কোন কাজই করে না।

বিজ্ঞাপন

এদিকে একেবারে নতুন একটি তথ্য পাওয়া গেল আমেরিকান নিউরোসার্জন অ্যান্ড মেডিক্যাল রিপোর্টার ডঃ সঞ্জয় গুপ্তার কাছ থেকে। সিএনএন হেলথের বরাত দিয়ে সঞ্জয় বলছেন, ‘আপনি যদি অসুস্থ না হন তবে কখনোই মাস্ক ব্যবহার করবেন না। এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাস্ক পরার সাথে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংযোগ রয়েছে এবং আপনি যদি ভুল নিয়মে মাস্ক ব্যবহার করেন তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক বেশি।’

corona
ডঃ সঞ্জয় গুপ্তা

সচেতন থাকতে মাস্ক ব্যবহার করে আপনি যদি অন্যের সাথে হ্যান্ডশেক করেন, হাত সঠিক নিয়মে (২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে, সাবান কিংবা হ্যান্ডওয়াশের সাহায্যে) পরিষ্কার না করেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার না করেন এবং মুখে অনবরত হাত দিয়ে থাকেন, তবে ফলাফল একেবারেই শূন্য। এছাড়া মাস্কের চারপাশে যথেষ্ট খোলা স্থান থাকে, যেখান দিয়ে সহজেই করোনাভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।

হাত ও হাতের ব্যবহারের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি ও দ্রুত বিস্তার পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ইনফেকশাস ডিজিজ স্পেশালিস্ট ডঃ ডন মুয়েনি বেকার বলেন, ‘শ্বাসযন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে মিউকোসাল মেমব্রেন্স (Mucosal Membranes) এর সাহায্যে। যা নাক, মুখের ভেতরের অংশ ও ঠোঁটে পাওয়া যায়। অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে ভাইরাল এই ইনফেকশন সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

corona

হাতকে যতটা সংযত রাখা সম্ভব হবে, নিজেকে ততই নিরাপদ রাখা যাবে। সেই সাথে প্রয়োজন ব্যতীত অতিরিক্ত ভিড়যুক্ত স্থান পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। হাঁচি কিংবা কাশির সময় হাতের তালু নয়, কনুয়ের কাছে মুখ নিয়ে হাঁচি ও কাশি দিতে হবে। যদি হ্যান্ড ওয়াশ না থাকে তবেও সমস্যা নেই। সাধারণ সাবানের সাহায্যে হাত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে পরিষ্কার করলেও সুরক্ষিত থাকা যাবে।

ভুল ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে রোগের প্রকোপের বিস্তার হয় বেশি। তাই সঠিক নিয়ম ও তথ্য জেনে সেইভাবে চলার চেষ্টা করতে হবে।