৬ দিন পর খুলল সিলেটের কয়েকটি পর্যটন স্পট



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম,সিলেট
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় শর্ত সাপেক্ষে প্রায় ৬ দিন পর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সবকটি পর্যটন স্পট খুলে দেয়া হয়েছে।

রোববার (২৩ জুন) দুপুর থেকে উপজেলার সবকটি পর্যটন স্পট খুলে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।

প্রশাসনের বেধে দেওয়া শর্তের মধ্যে রয়েছে- জাফলং পর্যটন স্পটে নৌ-চলাচলের রুটে যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় সকল বোট মালিক, নৌ চালক-মাঝিদেরকে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

জাফলংয়ে পিয়াইন নদীর পানির গভীরতা ও স্রোত বিবেচনায় সাঁতার জানে না এবং ১২ বছরের কম বয়সীদের নিয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট স্পটে নৌকায় চলাচল করা যাবে না। এছাড়াও ট্যুরিস্ট পুলিশকে পর্যটন স্পটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিধানের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, আমাদের উপজেলাগুলোতে পর্যটন কমিটি রয়েছে। গোয়াইনঘাটের পর্যটন কমিটি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ও পর্যটকদের নিরাপত্তার সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাদের উপজেলায় পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তাই আজ দুপুর ১ টা থেকে এসকল স্পট পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

জৈন্তাপুর ও কোম্পানিগঞ্জের পর্যটন কমিটি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। তবে পর্যটনের বিষয়টি আমরা পজিটিভলি দেখছি।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন মঙ্গলবার পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কারণে সিলেটের সবকটি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে সিলেট জেলা প্রশাসন। এরপর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে এসকল স্পট।

স্বপ্ন জয়ের দুই বছরে পদ্মা সেতু

দুই দেশের বানিজ্য ও ভ্রমণ খাতে আমূল পরিবর্তন



আজিজুল হক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বেনাপোল বন্দর

ছবি: বেনাপোল বন্দর

  • Font increase
  • Font Decrease

বাঙালীর স্বপ্ন জয় করে পদ্মা সেতু আজ দুই বছরে পা রেখেছে। চলমান বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও সেতুর কল্যানে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে বেড়েছে বানিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত। তবে চলমান বৈশ্বিক মন্দা কাটলে এ সুফল আরো বাড়বে বলছেন বানিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দা কাটলে বানিজ্য আরো গতিশীল হবে।

জানা যায়, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হয়েছে তার মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০২২ সালের ২৫ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলা যুক্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে যশোর জেলার মানুষ। যশোরের বেনাপোলে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। আর ব্যবসা, ভ্রমন, উচ্চ শিক্ষা ও চিকিৎসার কাজে প্রতিবছর ২০ লাগের অধিক যাত্রী যাতায়াত করে। আগে যেখানে ঢাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস বেনাপোল বন্দরে পৌছাতে ১২ ঘন্টা থেকে অনেক সময় দিন পার হতো। এখন সেখানে ৪ ঘন্টায় পৌছাচ্ছে বন্দরে। এতে পাল্টে গেছে বানিজ্য ও ভ্রমনের চিত্র।

বন্দরের পরিসংখ্যন মতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ২০২৩ -২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন। আমদানি বেড়েছে ১০ হাজার ৫৫৬ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছে ১৯ লাখ ৮৫ হ্জার ৪০৭ জন। যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭ জন। এক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। তব। পদ্মা সেতুর আগে এরুটে যাত্রীর পরিমাণ বছরে ১৫ লাখ পাসপোর্টধারী ও আমদানি বানিজ্য ১৮ লাখ মেট্রিক টনের ঘরে ছিল।

বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জিয়াউর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, আগে ঢাকা খেকে বেনাপোল বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছাতে ১০ ঘন্টা থেকে পুরা দিন লেগে যেত। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে ৪ ঘন্টায় বন্দরে পণ্য পৌঁছায়। বানিজ্য সম্প্রসারনে বড় ভুমিকা পদ্মা সেতুর।

ভারতগামী পাসপোর্টধারী জমির বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, সেতুর কারনে ভোর ৪টার আগে বন্দরে পৌঁছাতে পারছি।যা আগে দ্বিগুন সময় লাগতো। তবে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল বৃদ্ধি আর ভোর ৫ টায় বেনাপোর বন্দর খোলা হলে যাত্রি আরো বাড়বে এরুটে।

বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস সিনিয়র সহসভাপতি আবুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন,পদ্মা সেতুর সুফলে বানিজ্য ত্বরান্বিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশে মধ্যে। বাড়ছে রাজস্ব আয়ও।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, পদ্মা সেতুর কল্যানে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন আমদানিকারকেরা। দ্রুত পণ্য গন্তব্যে পৌছানোয় সবাই উপকৃত হচ্ছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতা আমিনুল হক আনু জানান, পদ্মা সেতু দক্ষীন বঙ্গের মানুষের জন্য আর্শীবাদ। ভাঙা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নত হলে এপথে বানিজ্য ও রাজস্ব আয় দ্বিগুন বাড়বে।

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে জানান, পদ্মা সেতু ভারত-বাংলাদেশ বানিজ্য সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে আর্শীবাদ। ইতিমধ্যে দুই বছরে সে সুফল এপথে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারীরা পাচ্ছেন। বন্দরে আরো সুবিধা বাড়াতে তারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। আধুনিক বন্দর রুপান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে। ভারত অংশেও তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সুত্র জানায়, দুই বছরে সেতুতে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ২৭৫ যান পারাপার করেছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। দুই বছরের প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে ১৯ হাজার ১৬৮টি। প্রতিদিনের গড় টোল আদায় ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২২ টাকা। প্রথম বছর ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৬টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৮০১ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা। আর দ্বিতীয় বছর আয় আরও বেড়েছে। ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা।

;

দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…। ছবি: বার্তা২৪.কম

দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই লাশঘর। সেখানে পাশাপাশি দুটি আসনে শুয়ে আছেন দুই বন্ধু-মোহাম্মদ শাহেদ ও মোহাম্মদ ইকবাল। আড্ডা ছাড়া দুই বন্ধুর সময়ই কাটত না। কাছাকাছি থেকেও সেই দুই বন্ধুর মুখেই কিনা আজ নেই কোনো কথা, সুখ-দুঃখের গল্প। হবেই বা কি করে-আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডুলীতে যে দুই বন্ধুর শরীর নিস্তব্ধ হয়ে গেছে চিরতরে।

শাহেদ ও ইকবাল-দুই বন্ধুই প্রায় কাছাকাছি বয়সের। শাহেদ ১৮ বছরের আর ইকবালের বয়স ১৭। সাতকানিয়ার মির্জাখীল এলাকার বাসিন্দা এই দুই তরুণ ছোটকাল থেকেই বেড়ে ওঠেছেন একসঙ্গে। পরে চট্টগ্রাম শহরে এসে দুটি দোকানে চাকরি নেন দুই বন্ধু। পুরো সপ্তাহে নিজ নিজ কর্মস্থলে দুজন ব্যস্ত থাকলেও এক বন্ধুর মন পড়ে থাকত আরেক বন্ধুর কাছে। তাই তো বৃহস্পতিবার রাত এলেই শাহেদের বাসায় ছুঁটে আসতেন ইকবাল। গল্প-আড্ডা-মুঠোফোনে গেমস খেলতে খেলতেই কবে যে দুই বন্ধুর রাত শেষ হয়ে যেত নিজেরাই জানতেন না। বন্ধু শাহেদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর শুক্রবার বিদায় নিয়ে ইকবাল ফিরতেন নিজের বাসায়। এবার আর এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। তারই আগে যে জীবন থেকেই বিদায় নিয়েছেন দুজন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মধ্যরাতে রিয়াজউদ্দিন বাজারে লাগা আগুনে দুই বন্ধুই হারিয়েছেন প্রাণ। তাঁদের পাশাপাশি মারা গেছেন মোহাম্মদ রিদোয়ান নামের ৪৫ বছরের এক যুবকও।

মোহাম্মদ শাহেদ রিয়াজউদ্দিন বাজারের রেজওয়ান কমপ্লেক্সের আজওয়ার টেলিকম নামের একটি মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানে চাকরি করতেন। ইকবাল অন্য একটি দোকানে চাকরি করতেন।

আজওয়ার টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়া তাঁর কর্মী শাহেদকে হারিয়ে শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন শাহেদকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই পারেননি।

সাজ্জাদ মিয়া বলেন, 'শাহেদ ও ইকবাল ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এক বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধুর টান কতটা সেটা আমি অনুভব করতাম। ব্যবসার ফাঁকে সুযোগ পেলেই ইকবালের সঙ্গে ফোনে কথাট বলত শাহেদ। আমি বৃহস্পতিবার বাড়িতে গেলে বাসা ফাঁকা থাকত। তাই ইকবালকে নিয়ে আসত শাহেদ। আগুন লাগার সময় দুই বন্ধু বাসাতেই ছিল। মৃত্যুও হলো একসঙ্গেই।'

রেজওয়ান কমপ্লেক্সের গা ঘেঁষেই মোহাম্মদী প্লাজা। এই প্লাজার দোতলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের রেজওয়ান কমপ্লেক্সে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন।

মোহাম্মদী কমপ্লেক্সের অ্যাওয়ে টেলিকমের মোহাম্মদ রিদোয়ানের সঙ্গে পরিচয় ছিল মোহাম্মদ শাহেদের। তিনি বলেন, শাহেদ ও ইকবাল দুজনকেই চিনতাম। তারা খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। বৃহস্পতিবার এলেই ইকবাল ছুটে আসতেন বন্ধু শাহেদের বাসায়। শুনেছি আগুন ধরলে তাদের কেও কেও ডাকাডাকি করেন, তবে তারা কানে হেডফোন গুঁজে গেমস খেলায় সেটি শোনেননি। পরে আগুন বেড়ে গেলে তারা বুঝতে পারেন। কিন্তু ততক্ষণে কালো ধোঁয়া তাদের ঘিরে ফেলে। সেই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁরা।'

শাহেদ ও ইকবালের প্রাণ হারানোর খবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা

আগুনে শাহেদ ও ইকবালের প্রাণ হারানোর খবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা। জরুরি বিভাগের পাশের একটি কক্ষে বসিয়ে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য নেন পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়ার বাংলাবাজার মির্জাখীলের কুতুব পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন শাহেদ ও ইকবাল। ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই শাহেদের শোকাস্তবদ্ধ বাবা বেঠা মিয়া। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন পুরোটা সময়।

ভাগ্নের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামা মোহাম্মদ সোলায়মান। বলেন, ছোটকালে কোলেপিঠে করে ওকে বড় করেছি। তাকে আবার পিঠে নিয়ে কবরস্থানে নিতে হবে ভাবিনি কোনোদিন।

সোলায়মানের মন পুড়ছে ভাগ্নের বন্ধু ইকবালের জন্যও। বলেন, 'শাহেদ আর ইকবাল ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। এক বিছানায় ঘুমানো, এক প্লেটে খাওয়ার মতো বন্ধু ছিল দুজন। ইকবাল আমার ভাগ্নের বাসায় এসেছিল বেড়াতে। বেড়াতে এসে তাকেও মর্মান্তিকভাবে মারা যেতে হলো। কাকে আর দোষ দেব।'

ভাগ্নে শাহেদের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামা মোহাম্মদ সোলায়মান

শাহেদরা দুই ভাই। বড় ভাই সৌদি আরব প্রবাসী। শাহেদের চাচা জসিম উদ্দিন বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন ধরেছে আমরা সেটি রাতেই খবর পাই। কিন্তু সেখানে যে আমার ভাতিজা আটকা পড়েছে সেটি জানতাম না।

সকালে খবর পাই শাহেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে চমেক হাসপাতালে এসে তাঁর মরদেহ খুঁজে পাই। পেয়েছি তার বন্ধু ইকবালের মরদেহও। দুই বন্ধুই ১৭-১৮ বছরের। একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারত না। এখন মারাও গেল একসঙ্গে।

আগুনে বেশকিছু দোকান পুড়ে ছাই হলেও অক্ষত আছে শাহেদ যে দোকানে চাকরি করতেন সেটি। আজওয়ার টেলিকম নামের সেই দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়ার তবু মন খারাপ। এই মন খারাপের পুরোটাই শাহেদের জন্য। বলেন, গতকাল একসঙ্গে দোকানে বসে দুজন ক্রেতা সামলালাম। রাতে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি গেলাম। শেষ রাতে এসে দেখি ও নাই হয়ে গেল। কীভাবে মানব? আরো খারাপ লাগছে ওর সঙ্গে সময় কাটাতে এসে মারা যাওয়া বন্ধু ইকবালের জন্য।'

শাহেদ ও ইকবাল-সারাজীবন একই সুঁতোয় বাঁধা ছিল দুই বন্ধুর জীবন। মৃত্যুর পথেও পাড়ি দিলেন একইসঙ্গে। কিছু সময়ের ব্যবধানে দূরে কোথায়, অন্য কোনোখানে হয়তো আবারও দেখা হয়ে যাবে দুই অভিন্ন আত্মার!

;

দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে; ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতি আগামী তিনদিন থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এছাড়াও ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার পার্বত্য এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। 

শুক্রবার (২৮ জুন) আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

এছাড়াও সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫১, নেত্রকোনায় ৫০ ও সিলেটে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।

;

এক চেয়ারের দখল নিয়ে মুখোমুখি দুই বন্ধু



মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: রফিক মিয়া ও ফজর আলী

ছবি: রফিক মিয়া ও ফজর আলী

  • Font increase
  • Font Decrease

রফিক মিয়া ও ফজর আলী। দীর্ঘদিন ধরে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। ফাটলটা ধরে পৌর মেয়রকে কেন্দ্র করে। এবার সেই ফাটলটি গভীর হচ্ছে। এক চেয়ারে বসা নিয়ে মুখোমুখি দুই হচ্ছেন দুই বন্ধু। এমনই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভায়। বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে মুহিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের পর প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে তাদের মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই।

তারা দুজন হলেন-৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়া ওরফে রফিক হাসান ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিশ্বনাথ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো.আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে মেয়রকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। আদেশের একটি কলামে বলা হয় পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে পৌরসভার মেয়রের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।

আর এই আদেশ জারি হতে না হতেই মেয়রের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে প্যানেল মেয়র-১ দাবি করে তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কাউন্সিলর রফিক মিয়া ও কাউন্সিলর ফজর আলী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে মেয়রের দায়িত্ব চালাবেন বলে পৌর শহরে আনন্দ মিছিল করেন রফিক মিয়াসহ ৭ জন কাউন্সিলরদের সমর্থকরা।

আর রাত ৯ টায় প্যানেল মেয়র-১ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী। মূলত তারা ছিলেন একে অপরের ঘনিষ্ট বন্ধু। কিন্তু সম্প্রতি ৬ জন কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে বরখাস্ত হওয়া মেয়রের সাথে কাউন্সিলর রফিক আলীর দূরত্বের সৃষ্টি হলেও ফজর আলী রয়েছেন মুহিবুর রহমানের পক্ষে।

খোঁজ নিয়ে যায়, বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচন ২০২২ সালের ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর পৌরসভার প্যানেল মেয়র নির্বাচনের লক্ষে এক বিশেষ সাধারণ সভা পৌরসভা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেয়র মুহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সর্বসস্মতিক্রমে ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়াকে প্রথম প্যানেল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তার সাথে পৌরসভার ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর সাবিনা ইয়াসমিনকে দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র এবং ৩নং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সুমনকে তৃতীয় প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়।

তবে সংবাদ সম্মেলনে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী মেয়রকে বরখাস্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রায় ৩ মাস পূর্বে পৌরসভায় একটি মিটিংয়ের মাধ্যমে কাউন্সিলর রফিক আলীকে বাদ দিয়ে আমাকে প্যানেল মেয়র-১ করা হয়েছে। তাই যদি প্রশাসনিক বা আইনের জটিলতা না থাকে তাহলে রোববার থেকে পৌরসভার অফিসে বসে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করবো। কিন্তু কাউন্সিলর রফিক আলী মামলার আসামি হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। রফিক আলী মামলার আসামি হয়ে বিভিন্ন দফতরে অনায়াশে চলাফেরা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না। আর আমি এবং মেয়র মামলার আসামি হয়ে আইনকে শ্রদ্ধা করে আদালত থেকে জামিনে আছি। তিনি কাউন্সিলর রফিক আলীকে গ্রেফতারের জন্য জোর দাবি করেন।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিক মিয়া বলেন, নতুন পরিষদ গঠনের পরপর পৌরসভার প্রথম সভায় আমাকে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত করা হয়। মেয়র যখন দুই বিদেশ যান তখন আমি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছি। যখন আমরা মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছি তখন মেয়রসহ ওই কাউন্সিলর তাদের মতো করে রেজুলেশন করে কাগজ সৃষ্টি করেছে। যেখানে আমাদের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনাস্থা প্রস্থাবে মেয়রের বিরুদ্ধে আমাদের উপস্থিত স্বাক্ষর নিয়ে বিভিন্নতা লেখালেখি করেছেন ও রেজুলেশন কপি না দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কোনো কিছু না বুঝে, না জেনে কাউন্সিলর ফজর আলী ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য এসব করছেন।

এদিকে, প্যানেল মেয়র-১ দাবিদার হয়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন নিয়ে আগামী রোববার উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, সংঘর্ষের কোনো আশঙ্কা নেই। কেউ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার ও প্যানেল মেয়র-১ মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে দুটি বিষয়ের দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপন পেয়েছি।

উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন ৭ কাউন্সিলর।

অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ রফিক মিয়া, প্যানেল মেয়র-২ সাবিনা বেগম, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজুক মিয়া রাজ্জাক, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুর আলী, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামীম আহমদ, ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসনা বেগম ও ৩নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লাকী বেগম।

অনাস্থ প্রস্তাব প্রেরণের পরপরই দুইভাগে বিভক্ত হন কাউন্সিলররা।প্যানেল মেয়র রফিক মিয়াসহ ৭ কাউন্সিলর এক পক্ষে ও মেয়র মুহিবের পক্ষ নেন ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজর আলী, ৬নং ওয়ার্ডের বারাম উদ্দিন, ও ৪নং ওয়ার্ডের মুহিবুর রহমান বাচ্চু।

;