ত্রাণ নয়, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় তিস্তা পাড়ের মানুষ

  • লেলিন আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, নীলফামারী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় মানুষ

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় মানুষ

নীলফামারীর ডিমলায় প্রতিবছর ছয়টি ইউনিয়নের ১২টি চড় গ্রাম প্লাবিত হয়ে ভাঙন দেখা যায়। এতে তিস্তা নদী ভাঙনে সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ও নানা স্থাপনা তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এমন অবস্থায় তিস্তার স্থায়ী ভাঙন ঠেকাতে তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশার আলোর দেখলেও বাস্তবায়নের অপেক্ষায় তিস্তা পাড়ের মানুষ। তারা এখন ত্রাণে নয়, অপেক্ষায় থাকেন কবে বাস্তবায়ন হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে গড়া ঘরবাড়িসহ শেষ সম্বলটুকু কয়েকবার কেড়ে নিয়েছে তিস্তার ভয়াল ধাবা। নদী ভানের পরে নিজের সবটুকু হারিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে তিস্তায় জেগে উঠা কোন নতুন চড়ে এজন্যই বুঝি কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘এ কুল ভাঙ্গে এ কুল গড়ে এইতো নদীর খেলা।’ তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্যে যেন লেখাটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই,খগা খড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি এবং গয়াবাড়ি ইউনিয়নের একাংশের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি ও বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসময়ে আশপাশে থাকা বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো পানিবন্দি হয়ে যায়। এতে অনেক পরিবার নদী ভাঙনের কবলে নিঃস্ব আবার অনেকে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এ অবস্থায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া তিস্তার কোনো প্রকল্পেই ভরসা পাচ্ছেন না তিস্তা পাড়ের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ কিংবা বাধ নির্মাণ করলেও বন্যার ভাঙন রোধে সেটি সাময়িক রক্ষা দিলেও পরে ভানে ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় হাজার হাজার মানুষ। এতে রক্ষা পেতে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তিস্তা পাড়ের মানুষের।  

বিজ্ঞাপন

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তিস্তায় বারবার বন্যা হয় এতে আমাদের ঘর বাড়ি তলিয়ে যায়। ছেলে সন্তান নিয়ে আমাদের অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়। বন্যার ভাঙ্গনে আমাদের কত বাড়িভিটা চোখের সামনে ভেঙে গেছে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি।এখন চার্জার ভ্যান চালিয়ে চার সদস্যের পরিবার চালাতে হয়। তাই ত্রাণ আর চাই না এখন আমরা দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই।’

ডিমলা খলিসা চাপানি এলাকার আরেক বাসিন্দা আতোয়ারা বেগম বলেন, ‘বর্ষাকালে সবসময় ভয়ে থাকতে হয়। এখন যে বন্যা শুরু হয় আর বন্যা শুরু হলে আমাদের সবকিছু ভেঙে যায় এতে আমাদের ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়ে যায়। আমার বিয়ের পরে কয়েকবার এখানে পানিবন্দির ভয়াবহ দেখেছি। পানি উঠলে সন্তানের পড়ালেখা স্কুল যাওয়া অনিচ্ছিত হয়ে যায়। বারবার শুনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে এতে আর আমাদের এলাকা তিস্তা পাড় ভাঙবে কিন্তু শুধুই শুনি বাস্তবয়ন হচ্ছে না। আমরা এটি দ্রুত বাস্ববায়নের দাবি জানাই।’  

এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্ষা হলেই আমার উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করেন। ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসে যায়। একটা মানুষ একবার ঘর বাড়ি হারালে পথে বসে যায় আর তারা বারবার এর সম্মুখীন হচ্ছে। আমার সরকারের কাছে চাওয়া তিনি যেন দ্রুত আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।’

প্রসঙ্গত, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ভারত কিংবা চীনের আশায় না থেকে পদ্মা সেতুর মতো নিজের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাসহ ৬ দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনটি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন।