ফেব্রুয়ারির নয় দিনে ৩০৯ জনের মৃত্যু

  বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনার ভয়াল থাবায় দিন দিন বেড়ে চলছে মৃত্যুর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বিগত ৫ মাসের মধ্যে করোনায় মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু রেকর্ড ৪৩ জন। চলতি মাসের নয় দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩০৯ জনের।

ওমিক্রন ও ডেল্টার প্রভাবে বিগত দিনে আক্রান্তরাই এখন ভুক্তভোগী হচ্ছেন বলে জানান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া আরেকটি বড় কারণ বলে মনে করেন, টিকা না নেওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও অনেক দিন থাকবে মৃত্যুর এই স্রোত। তবে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যুর হারও কমে আসবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি ৩১ জন, ২ ফেব্রুয়ারি ৩৬ জন, ৩ ফেব্রুয়ারি ৩৩ জন, ৪ ফেব্রুয়ারি ৩০ জন, ৫ ফেব্রুয়ারি ৩৬ জন, ৬ ফেব্রুয়ারি ২৯ জন, ৭ ফেব্রুয়ারি ৩৮ জন আর মঙ্গলবারের ৪৩ জন সহ সর্বশেষ বুধবার ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে এখন পর্যন্ত নয় দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩০৯ জনের।

এর আগে, ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি এক সপ্তাহে মারা যান ১৪০ জন।

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মৃতদের মধ্যে শতকরা ৭১ শতাংশই করোনা প্রতিরোধক টিকা নেননি। তালিকাভুক্ত মৃত ২২৬ জনের মধ্যে টিকা নেননি ১৬১ জন; যা শতকরা হিসাবে ৭১ দশমিক ২ শতাংশ। তবে টিকা নেওয়ার পরও মারা যাওয়া ৬৫ জনের মধ্যে ২৫ জন টিকার প্রথম ডোজ এবং ৪০ জন দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউই টিকার বুস্টার ডোজ নেননি।

এছাড়া সূত্রে জানা যায়, মারা যাওয়াদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিল ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ। অধিদফতর জানায়, ২২৬ জনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন ৬৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া ডায়াবেটিসে ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ, কিডনি রোগে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ, হৃদরোগে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ, বক্ষব্যাধিতে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, নিউরোলজিক্যাল রোগে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, স্ট্রোক ও ক্যানসারে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, থাইরয়েড রোগে ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং গ্যাস্ট্রোলিভার, রক্তজনিত রোগ ও অন্যান্য রোগে ভুগে মারা যান ১ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে একাধিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন অনেকেই।

রাজধানী শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, মাঝে আমাদের আক্রান্ত অনেক বেশি ছিলো। সংখ্যায় প্রায় ১৫ হাজারের মত। আক্রান্ত হওয়ার পর কিছুটা সময় লাগে সুস্থ হতে। এখন পাওয়া যাচ্ছে সেই প্রভাবটাই। ওই এফেক্টের (প্রভাব) কারণেই মৃত্যুর সংখ্যাটা বাড়ছে। এখন আক্রান্ত অনেক কমের দিকে আছে। এমন হারে কমতে থাকলে আস্তে আস্তে ৭ থেকে ১০ দিনের ভেতর মৃত্যুর সংখ্যাটাও কমে আসবে।

এখন শুধু ওমিক্রনে না; ডেল্টা তো রয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ রোগীই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের। আর যারা মারা যাচ্ছেন সিংহভাগই ষাটোর্ধ্ব বয়সের। ষাটের নিচে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যেও বেশিরভাগ নন ভ্যাক্সিনেটেড। ভ্যাকসিনটাই কিন্তু জীবন রক্ষা করে।

করোনায় আক্রান্তদের বিষয়ে তিনি বলে, হাইপারটেশন, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, লান্সের সমস্যা এগুলো তো আছে। এসব জটিলতা যাদের বেশি এবং ভ্যাকসিন নেননি; তারাই মারা যাচ্ছেন বেশি। তারা হয়তো বা নিয়ম ঠিকমত মানছেন না! অথবা ডাক্তারের কাছে দেরি করে যাচ্ছেন! সমস্যায় পরার পর আসছেন হাসপাতালে। শুরুতেই চলে আসলে এ সংকট মোকাবিলা করা যেত আগেই। এই সব মিলিয়ে প্রভাবটা কমতে একটু সময় লাগবে।

ভ্যাকসিন দেওয়া অনেকেই মারা যাচ্ছে বার্তা২৪.কমের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ সংখ্যাটা অনেক কম। আমাদের এখানে দু'জন এমন রোগী মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন ভ্যাকসিনের এক ডোজ নিয়েছেন। আরেকজন ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিন্তু তার সিওপিডি (অ্যাজমা), কিডনি ফেইলর, হাইপার টেনশনসহ অনেকগুলো রোগ ছিলো। এতগুলো রোগ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই খারাপের দিকে যায়।

একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের করোনা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যভ্যাস, শারীরিক ব্যায়াম ও প্রতিনিয়ত অসুখগুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে ওমিক্রনে আক্রান্তের ফলাফল এখনকার এই মৃত্যু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০ শতাংশ মৃত্যু যদি ওমিক্রনের প্রভাব হয়, বাকি ২০ শতাংশ ডেল্টা। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ঠিক দুই সপ্তাহ পরে মৃত্যু কমে আসবে বলে ধারণা করছেন তারা।