নড়বড়ে বাঁশের খুঁটি, ওপরে পলিথিনের ছাউনিতে চলছে জীবন
![বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিনের ছাউনিতে তারা/ ছবি: বার্তা২৪.কম](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Jul/02/1719923880482.jpg)
বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিনের ছাউনিতে তারা/ ছবি: বার্তা২৪.কম
চার কোণায় বাঁশের নড়বড়ে খুঁটি, ওপরে পলিথিনের ছাউনি। এক খাটে শুয়ে আছেন ১০-১২ জন। সারা রাত বৃষ্টিতে ভিজে কাটালেও জুটেনি রাতের খাবার। সকালে একবেলা খিচুড়ি জুটলেও, আরেকবেলার খোঁজ নেই। কাটাতে হয়েছে পানি খেয়ে। এখানে পলিথিন টানিয়ে আছে ৭ পরিবার। সবার অবস্থা প্রায় একই। রাতদিন বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষায় আছে কখন কেউ খাবার নিয়ে আসবে; কিন্তু অপেক্ষা শুধু অপেক্ষায় থেকে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসতভিটা হারিয়ে এখন রাস্তার পাশে খোলা মাঠে পলিথিন টানিয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেক অসহায় পরিবার। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে সারারাত ছেলে মেয়েকে নিয়ে রাত জেগে চলছে তাদের জীবন। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে খাবারের কষ্ট।
তেমনি একজন আফরোজা। মেয়ে মরিয়মকে কোলে নিয়ে বৃষ্টিভেজা দিনে বসে ছিলেন তিনি। চোখের দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে গত রাতে ঘুম হয়নি তার। বসতভিটার সঙ্গে হারিয়েছেন খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম সবই। এভাবে চলছে তাদের জীবনযাপন।
![](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&quality=100&path=uploads/news/2024/Jul/02/1719923711312.jpg)
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারারাত চোখ বোজা হয়নি। মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছি। মেয়ে একটু ঘুমালেও বৃষ্টির পানি পড়ে আবার জেগে গেছে সে। কী করবো, আমাদের যে আর যাওয়ার জায়গা নেই। যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে, না খেয়ে থাকার চেয়ে আমাদের মরে যাওয়ায় ভালো।
শুধু আফরোজার মেয়ে মরিয়ম নয়, তার মতো জেসমিন, রাবেয়া, পারুল, খাদেজাও এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরনে ভেজা জামা-কাপড়। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এভাবে আছেন তারা।
সাতক্ষীরা সড়ক জনপথ বিভাগের উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে ফেলা হয়েছে তাদের একমাত্র বসবাসের ঘরটি। শেষ সম্বল হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছে শহরের ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির পাশে খোলা মাঠের এক কোণে। ঝড়, বৃষ্টি, প্রখর রোদে খেলার মাঠের এক কোণে পলিথিনের ছাউনিতে কাটছে অভাবি মানুষগুলোর জীবন।
তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাই আমাদের কষ্টের কথা বলে আর কি হবে? যা কেড়ে নেওয়ার তা কেড়ে নিয়েছে, এই কষ্ট কেউ দেখবে না। এই যে রাস্তার পাশে বৃষ্টিতে ভিজে এখানে আছি কাল থেকে। এখন পর্যন্ত কেউ খাবার দেওয়া তো দূরে থাক দেখতে পর্যন্ত আসেনি। আমাদের যে বসতভিটা কেড়ে নিল, ভালো কথা, কিন্তু কোনো উপায় তো দেখাবে যে, আমরা ওখানে গিয়ে থাকবো, ওখানে খাবো। এই ছোট-ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে কীভাবে আছি আমরা জানি। আমাদের কষ্ট কেউ দেখবে না। আমরা তো মানুষ না। এভাবে বলছিলেন তারা, আর চোখের পানি নীরবে পড়ছিল।
মাঠের এক কোণে মুড়ি খাচ্ছিলেন আজগর আলী। মুড়ি খেতে খেতে বার্তা২৪.কমকে বলেন, সারারাত কিছু খাইনি। কেবল দোকান থেকে শুকনা খাবার নিয়ে আসলাম। সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে তো কি হয়েছে, সবাই মিলে একসাথে আছি, এটাই ভালো লাগছে।
তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। কিন্তু এবার সড়ক জনপথ বিভাগ আমাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। পরিবারের ১৩ জন সদস্য এখন কে যে কোথায় থাকবে, এটাও বলতে পাড়ছি না।
উল্লেখ্য, সোমবার (১ জুলাই) থেকে সাতক্ষীরা সরকারি খাস জমির ওপর গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে সাতক্ষীরা সড়ক জনপথ বিভাগ। অভিযানে গ্যারেজ, কলেজের গেট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙা পড়েছে। এই উচ্ছেদে ভেঙে ফেলা হয়েছে অনেকের একমাত্র বসবাসের ঘরটিও।
খুলনা সড়ক জনপদ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ানুর রহমানের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত অভিযান শুরু হয়, যা এখনও চলমান।