সংসদে 'মুজিব ও স্বাধীনতা' উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় সংসদ ভবনে নির্মিত 'মুজিব ও স্বাধীনতা' স্থাপনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

সোমবার (২৪ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে স্থাপিত 'মুজিব ও স্বাধীনতা' স্থাপনা পরিদর্শন করে তা উদ্বোধন করেন তিনি। পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্পীকার 'মুজিব ও স্বাধীনতা' এ প্রদর্শিত বিভিন্ন স্থিরচিত্র ও ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

'মুজিব ও স্বাধীনতা' স্থাপনা উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন এবং এর প্রশংসা করেন। তিনি জাতীয় সংসদে 'মুজিব ও স্বাধীনতা' স্থাপনের জন্য স্পিকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো: শামসুল হক টুকু এমপি, চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি, হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, হুইপ মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা এমপি এবং হুইপ সানজিদা খানম এমপি উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, 'মুজিব ও স্বাধীনতা' সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়ার এক অনন্য প্রয়াস। এখানে প্রথম কক্ষে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোর, খোকা থেকে শুরু হয়ে তারুণ্যে মুজিব ভাই হয়ে ওঠা, ভারত ভাগ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, উত্তাল ভাষা আন্দোলন ও ১৯৫০ এর দশকের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ এর নির্বাচন পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়েছে।

'৭০ এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিজয়ের প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে দ্বিতীয় কক্ষের ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে গেছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের দিকে। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ৭ মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক ২৫ মার্চের গণহত্যা, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অকাতর সংগ্রাম এবং মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগের ধারাবর্ণনা স্থান পেয়েছে এই কক্ষে।

তৃতীয় কক্ষে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের সাথে আরো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের পরিচিতি সুসংহত করার স্বর্ণালী ইতিহাস। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সংগ্রামী জীবন ও বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবনের কিছু খণ্ডচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এরপর বাংলাদেশের ইতিহাসের কালো অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্থান পেয়েছে।

বন্ধের দিনেও খাল খননে ডিএনসিসি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উদ্ধারকৃত জমি দখলমুক্ত রাখতে ছুটির দিনেও অভিযান পরিচালনা করে খাল খননের কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।

শুক্রবার (২৮ জুন) মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় সকাল থেকে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। মাঝে জুমার নামাজের বিরতির পর আবারও খনন কাজ চলে।

ডিএনসিসির তথ্য কর্মকর্তা মো. পিয়াল হাছান এ বিষয়টি জানিয়েছেন।

ডিএনসিসির খাল উদ্ধারে টানা তিন দিন ওই এলাকায় অভিযান চলছে। গতকাল অভিযান পরিচালনা করে ৬০টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে ১০ বিঘা জমি উদ্ধার করে ডিএনসিসি।

অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হাসান, স্থানীয় কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ।

উল্লেখ, আগামীকালও সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উচ্ছেদ অভিযান ও খাল খনন কাজ চলবে।

;

স্বপ্ন জয়ের দুই বছরে পদ্মা সেতু

দুই দেশের বানিজ্য ও ভ্রমণ খাতে আমূল পরিবর্তন



আজিজুল হক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বেনাপোল বন্দর

ছবি: বেনাপোল বন্দর

  • Font increase
  • Font Decrease

বাঙালীর স্বপ্ন জয় করে পদ্মা সেতু আজ দুই বছরে পা রেখেছে। চলমান বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও সেতুর কল্যানে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে বেড়েছে বানিজ্য ও পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত। তবে চলমান বৈশ্বিক মন্দা কাটলে এ সুফল আরো বাড়বে বলছেন বানিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দা কাটলে বানিজ্য আরো গতিশীল হবে।

জানা যায়, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হয়েছে তার মধ্যে পদ্মা সেতু অন্যতম। নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০২২ সালের ২৫ জুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলা যুক্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে যশোর জেলার মানুষ। যশোরের বেনাপোলে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। আর ব্যবসা, ভ্রমন, উচ্চ শিক্ষা ও চিকিৎসার কাজে প্রতিবছর ২০ লাগের অধিক যাত্রী যাতায়াত করে। আগে যেখানে ঢাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস বেনাপোল বন্দরে পৌছাতে ১২ ঘন্টা থেকে অনেক সময় দিন পার হতো। এখন সেখানে ৪ ঘন্টায় পৌছাচ্ছে বন্দরে। এতে পাল্টে গেছে বানিজ্য ও ভ্রমনের চিত্র।

বন্দরের পরিসংখ্যন মতে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ২০২৩ -২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন। আমদানি বেড়েছে ১০ হাজার ৫৫৬ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছে ১৯ লাখ ৮৫ হ্জার ৪০৭ জন। যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭ জন। এক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। তব। পদ্মা সেতুর আগে এরুটে যাত্রীর পরিমাণ বছরে ১৫ লাখ পাসপোর্টধারী ও আমদানি বানিজ্য ১৮ লাখ মেট্রিক টনের ঘরে ছিল।

বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জিয়াউর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, আগে ঢাকা খেকে বেনাপোল বন্দরে পণ্যবাহী ট্রাক পৌঁছাতে ১০ ঘন্টা থেকে পুরা দিন লেগে যেত। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে ৪ ঘন্টায় বন্দরে পণ্য পৌঁছায়। বানিজ্য সম্প্রসারনে বড় ভুমিকা পদ্মা সেতুর।

ভারতগামী পাসপোর্টধারী জমির বিশ্বাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, সেতুর কারনে ভোর ৪টার আগে বন্দরে পৌঁছাতে পারছি।যা আগে দ্বিগুন সময় লাগতো। তবে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল বৃদ্ধি আর ভোর ৫ টায় বেনাপোর বন্দর খোলা হলে যাত্রি আরো বাড়বে এরুটে।

বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টস এন্ড এক্সপোর্টস সিনিয়র সহসভাপতি আবুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন,পদ্মা সেতুর সুফলে বানিজ্য ত্বরান্বিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশে মধ্যে। বাড়ছে রাজস্ব আয়ও।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বার্তা২৪.কমকে বলেন, পদ্মা সেতুর কল্যানে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন আমদানিকারকেরা। দ্রুত পণ্য গন্তব্যে পৌছানোয় সবাই উপকৃত হচ্ছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের নেতা আমিনুল হক আনু জানান, পদ্মা সেতু দক্ষীন বঙ্গের মানুষের জন্য আর্শীবাদ। ভাঙা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নত হলে এপথে বানিজ্য ও রাজস্ব আয় দ্বিগুন বাড়বে।

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে জানান, পদ্মা সেতু ভারত-বাংলাদেশ বানিজ্য সম্প্রসারনের ক্ষেত্রে আর্শীবাদ। ইতিমধ্যে দুই বছরে সে সুফল এপথে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারীরা পাচ্ছেন। বন্দরে আরো সুবিধা বাড়াতে তারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন। আধুনিক বন্দর রুপান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে। ভারত অংশেও তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সুত্র জানায়, দুই বছরে সেতুতে ১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ২৭৫ যান পারাপার করেছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। দুই বছরের প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে ১৯ হাজার ১৬৮টি। প্রতিদিনের গড় টোল আদায় ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২২ টাকা। প্রথম বছর ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৬টি যান পারাপারে টোল আদায় হয়েছে ৮০১ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা। আর দ্বিতীয় বছর আয় আরও বেড়েছে। ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ২২৯টি যান পারাপারে টোল আদায় হয় ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা।

;

দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…। ছবি: বার্তা২৪.কম

দুই বন্ধু শুয়ে আছেন পাশাপাশি, লাশঘরে…। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই লাশঘর। সেখানে পাশাপাশি দুটি আসনে শুয়ে আছেন দুই বন্ধু-মোহাম্মদ শাহেদ ও মোহাম্মদ ইকবাল। আড্ডা ছাড়া দুই বন্ধুর সময়ই কাটত না। কাছাকাছি থেকেও সেই দুই বন্ধুর মুখেই কিনা আজ নেই কোনো কথা, সুখ-দুঃখের গল্প। হবেই বা কি করে-আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডুলীতে যে দুই বন্ধুর শরীর নিস্তব্ধ হয়ে গেছে চিরতরে।

শাহেদ ও ইকবাল-দুই বন্ধুই প্রায় কাছাকাছি বয়সের। শাহেদ ১৮ বছরের আর ইকবালের বয়স ১৭। সাতকানিয়ার মির্জাখীল এলাকার বাসিন্দা এই দুই তরুণ ছোটকাল থেকেই বেড়ে ওঠেছেন একসঙ্গে। পরে চট্টগ্রাম শহরে এসে দুটি দোকানে চাকরি নেন দুই বন্ধু। পুরো সপ্তাহে নিজ নিজ কর্মস্থলে দুজন ব্যস্ত থাকলেও এক বন্ধুর মন পড়ে থাকত আরেক বন্ধুর কাছে। তাই তো বৃহস্পতিবার রাত এলেই শাহেদের বাসায় ছুঁটে আসতেন ইকবাল। গল্প-আড্ডা-মুঠোফোনে গেমস খেলতে খেলতেই কবে যে দুই বন্ধুর রাত শেষ হয়ে যেত নিজেরাই জানতেন না। বন্ধু শাহেদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর শুক্রবার বিদায় নিয়ে ইকবাল ফিরতেন নিজের বাসায়। এবার আর এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। তারই আগে যে জীবন থেকেই বিদায় নিয়েছেন দুজন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মধ্যরাতে রিয়াজউদ্দিন বাজারে লাগা আগুনে দুই বন্ধুই হারিয়েছেন প্রাণ। তাঁদের পাশাপাশি মারা গেছেন মোহাম্মদ রিদোয়ান নামের ৪৫ বছরের এক যুবকও।

মোহাম্মদ শাহেদ রিয়াজউদ্দিন বাজারের রেজওয়ান কমপ্লেক্সের আজওয়ার টেলিকম নামের একটি মুঠোফোনের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানে চাকরি করতেন। ইকবাল অন্য একটি দোকানে চাকরি করতেন।

আজওয়ার টেলিকমের মালিক সাজ্জাদ মিয়া তাঁর কর্মী শাহেদকে হারিয়ে শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন শাহেদকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই পারেননি।

সাজ্জাদ মিয়া বলেন, 'শাহেদ ও ইকবাল ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এক বন্ধুর জন্য আরেক বন্ধুর টান কতটা সেটা আমি অনুভব করতাম। ব্যবসার ফাঁকে সুযোগ পেলেই ইকবালের সঙ্গে ফোনে কথাট বলত শাহেদ। আমি বৃহস্পতিবার বাড়িতে গেলে বাসা ফাঁকা থাকত। তাই ইকবালকে নিয়ে আসত শাহেদ। আগুন লাগার সময় দুই বন্ধু বাসাতেই ছিল। মৃত্যুও হলো একসঙ্গেই।'

রেজওয়ান কমপ্লেক্সের গা ঘেঁষেই মোহাম্মদী প্লাজা। এই প্লাজার দোতলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের রেজওয়ান কমপ্লেক্সে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন।

মোহাম্মদী কমপ্লেক্সের অ্যাওয়ে টেলিকমের মোহাম্মদ রিদোয়ানের সঙ্গে পরিচয় ছিল মোহাম্মদ শাহেদের। তিনি বলেন, শাহেদ ও ইকবাল দুজনকেই চিনতাম। তারা খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। বৃহস্পতিবার এলেই ইকবাল ছুটে আসতেন বন্ধু শাহেদের বাসায়। শুনেছি আগুন ধরলে তাদের কেও কেও ডাকাডাকি করেন, তবে তারা কানে হেডফোন গুঁজে গেমস খেলায় সেটি শোনেননি। পরে আগুন বেড়ে গেলে তারা বুঝতে পারেন। কিন্তু ততক্ষণে কালো ধোঁয়া তাদের ঘিরে ফেলে। সেই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁরা।'

শাহেদ ও ইকবালের প্রাণ হারানোর খবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা

আগুনে শাহেদ ও ইকবালের প্রাণ হারানোর খবরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনেরা। জরুরি বিভাগের পাশের একটি কক্ষে বসিয়ে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য নেন পুলিশের সদস্যরা।

সাতকানিয়ার বাংলাবাজার মির্জাখীলের কুতুব পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন শাহেদ ও ইকবাল। ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই শাহেদের শোকাস্তবদ্ধ বাবা বেঠা মিয়া। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন পুরোটা সময়।

ভাগ্নের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামা মোহাম্মদ সোলায়মান। বলেন, ছোটকালে কোলেপিঠে করে ওকে বড় করেছি। তাকে আবার পিঠে নিয়ে কবরস্থানে নিতে হবে ভাবিনি কোনোদিন।

সোলায়মানের মন পুড়ছে ভাগ্নের বন্ধু ইকবালের জন্যও। বলেন, 'শাহেদ আর ইকবাল ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। এক বিছানায় ঘুমানো, এক প্লেটে খাওয়ার মতো বন্ধু ছিল দুজন। ইকবাল আমার ভাগ্নের বাসায় এসেছিল বেড়াতে। বেড়াতে এসে তাকেও মর্মান্তিকভাবে মারা যেতে হলো। কাকে আর দোষ দেব।'

ভাগ্নে শাহেদের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মামা মোহাম্মদ সোলায়মান

শাহেদরা দুই ভাই। বড় ভাই সৌদি আরব প্রবাসী। শাহেদের চাচা জসিম উদ্দিন বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন ধরেছে আমরা সেটি রাতেই খবর পাই। কিন্তু সেখানে যে আমার ভাতিজা আটকা পড়েছে সেটি জানতাম না।

সকালে খবর পাই শাহেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে চমেক হাসপাতালে এসে তাঁর মরদেহ খুঁজে পাই। পেয়েছি তার বন্ধু ইকবালের মরদেহও। দুই বন্ধুই ১৭-১৮ বছরের। একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকতে পারত না। এখন মারাও গেল একসঙ্গে।

আগুনে বেশকিছু দোকান পুড়ে ছাই হলেও অক্ষত আছে শাহেদ যে দোকানে চাকরি করতেন সেটি। আজওয়ার টেলিকম নামের সেই দোকানের মালিক সাজ্জাদ মিয়ার তবু মন খারাপ। এই মন খারাপের পুরোটাই শাহেদের জন্য। বলেন, গতকাল একসঙ্গে দোকানে বসে দুজন ক্রেতা সামলালাম। রাতে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি গেলাম। শেষ রাতে এসে দেখি ও নাই হয়ে গেল। কীভাবে মানব? আরো খারাপ লাগছে ওর সঙ্গে সময় কাটাতে এসে মারা যাওয়া বন্ধু ইকবালের জন্য।'

শাহেদ ও ইকবাল-সারাজীবন একই সুঁতোয় বাঁধা ছিল দুই বন্ধুর জীবন। মৃত্যুর পথেও পাড়ি দিলেন একইসঙ্গে। কিছু সময়ের ব্যবধানে দূরে কোথায়, অন্য কোনোখানে হয়তো আবারও দেখা হয়ে যাবে দুই অভিন্ন আত্মার!

;

দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

দেশজুড়ে টানা ৩ দিন বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে; ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতি আগামী তিনদিন থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এছাড়াও ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার পার্বত্য এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। 

শুক্রবার (২৮ জুন) আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

এছাড়াও সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫১, নেত্রকোনায় ৫০ ও সিলেটে ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।

;