মোট মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা: ৫৩ বাংলাদেশি সিনেমা: ৪৩ আমদানি: ১০ যৌথ প্রযোজনা: ০ সুপার হিট: ০ হিট: ১ আলোচিত: ৭
‘আই অ্যাম রাজ’ দিয়ে বছর শুরু; শেষ ‘মায়া’য়। মায়া দিয়ে শেষ হওয়া বছর শেষে; ঢাকাই সিনেমার জন্য যেন শুধুই মায়াই জন্মাচ্ছে চলচ্চিত্র প্রেমীদের মনে। কারণ ২০১৯ এ মোট মুক্তি প্রাপ্ত ৫৩ সিনেমার মধ্যে হিট বা ব্যবসাসফল সিনেমা মাত্র ১টি। আর বছরের আলোচিত সিনেমার সংখ্যাটাও দুই অঙ্কের না। সব মিলিয়ে ঢাকাই সিনেমার জন্য একটি হতাশার বছর গেল ২০১৯।
বিজ্ঞাপন
বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘পাসওয়ার্ড’
মালেক আফসারি পরিচালিত ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমা ছাড়া চলতি বছরের অন্য কোন সিনেমাকে ব্যবসাসফল বলতে নারাজ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। চলতি বছরের ৫ জুন মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান ও শবনম বুবলি। এটি চিত্রনায়ক শাকিব খান প্রযোজিত দ্বিতীয় সিনেমা। সিনেমাটি ভারত-বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও জনপ্রিয় অভিনেতার পুরস্কার সহ সর্বাধিক পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেছে।
কতটা ব্যবসাসফল ‘পাসওয়ার্ড’?
ঢাকাই সিনেমায় বক্স অফিস না থাকায় ‘পাসওয়ার্ড’ কতটা সফল এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পায়নি বার্তা২৪.কম। তবে এই সিনেমা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও একাধিক চলচ্চিত্র বিশ্লেষকের মতে, ‘পাসওয়ার্ড’ বছরের ব্যবসাসফল সিনেমা। এই সিনেমা চলার সময় বেশ কিছু টাকা আয় করেছেন সিনেমা হল মালিকরা। যা অন্য সিনেমার ক্ষেত্রে হয়নি। তবে বছর শেষে সুনির্দিষ্ট কত টাকার ব্যবসা করল ‘পাসওয়ার্ড’ এই তথ্য নেই কারো কাছেই।
যে কারণে সফল ‘পাসওয়ার্ড’
জুনে মুক্তির ১ সপ্তাহ না যেতেই নকলের অভিযোগ উঠে ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমার বিরুদ্ধে। কোরিয়ান সিনেমা ‘দ্য টার্গেট’র নকল করায় সেন্সর বোর্ডে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল সে সময়। নকল এই সিনেমা কিভাবে বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা; সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে বার্তা২৪.কম।
নিজের প্রযোজনার সিনেমা হওয়ার এই সিনেমায় পারিশ্রমিক নেননি শাকিব খান। যেখানে অন্য প্রযোজনা সংস্থার সিনেমা করার ক্ষেত্রে ৬০ লক্ষ টাকা (নোলক সিনেমায় শাকিবের পারিশ্রমিক) পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন শাকিব। অন্যদিকে এই সিনেমায় শাকিব ছাড়াও অন্য সহ শিল্পীরা শাকিব খানের সিনেমা হওয়ার নাম মাত্র টাকায় কাজ করেছেন। এই হিসাবে ‘পাসওয়ার্ড’ নির্মাণে ব্যয়ভার অন্য সিনেমার তুলনায় বেশ কম হয়েছে বলা চলে। এটাই ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমা ব্যবসাসফল হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা।
এদিকে নিজের প্রযোজনা সংস্থার দ্বিতীয় সিনেমা হওয়ায় সিনেমাটির বেশ প্রচারণা চালিয়েছেন শাকিব খান। নিজের প্রযোজনা সংস্থার বাইরে অন্য সিনেমায় তেমন ভাবে প্রচারণায় অংশ গ্রহণে দেখা যায়না শাকিব খানকে। বেশি প্রচারণা এই সিনেমাটির ব্যবসাসফল হওয়ার আরও একটি কারণ। অন্য দিকে ঈদের সময় ঢাকাই সিনেমা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে; চলতি বছরের ঈদেই মুক্তি পেয়েছিল ‘পাসওয়ার্ড’।
বছরের আলোচিত সিনেমা
সাপলুডু, নোলক, ফাগুন হাওয়ায়, যদি একদিন, লাইভ ফ্রম ঢাকা, ন’ডরাই, আব্বাস এই ৭ সিনেমা মুক্তি আগে থেকেই বেশ আলোচনায় ছিল। তবে সিনেমা মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহ চলার পর নানাবিধি কারণে সিনেমাগুলো সেভাবে আলোর মুখ দেখেনি। যদিও এ সকল সিনেমার গুলোর মধ্যে একাধিক প্রযোজকের দাবি তাদের সিনেমা ব্যবসাসফল। যদিও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠন নেতাদের এমন দাবি প্রেক্ষিতে মন্তব্য ভিন্ন।
১০ আমদানির ফলাফল ০
চলতি বছরে কলকাতার মোট ১০ টি সিনেমা আমদানি করা হলেও একটিও ব্যবসাসফল তো দূরের কথা নাম মাত্র মুক্তি ছাড়া চলেনি ঢাকার সিনেমা হলে। এর অন্যতম কারণ সিনেমাগুলো আগে থেকে পাইরেসি ও প্রচারণার অভাব।
১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। পারিবারিক ঐহিত্য, মূল্যবোধ বন্ধনে তৈরি হয় একটি পরিবার। পরিবারের সে ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রবর্তন করা হয়, আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। পরিবার একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
মানুষ সামাজিক জীব। একা একা বেঁচে থাকা বা টিকে থাকা যায় না। সে কারণে দলবদ্ধভাবে বসবাস করতেই আদিম মানুষেরা গোষ্ঠীগতভাবে বাস করতো। সমাজ বিবর্তনের ধারায় পরে কৃষিকাজের উদ্ভব হলে পরিবারের ধারণা সৃষ্টি হয়। কৃষিকাজই ছিল তখন পরিবারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল চালিকা শক্তি। নারীর হাতেই প্রথম কৃষি বা চাষাবাদের উদ্ভব। সন্তান ধারণ এবং লালন-পালন থেকেই গোষ্ঠীগত ধারণা বিবর্তিত হয়ে সৃষ্টি হয়, পরিবার প্রথার।
সমাজে আগে যৌথপরিবার ছিল। আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, মাতামহ, পিতামহসহ সবাই মিলে গঠিত হতো একটি যৌথ পরিবার।
অষ্টাদশ শতকে শিল্পবিপ্লবের ফলে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসে। কৃষিকাজের ধারার সঙ্গে যুক্ত হয়, কারখানার শ্রমদান। এর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন শুরু হলে পরিবারের কাঠামোগত পরিবর্তন শুরু হয়।
কলকারখানাকে কেন্দ্র করে নগর উন্নয়নের ধারায় পরিবারের কাঠামোতে আঘাত এসে লাগে। পাশ্চাত্যে শুরু হয়, পরিবারের নতুন একটি ধারা।
সমাজে দুই ধারার পরিবারের অস্তিত্ব বিদ্যমান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, যৌথ পরিবার, আরেকটি হচ্ছে- একক পরিবার। একক পরিবারের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে মূল নগর উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে শিল্প-কারখানার বিস্তৃতি ও ধরন বদল।
গ্রাম ছেড়ে নগরে এসে কলকারখানায় কাজের সন্ধানে গিয়ে সেখানে থেকে যাওয়ার পর থেকে একক পরিবারের উৎপত্তি। গ্রামের পরিবার-পরিজন ছেড়ে এসে কাজ করতে এসে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। পরে ও পুঁজির শোষণের কারণে শ্রমের মূল্যের ঘাটতি থেকে একজনের পক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এখান থেকেই শুরু হয়, স্বামী ও স্ত্রীর একক সংসার। এরপরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় সন্তান ও স্বামী-স্ত্রীর একক পরিবার। এভাবেই মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যৌথ পরিবার থেকে। বিস্তৃতি ঘটে একক পরিবারের।
সমাজ বিজ্ঞানী সামনার ও কেলারের মতে- পরিবার হলো ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দুই পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। অন্যদিকে, নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কির মতে, পরিবার হলো একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হলো সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র।
সমাজবিজ্ঞানী ফলসমের মতে ‘একক’ পরিবারের অন্যতম তিনটি কারণ, যেমন স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন ও চাহিদা সম্পর্কে সচেতনতা, অলাভজনক শিশুশ্রম এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্থিক অনটন, ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের উন্মেষ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় শিল্প বিপ্লব ঘটতে থাকে। শিল্প প্রসারের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর তরুণেরা আয়ের দিক ঝুঁকে পড়েন। এতে পরিবারের সঙ্গে তাদের বিচ্ছিন্নতা শুরু হয়। গড়ে ওঠে ছোট পরিবার। এভাবেই ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে যৌথ পরিবারের কাঠামো।
১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোতাবেক ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয় আর ১৯৯৪ সালকে ‘আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ’ হিসেবে উদযাপন করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।
এর আগে ১৯৯৫ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশ্ব’- শীর্ষক সম্মেলনে সামাজিক বন্ধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বিশেষ করে পরিবারের ছোট বড় সব সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক অটুট এবং মূল্যবোধকে ধরে রাখা। বিশেষ করে শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব পোষণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ বিষয়ে এক প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালে সামাজিক উন্নয়ন কমিশনের ১৯৮৩/২৩ নম্বর রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে পরিবারের গুরুত্বের ওপর সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এরপর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ১৯৮৫/২৯ নম্বর রেজ্যুলেশন ‘উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবার’ নামে সাধারণ অধিবেশনের ৪৪ নম্বর অধিবেশনে একটি সাময়িক আলোচনার প্রস্তাব আনা হয়। এতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি অনুরোধ করা হয় যেন বিষয়টি সরকার, আন্তঃসরকার, এনজিও এবং সর্বস্তরের জনগণের কাছে গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হয়।
জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও অনুরোধের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের ৪৪/৮২ নম্বর রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক ‘পরিবার বর্ষ’ ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছর ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালন করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৩ সালের সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশন এ/আরইএস/৪৭/২৩৭ গৃহীত হয়।
শহুরে সমাজে যৌথ পরিবারের গুরুত্ব কমে গেলেও দেশের গ্রামীণ সমাজে এখনো যৌথ পরিবারের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক মৃণাল সেনের জন্ম ১৪ মে।
শৈশব ও শিক্ষা ১৯২৩ সালের ১৪ মে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের ঝিলটুলী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন মৃণাল সেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখান থেকে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পাস করে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় ভর্তি হন।
মৃণাল সেনের বাবা দীনেশ সেন ছিলেন এক আইনজীবী। তিনি স্বদেশী, কংগ্রেসী ও বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র পালের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু্ও ছিলেন। তার বাড়িতে স্বদেশী আন্দোলনের বিপ্লবীদের আনাগোনা ছিল। নেতাজী সুভাষ বসুও দুইবার তার বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন।
দীনেশ সেন নিজের গাঁটের টাকায় বিপ্লবীদের মামলা লড়তেন। কারাগার থেকে তাদের জামিনের ব্যবস্থা করতেন। শুধু রাজনীতিবিদেরাই নন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম কবি উদদীনের মতো বিখ্যাত কবিরাও এসেছেন দীনেশ সেনের বাড়িতে।
৩০-এর দশকে মহাত্মা গান্ধীর আমরণ অনশনের সময় ফরিদপুরের আইনজীবীদের নিয়ে আদালত বর্জন করেছিলেন দীনেশ সেন। এজন্য জেলা প্রশাসক তার কাছে কৈফিয়ত চাইলে দীনেশ সেন সেই কৈফিয়তকে পাত্তাও দেননি। এজন্য তাকে ব্রিটিশ সরকারের শাস্তিও পেতে হয়েছিল।
বাম রাজনৈতিক চিন্তাধারায় যুক্ত হওয়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই মৃণাল সেন কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে মৃণাল সেন সাংবাদিকতা, ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভ এবং পরে চলচ্চিত্রে শব্দ কলাকুশলী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ৪০ দশকে বামচিন্তার সংস্কৃতিক সংগঠন আইপিটিএর (ইন্ডিয়ান পিপ্লস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত হয়ে গণমানুষের কাছাকাছি আসেন তিনি।
সিনেমা পরিচালনা
মৃণাল সেনের সিনেমা পরিচালনা সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে বলা হয়, ১৯৫৫ সালে মৃণাল সেনের প্রথম পরিচালিত ছবি ‘রাত-ভোর’ মুক্তি পায়। এই ছবিটি তেমন একটা ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। তবে তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নিচে’ পরিচিতি এনে দেয়। আর তৃতীয় ছায়াছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’ মুক্তি পেলে মৃণাল সেন দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পান। ১৯৬৯ সালে তাঁর পরিচালিত ছবি ‘ভুবন সোম’ মুক্তি পায়। এই ছবিতে বিখ্যাত অভিনেতা উৎপল দত্ত অভিনয় করেন। অনেকের মতে, মৃণাল সেনের এটিই শ্রেষ্ঠ ছবি।
তাঁর কলকাতা ট্রিলজি অর্থাৎ ‘ইন্টারভিউ’ (১৯৭১), ‘কলকাতা ৭১’ (১৯৭২) এবং ‘পদাতিক’ (১৯৭৩) ছবি তিনটির মাধ্যমে মৃণাল সেন তৎকালীন কলকাতার অস্থির রাজনৈতিক অবস্থাকে তুলে ধরেছিলেন।
মধ্যবিত্ত সমাজের নীতিবোধকে মৃণাল সেন তুলে ধরেন তাঁর খুবই প্রশংসিত দুটি ছবি ‘একদিন প্রতিদিন’ (১৯৭৯) এবং ‘খারিজ’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ‘খারিজ’ ১৯৮৩ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার পায়। এরপর ১৯৮০ সালে তাঁর আরেকটি ছবি মুক্তি পায় ‘আকালের সন্ধানে’। এই ছবিতে দেখানো হয়, চলচ্চিত্রের এক দল কলাকুশলী এক গ্রামে গিয়ে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ওপর প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করতে যায়। কীভাবে ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের কাল্পনিক কাহিনী মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সেই গ্রামের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে, সেটাই ছিল এই চলচ্চিত্রের সারমর্ম। ‘আকালের সন্ধানে’ ১৯৮১ সালের বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ জুরি পুরস্কার হিসেবে রূপার ভালুক জয় করে।
মৃণাল সেনের পরবর্তীকালের ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৯২) এবং ‘অন্তরীণ’ (১৯৯৪)। মৃণাল সেন বাংলা ভাষা ছাড়াও হিন্দি, উড়িয়া ও তেলুগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ১৯৬৬ সালে উড়িয়া ভাষায় নির্মাণ করেন ‘মাটির মনীষ’, যা কালীন্দিচরণ পাণিগ্রাহীর গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়। ১৯৬৯ সালে বনফুলের কাহিনী অবলম্বনে হিন্দি ভাষায় নির্মাণ করেন ‘ভুবন সোম’।
১৯৭৭ সালে প্রেমচন্দের গল্প অবলম্বনে তেলুগু ভাষায় নির্মাণ করেন ‘ওকা উরি কথা’। ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেন ‘জেনেসিস’, যা হিন্দি, ফরাসি ও ইংরেজি তিনটি ভাষায় তৈরি হয়। পুরস্কার অর্জন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘পদ্মভূষণ’, ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘দাদাসাহেব ফালকে’ অর্জন করেন মৃণাল সেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে ‘অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ’ সম্মানে ভূষিত করেন। শুধু তাই নয়, ফরাসি সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘কমান্ডার অব দ্য আর্টস অ্যান্ড লেটারস’-এ ভূষিত হন প্রখ্যাত এই চলচ্চিলকার মৃণাল সেন।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য ফিল্মের প্রেসিডেন্ট পদেও দায়িত্ব পালনে সুযোগ ঘটে মৃণাল সেনের। তাঁর স্ত্রী গীতার মৃত্যুতে তার জীবনে ছন্দপতন ঘটে। আর এ কারণেই ২০১৭ সালে স্ত্রী গীতা সেনের মৃত্যুর এক বছর পরেই ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মারা যান বাংলা চলচ্চিত্রের এই প্রখ্যাত পরিচালক মৃণাল সেন।
সত্তরের দশকের উত্তাল সময়ের শুরু থেকে ‘থার্ড থিয়েটার’ নামক ভিন্ন এক নাট্যআঙ্গিক ও দর্শনের উদ্গাতা ছিলেন বাদল সরকার। বাংলা নাটকের জগতে ‘থার্ড থিয়েটার’ নামে নতুন এক আঙ্গিকের সূচনা করে অমর হয়ে আছেন তিনি।
১৯২৫ সালের ১৫ জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন বাদল সরকার। তাঁর প্রকৃত নাম- সুধীন্দ্র সরকার। স্কুল ও কলেজ জীবনে তাঁর এই নামই বহাল ছিল। পরবর্তীতে পরিচিত হয়েছিলেন বাদল সরকার নামে।
স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক হয়ে ভর্তি হন বাদল সরকার। পেশাগত দিক থেকে তিনি ছিলেন টাউন প্ল্যানার। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পর প্রথমে মাইথন, পরে কোলকাতায় চাকরি করেন।
তাঁর জীবন কাহিনি সম্পর্কে এক ব্লগে নূর মোহাম্মদ নুরু লেখেন- শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বাদল সরকারের অন্যতম সহপাঠী ছিলেন সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর টাউন প্ল্যানার হিসেবে কাজ করেছেন ভারতে ও বিভিন্ন দেশে।
ইংল্যান্ড ও নাইজেরিয়াতে পেশার কাজে যান। আবার সাহিত্য-নাটকের প্রতি আগ্রহের জন্য বৃদ্ধ বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পারেটিভ লিটারেচার ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন।
১৯৯২ সালে সেখান থেকে এ বিষয়ে এমএ পাস করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে বাদল সরকার প্রথম নাটক ‘সলিউশন এক্স’ লেখেন। তবে এটি মৌলিক ছিল না। নাটকটি লেখা হয়েছিল ‘মাঙ্কি বিজনেস’ সিনেমা অবলম্বনে।
সর্বভারতীয় খ্যাতি যে নাটকের মাধ্যমে
তার পরে বাদলবাবু আরো কয়েকটি মৌলিক নাটক লিখলেও তাঁকে সর্বভারতীয় খ্যাতি এনে দেয়, ষাটের দশকের মাঝামাঝি ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ নাটকটি। এই নাটকটি ‘বহুরূপী’ পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর তাঁর রচিত ‘বাকী ইতিহাস’ ‘প্রলাপ’, ‘পাগলা ঘোড়া’ ‘শেষ নাই’ সবকটিই শম্ভু মিত্রের নেতৃত্বাধীন বহুরূপী গোষ্ঠীর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয়। তবে নিজের নাট্যদল ‘শতাব্দী’ গঠনের পর তিনি একেবারে কলকাতার কার্জন পার্কে খোলা আকাশের নিচে নাটক করা শুরু করেন।
থার্ড থিয়েটারের আঙ্গিক, তার প্রয়োজনীয়তা, পাশ্চাত্যে প্রবর্তিত থার্ড থিয়েটারকে বাদল সরকার বাংলা নাটকের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় করেছেন। আসলে বাদল সরকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় থার্ড থিয়েটারের উৎপত্তি সামন্ত সমাজের সেই গুটিকয়েক শিক্ষিতের দ্বারা, যারা ভূস্বামী বা কৃষক কোনো শ্রেণির মধ্যে পড়ে না।
অনেক সময় তাঁর নাটকে কোনো প্লট থাকে না। চরিত্রের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্রায়ন নেই। ফলে বাধ্যবাধতকতা নেই সুনিদিষ্ট পোশাকেরও। অভিনেতা–অভিনেত্রীরা ইচ্ছেমতোন চরিত্র বাছাই করে নেন। নাটকের মাঝখানে চরিত্র বদলেরও স্বাধীনতা থাকে। প্রয়োজন বুঝলে দর্শকেরাও অভিনয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন। ঠিক অংশগ্রহণ সেভাবে আক্ষরিক অর্থে নয়, খুব জোরালোভাবে কিন্তু দর্শক ঢুকে পড়েন কিছু একটা করতে, যা অনেকটা সিনেমার ‘এক্সট্রা’দের মতো।
বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটার আন্দোলন ছিল প্রতিষ্ঠান বিরোধী তথা রাষ্ট্রবিরোধী। শহরাঞ্চলকে ভিত্তি করে তাঁর ‘ভোমা’ নাটকে পাওয়া যায় নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন সংগ্রামের প্রতিফলন। আবার ‘মিছিল’ নাটকে উঠে আসে ক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিবাদ আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে রাষ্ট্রের ভূমিকা ৷
১৯৫৭-৫৯ লন্ডনে ও ৬৩-৬৪ সালে ফ্রান্সে থাকার সময় প্রচুর ইউরোপীয় থিয়েটার দেখার সুযোগ পান। এরপর নাইজেরিয়ায় কর্মসূত্রে থাকার সময় অনেকগুলো নাটক লেখেন। ১৯৬৭ সাল থেকে টাউন প্ল্যানিংয়ের চাকরি নিয়ে কলকাতায় স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। বেশি বয়সে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করে এমএ ডিগ্রিও সম্পন্ন করেন।
সরস ও ব্যঙ্গাত্মক রচনার মধ্য দিয়ে তাঁর নাটক রচনার শুরু। ‘বড় পিসিমা’, ‘রাম শ্যাম যদু’, ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ প্রভৃতি তাঁর কৌতুক নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম। নাটকগুলি ‘রঙ্গনাট্য সংকলন’ নামক গ্রন্থে সংকলিত হয়। কৌতুক নাটক ছেড়ে তিনি সমসাময়িক পরিস্থিতি ও জীবনদর্শনের ওপর ভিত্তি করে নাটক রচনা শুরু করেন। নাটক লেখা, প্রযোজনার কাজ ছাড়াও দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ানোতে অদম্য উৎসাহ ছিল তাঁর। বিশ্বভাষা ‘এস্পারেন্তো’ নিয়ে ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহ। এ নিয়ে কয়েকটি বইও লিখেছেন তিনি। শেষ কয়েক বছরে আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘পুরানো কাসুন্দী’-তে বিস্তারিতভাবে নাটক দেখা, করা, নাটক নিয়ে নানা ভাবনা চিন্তার কথা সরসভাবে লিখে গেছেন বাদল সরকার।
এই নাট্যকারের জীবনের শ্রেষ্ঠ রচনা ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ (১৯৬৩) এই ঘরানার নাটকের অন্তর্ভুক্ত। চিন-ভারত যুদ্ধ এবং কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এই নাটকের মৌলিক বিষয়। ‘সারারাত্তির’, ‘বাকি ইতিহাস’, ‘প্রলাপ’, পাগলা ঘোড়া’ প্রভৃতি নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি সমকালীন চিত্রকে নিখুঁত দক্ষতায় প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
বাদল সরকারের নাটকের মধ্যে সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের রূপরেখাটিও বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে। নকশালবাড়ি আন্দোলনের ঝড়, সত্তরের দশককে মুক্তির দশক করে তোলার স্বপ্ন, শ্রমিক-মালিক শ্রেণির অনিবার্য সংঘাত প্রভৃতি তাঁর নাটকের অন্তর্গত বিষয়।
তিনি নিজে মন্তব্য করেন, ‘হাসবার ক্ষমতা চলে যাচ্ছে আমার। আজগুবি সৃষ্টিছাড়া হয়ে উঠছে লেখা। আর সবচেয়ে মারাত্মক, এতো রূপক, এতো আড়াল সত্ত্বেও সত্যি মানুষগুলো বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে’।
প্রথমদিকে, বদ্ধ ঘরের অঙ্গনেই ‘থার্ড থিয়েটার’-এর কাজ বাদলবাবুর নাট্যদল ‘শতাব্দী’ শুরু করলেও পরে খোলা মাঠে অভিনয় শুরু হয়। আশির দশকে গ্রাম পরিক্রমার মধ্য দিয়ে শহর মফস্বলে আটকে থাকা নাট্যচর্চার পরিধিকে প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলতে থাকে। সেট আলোর উপকরণগুলিকে ‘থার্ড থিয়েটার’ দর্শকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগে অনাবশ্যক বলে মনে করে, অভিনয়ে শরীর, কণ্ঠকে নানাভাবে ব্যবহার করে তাকে জীবন্ত করার ভাবনায় এই নাট্যকলা উদ্বুদ্ধ।
ব্যয়বহুল উপকরণের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার ফলেই এই থিয়েটার করা সম্ভবপর হয়ে উঠেছে সস্তায়, কোনো টিকিট বিক্রি, বেসরকারি বা সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর না করেই।
‘থার্ড থিয়েটার’ এই অর্থে হয়ে উঠতে পেরেছে ‘ফ্রি থিয়েটার’ও। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও মেহনতি সাধারণ মানুষের সংকট আর লড়াইয়ের কথাকে বারবার তুলে এনে এই থিয়েটার ‘থিয়েটারের এক নতুন রাজনৈতিক দর্শন’ তৈরি করতে পেরেছে।
থার্ড থিয়েটারের জন্যই লেখা হয়েছে, সত্তর দশক ও তার পরবর্তী বাদলবাবুর বিখ্যাত নাটকগুলো। সাগিনা মাহাতো, স্পার্টাকাস, মিছিল, ভোমা, সুখপাঠ্য ভারতের ইতিহাস, হট্টমালার ওপারে, গণ্ডী, একটি হত্যার নাট্যকথা, নদীতে- এরা কোথাও প্রচলিত রাজনৈতিক আধিপত্যের তীব্র সমালোচনাতে উচ্চকিত। কোথাও মানুষের দাঁতে দাঁত চাপা লড়াইয়ের সঙ্গী, কোথাও নতুন মানবিক সাম্য সমাজ প্রতিষ্ঠার মরমি স্বপ্নে বিভোর!
থার্ড থিয়েটারের জন্যই লেখা তাঁর বিখ্যাত নাটকগুলি হচ্ছে- ‘সাগিনা মাহাত’, ‘স্পারটাকাস’, ‘মিছিল’, ‘হট্টমালার ওপারে’, ‘গণ্ডী’ কোথাও প্রচলিত রাজনৈতিক অধিপত্যের তীব্র সমালোচনায় উচ্চকিত, কোথাও মানুষের অদম্য লড়াইয়ের সঙ্গী, কোথাও আবার নতুন মানবিক সাম্য ও সমাজ প্রতিষ্ঠার মরমি স্বপ্নে বিভোর।
বাদল সরকারের জীবন কাহিনি নিয়ে লেখা ব্লগে নূর মোহাম্মদ নুরু বলেন, ৭২ বছর বয়সেও অভিনয় করেছেন বাদল সরকার। ‘ভোমা’ নাটকে এ বৃদ্ধ বয়সেও দাপটে অভিনয় করেছেন ঢাকায়।
১৯৬৮ সালে সঙ্গীত নাটক আকাডেমি এবং ১৯৭২ সালে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব পান তিনি। ১৯৯৭ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি ফেলোশিপ থেকে ভারত সরকারের সর্ব্বোচ্চ পুরষ্কার ‘রত্ন সদস্য’ পদকে তাঁকে সম্মানিত করা হয়।
তাঁর নাটক সবসময়ই বহুল আলোচিত, অভিনীত হলেও তিনি শেষ দুই দশক প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন এই নাট্যকার। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ১৩ মে কলকাতাতে মৃত্যু হয় বাদল সরকারের।
ঘটনাবহুল আরেকটি বছর শেষ করতে যাচ্ছে রংপুরবাসী। ২০২৩-এ নানান ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকছে এ অঞ্চলের মানুষ। এ বছরের কয়েকটি ঘটনা দেশবাসীকেও নাড়া দিয়েছে।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরের গণমহাসাবেশে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা। এ বছরেই রংপুরে গ্যাস এসেছে। ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রংপুরে সতর্কতা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আলোচিত এসব ঘটনার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
২২ মার্চ: জেলা প্রশাসক 'স্যার' ডাকতে বাধ্য করায় অবস্থান কর্মসূচি' হাতে লেখা এমন প্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে বসে বেগম রোকেয়া শ্বিবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন তিনি।
এপ্রিল: গ্রীষ্মের তাপদাহে পুড়ে রংপুর। এবাররই প্রথম গরমে অতিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে পানির বোতল বিতরণ করা হয়েছে।
১ জুন: নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এ দিন ৫ মিনিট স্তব্ধ থাকে রংপুর। এ কর্মসূচি পালনে সর্বস্তরের মানুষ সাড়া দেয়।
২ আগস্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে অংশ নেন। তিনি ২৭ টি প্রকল্পের উদ্ধোধন করেন। সেই সাথে তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নের ঘোষণা দেন।
১৯ সেপ্টেম্বর: এ দিনে গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের এর বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়। একই দিনে রংপুর বিনোদন চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রোমিও-জুলিয়েটকে আনা হয়েছে।। বিকালে বিশেষ ব্যবস্থায় রোমিও-জুলিয়েটকে নিয়ে আসা হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর: মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহিদ শংকু সমজদারের মা দীপালী সমজদার মারা যান। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ভোরে নগরীর কামাল কাছনায় নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
১ অক্টোবর: এদিনে নগরীতে ৩৫ টাকা কেজি দরে এ খোলাবাজারে আলু বিক্রি করা শুরু হয়। কাচারীবাজার এলাকায় খোলা ট্রাকে এই বিক্রি কার্যক্রম চলে।
৪ অক্টোবর: ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রংপুরে সতর্কতা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর পরের দিন টানা বর্ষণে বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার বিভিন্ন এলাকা।
১৪ নভেম্বর: রংপুরের মানুষ বছরের পর বছর থেকে গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করে আসছিলেন। অবশেষে এ দিনে উন্নয়ের ডানা মিলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আসে। এদিন সকালে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাস সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন। তারপর পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জেলার পীরগঞ্জে গ্যাস স্টেশন প্রাঙ্গণে ফলক উন্মোচন করেন।