ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী লেনে ওয়েলকাম পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন এক যাত্রী৷ এছাড়া বাসে থাকা সকল যাত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতদল৷
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাভার থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ডেইরি গেট এর মাঝামাঝি রাস্তায় ওয়েলকাম পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হঈয়া যাত্রীর নাম মো. শামীম হোসাইন (৩৫)৷ তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরে৷ তিনি রাজধানীর একটি বায়িং হাউজে কর্মরত বলে জানা গেছে৷ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জাবি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়৷ পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত শামীমকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাবি মেডিকেল সেন্টারে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নিংতম ও ডা. মামুন জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা একজন রোগীকে আঘাত মারাত্মক হওয়ায় মেডিকেল সেন্টার নিয়ে আসে৷ বুকের ঠিক নিচে পেটে একটা ছুরির আঘাত গুরুতর ছিল। আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেই৷ আমাদের প্রোটোকলে অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার নিয়ম না থাকলেও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে এনাম মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হাসান মাহবুব বলেন, শামীম নামে ছুরিকাঘাতে আহত একজনকে আনা হয়েছে, তার শরীরের বুকসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ডাকাতি হওয়া এই বাসের পেছনের বাসে অবস্থানকারী যাত্রী জাবির ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী অনুপ সরকার দ্বীপ জানান, এই ঘটনা আমাদের জন্য খুবই অ্যালার্মিং। এই রোডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। এখানে পূর্বে শোনা যেত, কেউ হেঁটে বা রিকশায় গেলে তারা ছিনতাইয়ের শিকার হতো। এখন যদি একটা চলন্ত বাসে এই ঘটনা ঘটে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমি যদি ওই বাসে থাকতাম তাহলে আমার আজ কি অবস্থা হতো? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখন আতঙ্ক বেড়ে গেল।
ডাকাতির শিকার বাসে থাকা যাত্রী হারুন অর রশিদ বলেন, বাসটি ঢাকার দিক থেকে সাভারের নবীনগরের দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাসটি সাভারের রেডিও কলোনি এলাকা পার হওয়ার পর বাসটিতে থাকা যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে বাসের যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি শুরু করে। প্রথমেই ডাকাতরা বাসের সামনের দিকের একটি সিটে বসে থাকা একজন যাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে। পরে বাসে থাকা সকল যাত্রীর কাছ থেকে যাবতীয় টাকা পয়সা ও মালামাল লুট করে বাস থেকে নেমে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, তার কাছে নগদ ১০ হাজার টাকা, আইফোন নিয়ে গেছে। আহত শামীম তার সাথে থাকা ব্যাগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এসময় ডাকাতরা বাসে থাকা সকল যাত্রীর কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ও মূল্যবান স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়৷ এসময় যাত্রীদের আহাজারি করতে দেখা যায়৷
আহত শামীম ছাড়া আর কেউ গুরুতর আহত না হলেও ডাকাতদের মারধরে বাসে থাকা কয়েকজন যাত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে৷ তবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওয়েলকাম পরিবহনের একজন প্রতিনিধি গণমাধ্যমকে বলেন, মূলত মহাসড়কের বিপিএটিসি এলাকা থেকে ডাকাতরা বাসে উঠে ডাকাতি করেছে বলে জানতে পেরেছি। বাসটিসহ এর চালক ও হেলপার আশুলিয়া থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
আশুলিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) অলোক কুমার দে বলেন, ডাকাতি না, এটি একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা। মূলত সাভারের গেন্ডা এলাকা থেকে বাসে ছিনতাইকারীরা উঠেছিল এবং ছিনতাই শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএইচ হল সংলগ্ন গেটের আগেই নেমে যায়। ঘটনাটি সাভার থানা এলাকার হওয়ায় ভুক্তভোগীদের সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।