টিকা গ্রহণে এগিয়ে রাজশাহী

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

টিকা গ্রহণে এগিয়ে রাজশাহী

টিকা গ্রহণে এগিয়ে রাজশাহী

প্রথমে যখন অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসে, তখন রাজশাহীর মানুষের মধ্যে একরকম পিছুটান দেখা গেছে। অনেকেই ইচ্ছে করে টিকা নেননি, কেউ কেউ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এরই মধ্যে শেষ হয়ে যায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মজুত। অনেকেই এখনও এর দ্বিতীয় ডোজ পাননি।

এরই মধ্যে রাজশাহীতে শুরু হয় করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ধরনের ঝড়। আক্রান্ত বাড়তে থাকে হু হু করে, সঙ্গে মৃত্যুও। তখন দেখা যায়, যাঁরা টিকা নিয়েছিলেন তাঁরা ভাল আছেন। কেউ কেউ টিকা নেওয়ার পরও আক্রান্ত হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন অবনতি হয়নি। তাই এখন টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। বিভাগের মধ্যে রাজশাহীই টিকা গ্রহণে এগিয়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

শুরু থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শহরের মানুষকে টিকা দেয়া হতো। সেখানে ছিল ৮টি বুথ। কিন্তু টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় সেই আটটি বুথে আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিদিন দেখা দিচ্ছিল মানুষের গিজগিজে ভিড়। তাই শনিবার থেকে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে টিকাকেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে ১৬টি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রে এখানে টিকা দিতে এসেছিলেন নগরীর তেরোখাদিয়ার বাসিন্দা আফসানা হাবিব। তিনি বলেন, প্রথমে যখন করোনার টিকা আসে, তখন ভয় লাগছিল। সে কারণে টিকা নিইনি। কিন্তু পরে দেখলাম, টিকার রেজাল্ট নাকি খুব ভাল। সে কারণে এখন টিকা নিয়ে নিচ্ছি। ছোটরা পেলে ওদেরও দিতাম।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রের নার্সদের ইনচার্জ সুলতানা রাজিয়া বলেন, টিকা নিয়ে মানুষের খুব আগ্রহ বেড়েছে। সে কারণেই বুথ বাড়াতে হলো। আর বুথ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রই পরিবর্তন করতে হলো। মানুষের মাঝে এই সচেতনতা খুব ভাল।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় জানিয়েছে, রাজশাহীর আট জেলার মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি টিকা প্রয়োগ হচ্ছে রাজশাহীতেই। রাজশাহীর সাত জেলা শহর ও সমস্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। শুধু রাজশাহী মহানগরে প্রয়োগ হচ্ছে মডার্নার টিকা। নয় উপজেলা ও মহানগর মিলে রাজশাহীতেই সবচেয়ে বেশি টিকা প্রয়োগ হচ্ছে। এরপর চাহিদা বেশি বগুড়ায়।

রোববার (১ আগস্ট) রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ৭ হাজার ৩৪০ জন টিকা নিয়েছেন। এরমধ্যে মহানগরে ৩ হাজার ৬৬০ এবং নয় উপজেলায় ৩ হাজার ৬৮০ জন টিকা গ্রহণ করেন। এর বাইরে পাবনায় ৫ হাজার ৬১৬, বগুড়ায় ৫ হাজার ৯৩৭, নাটোরে ৩ হাজার ৪৩২, সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৩৮৬, জয়পুরহাটে ২ হাজার ৩৭২ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৯৭৬ জন টিকা গ্রহণ করেন।

আগের দিন শনিবার (৩১ জুলাই) রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ৭ হাজার ৭৪ জন টিকা নিয়েছেন। এরমধ্যে মহানগরে ৩ হাজার ৫৮০ এবং নয় উপজেলায় ৩ হাজার ৪৯৪ জন টিকা গ্রহণ করেন। এর বাইরে পাবনায় ৫ হাজার ৫৭০, বগুড়ায় ৫ হাজার ২০৪, নাটোরে ৩ হাজার ১৯৮, সিরাজগঞ্জে ২ হাজার ৯৪১, জয়পুরহাটে ২ হাজার ৬৬০ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৬২৬ জন টিকা গ্রহণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী মহানগর এলাকার ৩ হাজার ৪৯০ জন মডার্নার টিকা নেন। এ দিন নয় উপজেলায় সিনোফার্মের টিকা নেন ৩ হাজার ৯২ জন। রাজশাহীতে সেদিন মোট টিকা নেন ৬ হাজার ৫৮২ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাবনায় টিকা নেন ৫ হাজার ৩৪৫ জন। এরপর বগুড়ায় ৫ হাজার ২৭৯ জন, নাটোরে ৩ হাজার ৭৫৩ জন, নওগাঁয় ৩ হাজার ৬৯২ জন, সিরাজগঞ্জে ২ হাজার ৭০৬ জন, জয়পুরহাটে ২ হাজার ৬৭৩ জন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৯৯২ জন টিকা গ্রহণ করেন।

গত বুধবার রাজশাহীতে টিকা নেন মোট ৬ হাজার ৫৮১ জন। সেদিন পাবনায় ৫ হাজার ৫১৯ জন, বগুড়ায় ৫ হাজার ২৪১ জন, নওগাঁয় ৪ হাজার ২৯৭ জন, নাটোরে ৩ হাজার ৩২০ জন, সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৪৭ জন, জয়পুরহাটে ১ হাজার ৯৮৮ জন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৯০৫ জন টিকা নেন।
বিভাগীয় সহকারী স্বাস্থ্য পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. নাজমা আক্তার বলেন, বিভাগের মধ্যে এখন রাজশাহীর মানুষই সবচেয়ে বেশি টিকা নিচ্ছেন। এরপর পাবনা ও বগুড়ায় চাহিদা বেশি। আমাদের কাছে যে পরিমাণ এখন টিকা আছে তা দিয়ে এভাবে আগামী একমাস টিকা দেওয়া সম্ভব। আশা করছি, এর মধ্যেও আরও টিকা আসবে।

তিনি আরও বলেন, অক্সফোর্ডের দ্বিতীয় ডোজের জন্য যাঁরা অপেক্ষা করছেন, তাঁরা আশা করছি আগস্টেই টিকা পাবেন। সরকারের তরফ থেকে এমনটাই শুনেছি।