মতিউর ও তার পরিবারের সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মো. মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তান

মো. মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তান

  • Font increase
  • Font Decrease

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের জায়গা জমির তথ্য চেয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (৩০ জুন) দুদকের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয় বলে সংস্থাটির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে, দুদকের আবদনের প্রেক্ষিতে মতিউর রহমান, তার স্ত্রী কলেজশিক্ষক লায়লা কানিজ এবং পুত্র আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্নবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

এদিকে, ড. মতিউর রহমানের সম্পদ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, গত ৪ জুন মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে দুদকের একজন উপ-পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দলের সদস্যরা কাজও শুরু করেছেন।

এছাড়া আলোচিত মতিউর রহমানকে গত ২৩ জুন এনবিআর থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত। তার পরই আলোচনায় আসে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ, আয় ও ব্যয়ের তথ্য। এনিয়ে খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। খোদ এনবিআরও তার আয়কর রিটার্নে দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়।

মূলত মতিউর রহমান কাস্টমস কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুদকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে একাধিক আবেদন জমা পড়ে।

সাধারণ একজন চাকরিজীবী হয়েও এ পর্যন্ত শতকোটি টাকা সাদা করেছেন। বসুন্ধরায় দুই কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট এবং ধানমন্ডিতে ৫ কাঠায় আলিশান ৭ তলা বাড়ির মালিক। যার মূল্য ৪০ কোটি টাকা। ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর গ্লোবাল জুতার ফ্যাক্টরি। এ ছাড়া রয়েছে ৬০ শতাংশ জমি।

জেসিক্স নামে একটি যৌথ ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে। বসুন্ধরার ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন আছে। গাজীপুর সদরে ৮টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। তার স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১৪.০৩ শতাংশ, গাজীপুর থানার খিলগাঁও মৌজায় ৬২.১৬ শতাংশ জমি রয়েছে।

ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ১৪.৫০ শতাংশ জমি আছে গাজীপুরে। যার মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে আছে একাধিক দামি গাড়ি। তার নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকার বেশি এফডিআর করা আছে। তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। বিভিন্ন নারীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক আছে।

ড. মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন্যান্স বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রিস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভ্যাট এবং কাস্টমস বিষয়ে দেশ-বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে এডিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে এডিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

ছবি: সংগৃহীত, স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে এডিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

  • Font increase
  • Font Decrease

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সঙ্গে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ, মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কার্যালয়ে ইংমিং ইয়াংয়ের নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের একটি বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ২শ ২৭টি প্রজেক্টের মধ্যে এডিবি'র সহায়তায় বাস্তবায়িত প্রজেক্ট ১০টি। এর আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ ২২ হাজার ৩শ ৫৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্যতম আর্থিক সহযোগী পার্টনার হিসেবে আমরা চাই, এই সহায়তা অব্যাহত থাকুক!

মন্ত্রী আরো বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ এবং সিলেট বিভাগসহ অন্যান্য অঞ্চলে বন্যায় বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ক্ষতি প্রায় ১ হাজার ৬শ কোটি টাকা এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪শ কোটি টাকা। এডিবি'র সঙ্গে চলমান প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি আমরা এডিবি'র কাছ থেকে উপকূল এবং বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলের সহায়তায় আর্থিক সাহায্য প্রত্যাশা করছি।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা নেওয়ার প্রস্তাব আছে। শর্তসাপেক্ষে আমরা সে সহায়তাও নিতে পারি নতুবা নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এই ক্ষয়ক্ষতি মেটাবো।

এডিবি'র দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, টেকসই পরিবেশ এবং আঞ্চলিক একত্রীকরণের মাধ্যমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দারিদ্র্য হ্রাস করে। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উত্তরণে এডিবি সর্বাত্মক সহায়তা করে। বাংলাদেশের ব্যাপারেও আমরা আশাবাদী। আমরা চাই, বাংলাদেশও উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হোক।

ইংমিং ইয়াং আরো বলেন, বাংলাদেশে এটা আমার প্রথম সফর। এই সফরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর আগামী লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের সঙ্গে সমান্তরালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও কাজ করে যেতে চায়।

বৈঠকে এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আলী আকতার হোসেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁসহ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

;

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দিনাশ কে ত্রিপাঠি।

মঙ্গলবার (২জুলাই) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্টের সৌজন্য সাক্ষাৎ
 

এ দিন একই ভেন্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট (সাউথ, সেন্ট্রাল অ্যান্ড ওয়েস্ট এশীয়) ইংমিং ইয়াংও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

;

বিদেশ যাওয়ার টাকা দিয়ে উল্টো বিপদে নরসিংদীর সোহেল রানা



শরীফ ইকবাল রাসেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নরসিংদী শহরতলীর চিনিশপুর ইউনিয়নের দাসপাড়া মহল্লার ওয়ারেশ সরকারের ছেলে সোহেল রানা। স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। বিদেশে যাওয়ার জন্য ধার-দেনা করে দালালকে দেয়া ৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই টাকা নেয়ার জন্য পাওনাদারগণ এখন তাগাদা দিচ্ছে।

এ ঘটনায় সোহল রানা বাদী হয়ে নরসিংদী আদালতে মানব পাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়ে ৪ মাস জেল খেটে দেশে ফেরেন সোহেল রানা। দালাল চক্রের হাতে নির্যাতনের শিকারসহ টাকা পয়সা হারিয়ে নিঃস্ব সোহেল দেশে ফিরে টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন দালাল চক্রের পেছনে ঘুরেছেন। এতে ব‍্যর্থ হয়ে অবশেষে আদালতের দারস্থ হয়েছেন।

সোহেল রানা জানায়, শহরতলীর দাসপাড়া এলাকার মৃত আসাব উদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের মাধ্যমে পরিচয় হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা বিশনন্দী চৈতনকান্দা এলাকার আলা উদ্দিনের ছেলে দালাল দেলোয়ারের সাথে।

দোলোয়ার হোসেন নরসিংদীর সোহেল রানাকেকে বৈধ পথে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট নেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ব‍্যাংকের মাধ্যমে আরও ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন।

সোহেল রানা বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে ঢাকার নয়া পল্টন এলাকায় চায়না টাওয়ারে অবস্থিত বঙ্গ ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মনিরুল ইসলাম নিলয়ের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ২ জুন বিমান যোগে সিঙ্গাপুর যায়। সিঙ্গাপুর থেকে ৩ জুন বিমানযোগে কম্বোডিয়া যান। কম্বোডিয়ায় ২০/২৫ জন লোকের সাথে একটি হোটেলে অবরুদ্ধ হয়। পরে ১৪ জনকে প্রায় ৭ কিলোমিটার হাটার পর একটি গাড়িতে করে প্রায় ১৭ ঘণ্টা যাওয়ার পর মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মাঝে একটি অজানা কক্ষে আটকে রাখা হয়।

ওখানে একদিন রেখে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে ২০২৩ সালের ৬ জুন থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করান। সেখান থেকে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা গাড়ি করে মালয়েশিয়া রাজধানী কুয়ালামপুরে একটি হোটেল রাখা হয়।

পরে রাতে পাসপোর্ট ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে নির্যাতন করে তার মাধ্যমে দেশে ফোন করিয়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে দালাল চক্র। টাকা দিতে সোহেলের পরিবার ব্যর্থ হওয়ায় অবৈধ অভিবাসী হিসেবে সোহেল সহ রুমের সকলকে ৭ জুন রাতে মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় দালাল চক্র।

৮ জুন সোহেলের পরিবারের কাছে দালাল চক্র ডাচবাংলা ব‍্যাংকের মাধ্যমে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করলেও সোহেলের সাথে কারো কোনো যোগাযোগ করতে পরেনি।

দীর্ঘ ৪ মাস জেল খাটার পর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৩০ শে আগস্ট দেশে ফেরেন সোহেল। দেশে ফিরে টাকা উদ্ধারের জন‍্য দালাল চক্রের পেছনে ঘুরে ব‍্যর্থ হয়ে অবশেষে নরসিংদী জজ কোর্টে মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ভুক্তভোগী সোহেল রানা বাদী হয়ে দালাল চক্রের ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

আদালত মামলাটি তদন্ত পূর্বক ব‍্যবস্থ্য গ্রহণের জন‍্য নরসিংদী সদর থানায় হস্তান্তর করেন। এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে দালাল চক্রের সদস্যরা সোহেলকে মামলা প্রত‍্যাহার করতে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন বলে জানায় সোহেল। এরই জেরে তিনি নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।

এ ব‍িষয়ে অভিযুক্ত দালাল দেলোয়ারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নরসিংদী সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল গাফফার জানান, মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা বাদীকে নোটিশ করেছি, বাদীকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

অভিযোগকারীকে যেই শর্তে মালয়েশিয়ায় নিয়ে কাজ দেওয়ার কথা ছিল সেরকমটি ঘটেনি বলেই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে, আশা করছি দ্রুতই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে।

;

টেকসই বাঁধ চান ফুলগাজী-পরশুরামবাসী, বন্যার ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের মানুষ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে গেছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে গেছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে ফেনীর মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।

বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় মানুষের আসবাবপত্র, ধান-চালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে পানি উঠে রান্না করার চুলা ভিজে যাওয়ায় না খেয়ে ছিল অধিকাংশ মানুষ। এমন অবস্থায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ফুলগাজী পরশুরামের মানুষ।

সোমবার (১ জুলাই) রাত থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।

জানা গেছে, সোমবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, বিজয়পুরসহ পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।


এছাড়া পরশুরাম উপজেলার দক্ষিণ শালধর এলাকার জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন বাঁধের একটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে দক্ষিণ শালধর, মালিপাথর, নিলক্ষ্মী, ঘোষাইপুর এবং পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিজপুর গ্রামের মন্তু মিয়ার বাড়ি, পাটনী ভুঞা বাড়িসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতে পানিবন্দি হয়ে আছে সাধারণ মানুষ। অনেকের ঘরের পেছনের অংশ ভেঙে গেছে, কারও গুদাম ঘরে ফাটল ধরেছে। চুলা পানির নিচে থাকায় রান্না করতে পারেনি অধিকাংশ পরিবার।

পাটনী বাড়ির সুদীর চন্দ্র দাস বলেন, ঘরের মধ্যে, উঠানে পানি উঠে রাত থেকে ঘরের বাইরে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে কৃষকদের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ঘরের গুদাম, ধান চাল নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের গুদাম ঘর সে ঘরে ফাটল ধরে গেছে। অচিরেই ভেঙে পড়বে। এর আগেও তুফানে গাছ পড়ে ঘরের ক্ষতি হয়েছে। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে আমরা খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব। পাশাপাশি বাধ নির্মাণে স্থায়ী ব্যবস্থা নিলেই এ দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্তি পাব।

সখিনা বেগম নামে আরেকজন বলেন, রাত ৩ টার দিকে পানি উঠে চুলা ভিজে গেছে। ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ আমাদের দেখতে আসেনা। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা আমাদের দেখতেও আসেনি। নিজে কষ্ট করে বাপের বাড়ি থেকে চলতেছি। এখন সব শেষ হয়ে গেছে, সরকারের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করেন তিনি।

মন্তু মিয়ার বাড়ির মোঃ বেলাল বলেন, কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে রাতে। জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের পাশ দিয়ে ভেঙে সব নদীর সাথে মিশে গেছে। রান্না বান্না করার মত অবস্থা নেই। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়। এখন ক্ষতি হয়েছে, আগামীতে যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। নয়ত আমাদের এ দুর্দশা আজীবন থেকে যাবে।


ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ী আলী আহম্মদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বন্যা হলেও বাজারে এতো পানি কখনও হয়নি। সোমবার রাতে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে প্রায় তিন ফুটের বেশি পানিতে বাজার প্লাবিত হয়েছে। রাতে স্বাভাবিকভাবে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গেলেও সকালে এসে অনেক সামগ্রী পানির নিচে পেয়েছি।

স্বপ্না আক্তার নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাত্র একবছর আগে টেইলার্স দোকান দিয়েছিলাম। আজকে বন্যার পানি প্রবেশ করে দোকানে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছরই এমন বন্যায় আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এবার আর কোনও ত্রাণ নয়, একটি স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা।

পরশুরামের চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, রাতে দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধে ভাঙনের শুরু হয়। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। গতবছরও এ ভাঙন স্থানের পাশে বাঁধের আরেকটি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছিল। টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এ দুর্ভোগ কমানো সম্ভব নয়।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে জেলার ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বোর্ডের সাথে আলোচনা করে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এবার ফুলগাজীতে ৪টি ও পরশুরামে ২টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪টি স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছিল। নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানির ডুকছে। নদীর পানি কমলে ভাঙন এলাকা মেরামত করা হবে।

এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, সোমবার রাতে ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় শুকনো খাবারসহ অন্যান্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, বন্যাদুর্গতদের মাঝে ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের সাময়িক সহযোগিতা করা হয়েছে। আগামীতে তাদের বিষয়ে খোজখবর নিয়ে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

ফেনীর ফুলগাজীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতারা।

এসময় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে এই প্রকল্প একনেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করব। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই এখানে কাজ শুরু করতে পারব বলে আশাবাদী।

;