ফরচুনের শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণে জড়িতদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪.কম
জাতীয়
ফরচুন কারখানায় পাওনা বেতনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকের উপর গুলিবর্ষণে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে শনিবার (২৫ মে) সকাল ১১টায় মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখা।
এসময় আহতদের চিকিৎসা ব্যয় ও যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ শ্রমিকদের সকল বকেয়া বেতন-বোনাস ও ওভারটাইমের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করার দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল মল্লিক। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়কারী ডা. মনীষা চক্রবর্তী, ভোলার গ্যাস রক্ষায় নাগরিক আন্দোলনের ভোলা জেলা শাখার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান, বাসদ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সংগঠক অধ্যক্ষ মোশায়েদ হোসেন ঢালী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান সেলিম, সিপিবি ঝালকাঠি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত দাস হরি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজ খোকন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শহিদুল হাওলাদার, সোনারগাঁও টেক্সটাইল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য বেল্লাল গাজী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন শিকদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বরিশালে ফরচুন সুজ কম্পানির মালিক শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের হকের টাকা না দিয়ে দুই মাসের বেতন বকেয়া রাখে। অথচ ক্রিকেট দলের ফ্রাঙ্কাইজ স্বত্ত্ব কিনতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ওভারটাইমের মজুরি না দিয়ে ১০-১২ ঘণ্টা খাটিয়ে মাসের পর মাস শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের শোষণ করেছে। দুই মাস শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করে এক মাসের অর্ধেক মজুরি দিয়েছে।
হামলা করানোর সাথে জড়িত ফরচুনের মালিকপক্ষের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশের কেন্দ্র শ্রমিকরা, ব্যাংক লুটেরা কারখানা মালিকরা নয়। অথচ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী শ্রমিকদের রক্ষার পরিবর্তে শিল্প মালিকদের ভাড়াটে বাহিনীর মত নিন্দনিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা শ্রমিকের বকেয়া বেতন ভাতা আদায় করে দেওয়ার জন্য কোনো ভূমিকা পালন না করলেও মালিকদের অন্যায় আচরণকে প্রতিষ্ঠায় শ্রমিকের উপর নির্যাতকের ভূমিকা পালন করে। নেতৃবৃন্দ, শ্রমিকের উপর গুলিবর্ষণকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি শ্রম আইন বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বক্তারা আহত শ্রমিকদের জন্য যত্থাযত্থ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন এবং শ্রমিকদের ওভারটাইমসহ সমুদয় বকেয়া অবিলম্বে পরিশোধ করার দাবি জানান।
আমিনুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম
জাতীয়
রংপুরে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে রফতানি হলো। প্রথম পর্যায়ে ২০০ কেজি আম রফতানি করা হয়েছে। অচিরেই বিভিন্ন দেশে আম রফতানি করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা কৃষি বিভাগের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে রংপুরের এই জনপ্রিয় হাঁড়িভাঙা আম সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন দেশে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ভারত, পাকিস্তান ও ব্রুনাই রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে হাঁড়িভাঙা আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুমান ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন রংপুরের আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২১ জুন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে জিআই পণ্য হাঁড়িভাঙা আমের মেলা ও প্রদর্শনী হয়।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। সেখানে তিনি হাঁড়িভাঙা আম রফতানির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূলত মন্ত্রীর আগ্রহে ঢাকার গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কাওসার আহমেদ স্যাম্পল হিসেবে ২০০ কেজি হাঁড়িভাঙা আম জার্মানিতে পাঠিয়েছেন।
রংপুরে প্রতি বছর জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পাওয়া যায় স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় আঁশহীন সুমিষ্ট হাঁড়িভাঙা আম। শুরুর দিকে দাম কিছুটা চড়া হলেও হাঁড়িভাঙার স্বাদ নিতে হাট-বাজারে কমতি নেই ক্রেতাদের। এই আম ঘিরে চাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে আকারভেদে প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা আম ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ বছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে দেড় থেকে দুইশো কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ভালো মানের হাঁড়িভাঙা আম চেনার উপায় প্রসঙ্গে খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানি গ্রামের আমচাষি আমজাদ হোসেন পাইকার বলেন, হাঁড়িভাঙা আমের ওপরটা যত কালচে, ভেতরে ততই সুন্দর। এর স্বাদ ও মিষ্টি লোভনীয়। দেখতে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন আম বাগান কিনে নেওয়া ব্যবসায়ীরা নিজেদের লাভের জন্য কীটনাশক ও স্প্রে ব্যবহার করে থাকেন। এতে আম দেখতে ভালো, সুন্দর ও পাকা রঙের মনে হয়।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল আবেদীন বলেন, গ্রিন গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিমিটেড নিয়মিত বিভিন্ন জাতের আম রফতানি করে আসছে। হাঁড়িভাঙা আমের মেলা ও প্রদর্শনী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদের আগ্রহে প্রতিষ্ঠানটি জার্মানিতে আম রফতানি করেছে। জার্মানি আরও আম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জের মো. খলিলুর রহমানের বাগান থেকে ওই আম সরবরাহ করা হয়।
বর্তমানে হাঁড়িভাঙা আম নেপাল ও থাইল্যান্ডে রফতানির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হাঁড়িভাঙা জিআই পণ্য হয়েছে তা বেশি বেশি করে প্রচার করতে হবে। আম চাষিদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কৃষি অফিস কাজ করছে বলেও জানান সাইফুল আবেদীন।
হাঁড়িভাঙা আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। আঁটিও খুব ছোট। ছোবলা পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০-৩০০ গ্রাম। মূলত জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে হাঁড়িভাঙা আম পরিপক্বতা পায়। বড় সাইজের এক মণ (তিনটিতে এক কেজি) আম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। মাঝারি সাইজের আম ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। আর ছোট সাইজের এক মণ আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।
এটি আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু। এ আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। প্রতিটি আমের ওজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙার চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙা আকারভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে পারে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি বছর জেলায় ৩ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার চাষাবাদ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির অনেক সময় দামের হেরফের হয়।
ন্যূনতম স্বস্তিদায়ক জীবনযাপন বলতে যা বোঝায় তার সাথে কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ার মানুষের কোন পরিচয় নেই। শিবসা ও সুতারখালি নদীর মাঝে পলিমাটি দিয়ে গড়ে ওঠা কালাবগী গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে বাস করে প্রায় ৩০০টি পরিবার যারা কখনই মজবুত ভিতের উপর দাঁড়াতে পারেনি।
নদীর পাশে এক বিস্তীর্ণ সমতলভূমিতে, বাঁশের উঁচু মাচায় তাদের ঘরবাড়ি এমন ভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে যেন জোড়ালো হাওয়ায় পালকের মতো উড়ে যাবে।
প্রতি বছর, শিবসা নদীর প্রবল জোয়ারের ঢেউ নদী ভাঙনের মাধ্যমে এই পাড়ার ভূগোলই প্রায় পরিবর্তন করে ফেলে। এর ফলে প্রান্তিক মৎস্যজীবীরা তাদের ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
তাদের জীবনকে দুর্গত করতে প্রতিবছর সাইক্লোন আর জলোচ্ছাস নিয়ম করে তাদের ঘরবাড়ি ও জীবিকা ধ্বংস করে যায়।
ঝুলন্ত পাড়ার দরিদ্র মৎস্যজীবীদের কুঁড়েঘর/ছবি: নূর এ আলম
দরিদ্র মৎস্যজীবীদের তাদের কুঁড়েঘরগুলি পুনর্নির্মাণ করতে হয় ঋণের টাকা দিয়ে। তারা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ঘর তৈরি করে। এছাড়া আর কী বা করতে পারে তারা? বৃদ্ধ বাবা-মা, শিশু এবং স্ত্রীর জন্য তো মাথা গোঁজার ঠাঁই প্রয়োজন।
পঞ্চাশ বছর বয়সী মৎস্যজীবী গোলজার সানা বার্তা২৪ কে বলেন যে যতবার তার পরিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত হয়, ততবার তাকে তার কুঁড়েঘর পুনর্নির্মাণের জন্য একটি ছোট্ট জমি ভাড়া নিতে হয় জমির মালিককে এককালীন অর্থ দেয়ার মাধ্যমে।
“আমরা যদি আশেপাশের এলাকা থেকে বাঁশ ও গোলপাতার মতো নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহও করি, একটি ঘর পুনরায় তৈরিতে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা লাগে। সমস্ত অর্থই ঋণ হিসেবে জোগাড় করতে হয়,” গোলজার বললেন।
কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ার কোনো বাসিন্দাই তাদের বসবাসের বাসস্থানের জন্য জমির মালিক হতে পারেনা। তারা যে ছোট্ট জমিতে ঘর গড়ে বসবাস করে তার জন্য প্রতি বছর কিছু ধনী জমির মালিককে ভাড়া প্রদান করে। সেই জমির মালিকরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ স্থানে যেমন খুলনা শহরে বাস করে। কোন কোন জমির মালিক অবশ্য মহাজন বা ঋণদাতা হয়ে আসেন, যাদের থেকে দরিদ্র মৎস্যজীবীরা উচ্চ সুদে ঋণ গ্রহণ করে তাদের জীবিকা চালায়।
গোলজারের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে, যারা দাকোপ এলাকায় স্কুল বা কলেজে পড়ছে। তার পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানো ছাড়াও তাকে তার সন্তানের মাসিক শিক্ষার খরচ দিতে হয় করতে হয় যা জনপ্রতি কমপক্ষে ৩,০০০ টাকা।
আপনি কীভাবে অর্থ জোগাড় করেন? আমরা তাকে প্রশ্ন করি। গোলজার উত্তরে বলেন, “বর্তমানে, আমি ৯০,০০০ টাকা ঋণী। গত বছর, আমার ঋণের পরিমাণ ছিল ৫০,০০০ টাকা। আমি ২০,০০০ টাকা পরিশোধ করেছি। ৩০,০০০ টাকার দায় ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমাল (২৬ জুন) আমার ঘর সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। একারণে আমি কয়েক সপ্তাহ আগে ৬০,০০০ টাকা ঋণ করেছি,”।
ছবি: নূর এ আলম
খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় বাপদাদার বসতভিটা নদীভাঙনে তলিয়ে যাওয়ায় চল্লিশ বছর আগে মাজেদ গাজী কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ায় চলে আসেন। সেই সময়ে, ঝুলন্ত পাড়ায় মাত্র ৩০টি পরিবার ছিল।
বর্তমানে ৫৮ বছর বয়সী মাজেদ কালাবগীতে তার জীবনে অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখেছেন। এ বয়সেও তিনি কিছু ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে করতে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা যা কালাবগী এলাকার দক্ষিণ প্রান্তের তিন-চতুর্থাংশ ভেঙে নদীতে মিশিয়ে দিয়েছিল। আইলায় তার পরিবার এবং অনেক প্রতিবেশী বাস্তুচ্যুত হয়।
মাজেদ হতাশা নিয়ে বলেন, “আমাদের ঘরদোড় বছরে দুই থেকে তিনবার সরাতে হয় নদীভাঙন বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। এটি একটি নিয়মিত ঘটনা। প্রতিটি বিপর্যয় আমাদের উপর নতুন করে অর্থনৈতিক বোঝা তৈরি করে। আমরা এর থেকে বের হতে পারি না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক টাকাও সঞ্চয় করতে পারি না।”
বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ার বাসিন্দারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মৎস্যজীবী হিসেবে কাজ করছে।
ষাট বছর বয়সী শহিদুল গাজীর দুই ছেলেও একই পথ অনুসরণ করেছে। তবে, তার বড় ছেলে আবদুল গাজী নিজের পরিবার নিয়ে আলাদা থাকে।
এখন, শাহিদুল এবং তার স্ত্রী জায়েদা বেগম সম্পূর্ণরূপে তার ছোট ছেলে আলমগীর গাজীর আয়ের উপর নির্ভরশীল। দুই বছর আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে শহিদুর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
“খাবার এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে আমার ছেলের (আলমগীরের) স্বল্প আয়ে পরিবারের খরচ মেটানো অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে,” জায়েদা বলেন। সুন্দরবনে মাছ ধরার সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে তার ছেলে বছরে অন্তত পাঁচ মাস আয় করতে পারে না ।
যখন সুন্দরবনে মাছ ধরার পাশ দেওয়া হয়, তখন আলমগীর দিনে ৫০০-১,০০০ টাকা আয় করতে পারে। তবে, আয়ের একটি বড় অংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়।
“একারণে টিকে থাকতে আমাদের সারা বছর ঋণ নিতে হয়,” জায়েদা বললেন। বর্তমানে, পরিবারটির ৫০,০০০ টাকা ঋণ রয়েছে, যার মধ্যে গত বছরের দায় ৩০,০০০ টাকা অন্তর্ভুক্ত।
যখন জায়েদা তার ঝুলন্ত কুঁড়েঘরে কথা বলছিলেন, তখন নির্বাক শহিদুল তার স্ত্রীর দিকে ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।
সুতারখালি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ার গ্রামবাসীদের প্রতিনিধি নিমাই কুমার রায় বার্তা২৪ কে বলেন যে এই ঝুলন্ত পাড়া গ্রামের মানুষরা নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে।
“এখানে বিকল্প আয়ের কোন উপায় নেই যে তারা দুর্যোগে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। তাদের ঋণের ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়ারও কোন উপায় নেই। পর্যাপ্ত এবং ধারাবাহিক সরকারি সহায়তা ছাড়া তাদের এই অবস্থার পরিবর্তন অসম্ভব,” নিমাই বলেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খান মেহেদি হাসান দেখেছেন যে কালাবগী ঝুলন্ত পাড়ার মৎস্যজীবীদের জন্য অর্থের প্রবাহ প্রয়োজন, বিশেষ করে মাছ শিকারের এবং নিয়মিত ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য। এই অর্থের জন্যই তারা স্থানীয় মহাজনদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকেন।
“যদি তাদেরকে ঋণের ফাঁদ থেকে উদ্ধার করতে হয় তাহলে সরকারকে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আলাদা করে সনাক্ত করে তাদের জীবিকা যেন নিরবচ্ছিন্ন থাকে তার জন্য অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে,” অধ্যাপক খান উপসংহারে বলেন।
আ. লীগ টানা ক্ষমতায় বলেই উন্নয়ন স্থায়ী রূপ পেয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জাতীয়
২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের উন্নয়ন একটি স্থায়ী রূপ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৬ জুন) সকালে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধান লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেটা করতে দেওয়া হয়নি।
সরকারপ্রধান বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন জাতির পিতা। প্রতিরক্ষা নীতি প্রনয়ণ করেছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারেনি, বরং একের পর এক ক্যু হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার জানিয়ে তিনি বলেন, কাউকে আক্রমণ করবে না বাংলাদেশে, তবে আক্রান্ত হলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, ছবি: বার্তা২৪.কম
জাতীয়
অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমাতে কৃষকের বাজার সংখ্যা বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
বুধবার (২৬ জুন) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষি বিপণন অধিদফতর পরিচালিত এসব বাজারের সংখ্যা বাড়ানো গেলে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়া মায়ানমারের সঙ্গে আর কোনো সমস্যা নেই। বাণিজ্য করতে পারবো না ব্যবসা করতে পারবো না এমন কোনো অবস্থা নেই। মায়ানমারের সঙ্গে নৌযোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পেঁয়াজের দাম প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা পঁচনশীল পণ্য নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকে। ভারতের পাশাপাশি মায়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আমদানি চুক্তি করা হচ্ছে।
বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন বাজেট জুলাই থেকে কার্যকর হয়, পুরনো এসআরও থাকবে না। বাজেটের মাধ্যমে ট্যাক্স বাড়লেও প্রয়োজনে অনেক সময় এসআরও জারি করে কমিয়ে দেওয়া হয়। আমরা গত রমজানে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি।
বিএসআরএফ সভাপতি ফসিহ উদ্দিন মাহতাবের সভাপতিত্বে সংলাপ পরিচালনা করেন বিএসআরএফ সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।