কুষ্টিয়ায় করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত বছরের ২২ এপ্রিল থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ১৩ মাসে এ জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের শুরু থেকে সরকারঘোষিত রেড জোন, লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি- কোনটাই মানুষজন না মানায় থামছে না সংক্রমণ।

জেলার ছয় উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ১১২ জন। তা ছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরো ২৫ জন।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে কুষ্টিয়ায় করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছেই।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঈদের আগে ১ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১৫ দিনে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী ছিল ৮২ জন। আর ঈদের পর ১৬ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৬ দিনে রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৪ জনে। এর বাইরে ভারত থেকে আসা কোয়ারেন্টিনে থাকা ১৪৭ জনের মধ্যে তিনজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। তাদের মধ্যে দুজনকে ঢাকায় ও একজনকে কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বহন করছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

তবে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে গত রবিবার পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জেলার দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করে। তারা সবাই দৌলতপুর সীমান্তসংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে কেরালাফেরত একজনকে চোরাপথে বাংলাদেশে প্রবেশকালে বিজিবি আটক করে দৌলতপুর থানায় সোপর্দ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসা বিভিন্ন জেলার ১৪৭ জনকে কুষ্টিয়ার পিটিআই ট্রেনিং সেন্টার, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমবায় ইনস্টিটিউট ও দুটি আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

গত ২২ থেকে ২৫ মে চার দিনে তাদেরকে কুষ্টিয়ায় আনা হয়। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এসব ব্যক্তি নিজ খরচে একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে খাবার গ্রহণ করছে। আর স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত তাদের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বর্তমানে বৈধ পথে ভারতে যাওয়া-আসা কঠোর হওয়ায় মানুষজন প্রতিদিনই দৌলতপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে। সীমান্ত এলাকার মানুষজন বলছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই এসব মানুষ দেশে আসায় করোনা ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। কুষ্টিয়াতে ঈদের পর করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখানকার মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তারা স্বাস্থ্যবিধি যেমন মানছে না, তেমনি এ ব্যাপারে প্রশাসনের বাড়তি কোনো পদক্ষেপও চোখে পড়ছে না।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মুসা কবির জানান, ঈদের আগে হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ কিছুটা কমে এলেও ঈদের পর থেকে তা আবারও বেড়েছে। মূলত মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে বলেও মনে করেন তিনি।

কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাবের হিসাব মতে, জেলায় গত ১৩ মাসে ৫১ হাজার ৪৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে চার হাজার ৯৭৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৬৬০ জন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের তত্বাবধানে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মোট কোভিড বেড ৫০। এর মধ্যে আইসোলেশন বেড ৩০, অবজারভেশন বেড ২০টি।

বুধবার (জুন ২) করোনা রোগী ভর্তি আছে ৩৪ জন।

এখানে চার শয্যার লেভেল-১ মাত্রার আইসিইউ ইউনিট আছে। তবে এটি লেভেল-২ রুপান্তরের কাজ চলছে। দুই সপ্তাহ লাগবে। এখানে একটি লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক রয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছোট বড় ৩৪৭টি সিলিন্ডার রয়েছে। এতে সর্বনিম্ন ৬০০ লিটার থেকে সর্বো”চ ২ হাজার লিটার পর্যন্ত অক্সিজেনের জোগান দিতে পারে। করোনা ওয়ার্ডে বর্তমানে ১০ থেকে ১২ জনকে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের ব্যবস্থা আছে। বেশি মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের ১৪টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা (এইচএফএনসি) রয়েছে। তবে তিনটি নষ্ট।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বর্তমানে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ৩৫ জন ও বাড়িতে ১৭১ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। আপাতত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপরই জোর দেওয়া হয়েছে। এতে কাজ না হলে বা সংক্রমণ আরো বাড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।