যশোরে ভাবীকে হত্যার দায়ে দেবরের ফাঁসি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
ছবি: যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত

ছবি: যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গৃহবধু জিনিয়া ইয়াসমিন তুলি হত্যা মামলায় তার দেবর বিমান বাহিনীর সাবেক কর্পোরাল প্রভোস্ট মোহাম্মদ শাহবুদ্দিনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিত মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বাঘারপাড়া উপজেলার পান্তাপাড়া গ্রামের মৃত মোশারফের ছেলে।

একইসাথে মামলার অপর দুই আসামি স্বামী জুলফিকার আলী ও শ্বাশুড়ি ফরিদা বেগমকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

রোববার (৩০ জুন) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক সুরাইয়া খাতুন এই রায় দেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল স্বামী জুলফিকার আলীর সাথে মোবাইলে কথা বলছিলেন তুলি। এসময় দেবর শাহাবুদ্দিন তার ঘরে প্রবেশ করলে শ্বাশুড়ি ফরিদা তার ঘরের দরজা আটকে দেয়। এরপর শাহবুদ্দিন ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে তুলিকে কুপিয়ে জখম করে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে শাহাবুদ্দিন ও তার মা পালিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা তুলিকে উদ্ধার করে প্রথমে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করে। পরে সিএমএইচ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরের দিন দুই সন্তানের জননী তুলি মারা যায়।

এ ঘটনায় নিহতের পিতা ঝিকরগাছা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের শহিদুল বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে তুলির দেবর, শ্বাশুড়ির সাথে তার স্বামীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তুলির স্বামী জুলফিকার আলীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়কে কেন্দ্র করে পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এ হত্যায় তার স্বামীর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তুলির দেবর মোঃ শাহাবুদ্দিনকে ফাঁসি ও ১ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একইসাথে মামলার অপর দুই আসামি স্বামী জুলফিকার আলী ও শ্বাশুড়ি ফরিদা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দণ্ডিত আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এদিকে এ রায়ে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট না মামলার বাদী পক্ষ। নিহত তুলির ভাই নূর আলম জানান, তার বোনকে হত্যার পেছনে জড়িত সকলের শাস্তি হওয়া উচিৎ । তারা অপর দুই আসামির শাস্তি নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলে বন্যা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতলি মূসার চরের চিত্র, ছবি: বার্তা২৪.কম

কুড়িগ্রামের উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতলি মূসার চরের চিত্র, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সদরের যাত্রাপুর ও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

পাশাপাশি বাড়ছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি। এ অবস্থায় এসব নদ-নদীর নিম্নাঞ্চলের স্বল্পমেয়াদী বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে পাউবো বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চল ও এর উজানে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী ধেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই সময়ে উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

পাউবো, কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৯ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার অববাহিকার পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৪১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৯ টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে।


ব্রহ্মপুত্রে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সাথে চলছে তীব্র ভাঙন। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা, বতুয়াতলি মূসার চর, ব্যাপারিপাড়া নতুন চর এবং পূর্ব ও পশ্চিম মশালের চরের অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বাধ্য হয়ে এসব পরিবারের অনেকে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন। ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মোল্লাহাট বাজার এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বাজার রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বতুয়াতলি মূসার চরের বাসিন্দা শরিফুল বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ৪০টিরও বেশি পরিবারের বসবাস। সবকটি পরিবারের ঘরের ভেতর পানি। বাইরে চারপাশে পানি।’

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়াও দুর্গত পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে যাত্রাপুরের রলাকাটা চরে একের পর এক বসতভিটা বিলীন হচ্ছে। চরের উত্তর দিকে অব্যাহত ভাঙনে গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বেলাল বলেন, ‘বন্যার পানি এখনও বাড়িঘরে প্রবেশ করে নাই। তবে ভাঙনে এলাকার মানুষ দিশেহারা। রলাকাটার পশ্চিমে মাঝের চর ও চিড়াখাওয়ার চরের আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে দুই একদিনের মধ্যে বাড়িঘরে ঢুকবে।’


যাত্রাপুরের কালির আলগা ও গোয়াইলপুরির চরে গত দুই দিনে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেখানকার বেশ কিছু পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ পরিবারের বসতবাড়ির চারপাশে পানি।

গোয়াইলপুরির চরের বাসিন্দা মাহবুব বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ। বন্যার কবলে পইড়া গেছি। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতাছে। আইজ কাইলের মধ্যে সব ঘরবাড়িতে পানি ঢুইকা পড়বো।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ত্রাণ সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। জেলা জুড়ে ৪ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবারও পানি বৃদ্ধির ফলে যেসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে আমরা সেদিকে বাড়তি নজর রাখছি।’

;

পর্যটন শিল্পে ১.৭৮ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পর্যটন শিল্পে ১.৭৮ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে

পর্যটন শিল্পে ১.৭৮ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশের এক দশমিক ৭৮ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে বলে সংসদে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্য আ,ফ,ম বাহাউদ্দিনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এই তথ্য জানান। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সংসদে ফারুক খান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে সরকারি আদেশে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। জানুয়ারি ১৯৭৩ থেকে এ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি রূপময় বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও পর্যটন আকর্ষণীয় স্থাপনাসমূহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পরিচিতি, প্রচার এবং পর্যটন সেবা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন শিল্পের অবদান প্রায় ৪ শতাংশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রায় ১.৭৮ শতাংশ। এ হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি জানান, বিশ্বময় করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশিক্ষতিগ্রস্ত হয় পর্যটন খাত। করোনা অতিমারী সময়কালীন সময়েও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ও আনুতোষিক পরিশোধ করেছে। করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বর্তমানেও তার লাভের ধারা অব্যাহত রেখেছে। সংস্থাটি নিজস্ব আয়ে পরিচালিত সরকারের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

মন্ত্রী জানান, দেশের মধ্যে নতুন নতুন পর্যটন আকর্ষণীয় স্পট চিহ্নিতকরণ ও এর উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, মেহেরপুরের মুজিবনগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, সিলেট, কক্সবাজার, পটুয়াখালির কুয়াকাটা, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবনসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে মোট ৫৩টি পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান (হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, এমিউজম্যান্ট পার্ক, বার, পিকনিক স্পট ও ডিউটি ফ্রিশপ) স্থাপন করেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছে যাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছে।

;

ভারী বর্ষণে সিন্দুকছড়ি সড়কে ফাটল, যান চলাচল বন্ধ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খাগড়াছড়ি
ভারী বর্ষণে সিন্দুকছড়ির কাটাপাহাড় এলাকায় সড়কে ফাটল

ভারী বর্ষণে সিন্দুকছড়ির কাটাপাহাড় এলাকায় সড়কে ফাটল

  • Font increase
  • Font Decrease

খাগড়াছড়িতে ভারী বর্ষণে সিন্দুকছড়ির ধুমনিঘাট কাটাপাহাড় এলাকায় সড়কে ফাটল ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার (০২ জুলাই) বিকেলে সড়কে ফাটল ধরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান।

তিনি জানান, গেল কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি সড়কটির একপাশের মাটি দেবে গিয়ে সড়কে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার বিষয়টি জানার পর বিকেলে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়।

সড়ক দেবে যাওয়ায় খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে গুইমারার জালিয়াপাড়ার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ করতে কতদিন সময় লাগবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেনি সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের জুন মাসে সিন্দুকছড়ি সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

;

নড়বড়ে বাঁশের খুঁটি, ওপরে পলিথিনের ছাউনিতে চলছে জীবন



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিনের ছাউনিতে তারা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিনের ছাউনিতে তারা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চার কোণায় বাঁশের নড়বড়ে খুঁটি, ওপরে পলিথিনের ছাউনি। এক খাটে শুয়ে আছেন ১০-১২ জন। সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে কাটালেও জুটেনি রাতের খাবার। সকালে একবেলা খিচুড়ি জুটলেও, আরেকবেলার খোঁজ নেই। কাটাতে হয়েছে পানি খেয়ে। এখানে পলিথিন টানিয়ে আছে ৭ পরিবার। সবার অবস্থা প্রায় একই। রাতদিন বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষায় আছে কখন কেউ খাবার নিয়ে আসবে; কিন্তু অপেক্ষা শুধু অপেক্ষায় থেকে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটা হারিয়ে এখন রাস্তার পাশে খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেক অসহায় পরিবার। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে সারারাত ছেলে মেয়েকে নিয়ে রাত জেগে চলছে তাদের জীবন। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবারের কষ্ট।

তেমনি একজন আফরোজা। মেয়ে মরিয়মকে কোলে নিয়ে বৃষ্টিভেজা দিনে বসে ছিলেন তিনি। চোখের দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে গত রাতে ঘুম হয়নি তার। বসতভিটার সঙ্গে হারিয়েছেন খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম সবই। এভাবে চলছে তাদের জীবনযাপন।

উচ্ছেদ অভিযানে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব তারা

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারারাত চোখ বোজা হয়নি। মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছি। মেয়ে একটু ঘুমালেও বৃষ্টির পানি পড়ে আবার জেগে গেছে সে। কী করবো, আমাদের যে আর যাওয়ার জায়গা নেই। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে, না খেয়ে থাকার চেয়ে আমাদের মরে যাওয়ায় ভালো।

শুধু আফরোজার মেয়ে মরিয়ম নয়, তার মতো জেসমিন, রাবেয়া, পারুল, খাদেজাও এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরনে ভেজা জামা-কাপড়। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এভাবে আছেন তারা।

সাতক্ষীরা সড়ক জনপথ বিভাগের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের একমাত্র বসবাসের ঘরটি। শেষ সম্বল হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির পাশে খোলা মাঠের এক কোণে। ঝড়, বৃষ্টি, প্রখর রোদে খেলার মাঠের এক কোণে পলিথিনের ছাউনিতে কাটছে অভাবি মানুষগুলোর জীবন।

তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাই আমাদের কষ্টের কথা বলে আর কি হবে? যা কেড়ে নেওয়ার তা কেড়ে নিয়েছে, এই কষ্ট কেউ দেখবে না। এই যে রাস্তার পাশে বৃষ্টিতে ভিজে এখানে আছি কাল থেকে। এখন পর্যন্ত কেউ খাবার দেওয়া তো দূরে থাক দেখতে পর্যন্ত আসেনি। আমাদের যে বসতভিটা কেড়ে নিল, ভালো কথা, কিন্তু কোনো উপায় তো দেখাবে যে, আমরা ওখানে গিয়ে থাকবো, ওখানে খাবো। এই ছোট-ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে আছি আমরা জানি। আমাদের কষ্ট কেউ দেখবে না। আমরা তো মানুষ না। এভাবে বলছিলেন তারা, আর চোখের পানি নীরবে পড়ছিল।

শিশু সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন

মাঠের এক কোণে মুড়ি খাচ্ছিলেন আজগর আলী। মুড়ি খেতে খেতে বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারারাত কিছু খাইনি। কেবল দোকান থেকে শুকনা খাবার নিয়ে আসলাম। সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে তো কি হয়েছে, সবাই মিলে একসাথে আছি, এটাই ভালো লাগছে।

তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। কিন্তু এবার সড়ক জনপথ বিভাগ আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। পরিবারের ১৩ জন সদস্য এখন কে যে কোথায় থাকবে, এটাও বলতে পাড়ছি না।

উল্লেখ্য, সোমবার (১ জুলাই) থেকে সাতক্ষীরা সরকারি খাস জমির ওপর গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে সাতক্ষীরা সড়ক জনপথ বিভাগ। অভিযানে গ্যারেজ, কলেজের গেট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙা পড়েছে। এই উচ্ছেদে ভেঙে ফেলা হয়েছে অনেকের একমাত্র বসবাসের ঘরটিও।

খুলনা সড়ক জনপদ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ানুর রহমানের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত অভিযান শুরু হয়, যা এখনও চলমান।

;